ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

প্রতিটি প্রকাশনী থেকে ব্রেইল বই চায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৮
প্রতিটি প্রকাশনী থেকে ব্রেইল বই চায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা ব্রেইল বই পড়ছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা-ছবি-সুমন শেখ

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: চোখে আলো নেই বলে দমে যাননি। অন্ধকারেই ‘আলোকিত’ তার জীবন। অজুহাতের সব বাধাকে উপেক্ষা করে জয় করেছেন জীবনের একের পর এক ধাপ। পড়ছেন দেশসেরা বিদ্যাপীঠেও। স্নাতক শেষ করে এখন পড়ছেন স্নাতকোত্তর পর্যায়ে। বলছিলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র শাহিনুল হক জয়ের কথা। জয় প্রমাণ করেছেন, ‘মানুষ দৃষ্টিহীন বলেই অন্ধ নয়, মানুষ মূলত প্রজ্ঞাহীন বলেই অন্ধ।’

শাহিনুল হক জয়ের মতো দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের এগিয়ে নিতে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্টল দিয়েছে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনী।

স্টল ঘুরে দেখা গেছে, শাহীনসহ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তিন শিক্ষার্থী ব্রেইল বই পড়ছেন।

দর্শকরা তাদের পড়া শুনছেন। অনেকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করছেন। তারা উত্তর দিচ্ছেন। এতদূর এগিয়ে আসার গল্প বলছেন। স্টলে বই পড়ার মাধ্যমে তারা ব্রেইল বই পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

এসময় সোনিয়া হকের ‘অনন্ত নিদ্রা’ বই পড়ছিলেন শাহিনুল হক জয়। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, গ্রন্থমেলা থেকে নতুন বই কিনে পড়ার ইচ্ছা আমাদের। কিন্তু সব বই ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখা হয়নি। বছরে যদি প্রতিটি প্রকাশনী একটি করেও ব্রেইল বই বের করে তাহলে আমরা অনেক বই পড়ার সুযোগ পাবো।

ব্রেইল বই পাওয়া যাচ্ছে স্পর্শ প্রকাশনীর স্টলে-ছবি-সুমন শেখএকই স্টলে রান্নার বই পাঠরত ইডেন মহিলা কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী জরিনা খাতুন বলেন, বই পড়লে জ্ঞানের পরিধি বাড়ে। আমরা ব্রেইল পদ্ধতির বই চাই। তাহলে আমরা মেধার বিকাশ করতে পারবো।

স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনী ২০০৯ সাল থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ শুরু করে। প্রথমে ছড়া, তারপর গল্পের বই ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশ করে তারা। এটিকে আরও ব্যাপক আকারে আনতে বইমেলায় স্টল নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এখন পর্যন্ত ৬১টি বই ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রকাশনীর প্রধান উদ্যোক্তা নাজিয়া জাবীন বাংলানিউজকে জানান, ব্রেইল পদ্ধতিতে বই বের করা অনেক ব্যয়বহুল। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে ব্রেইল বই নিয়ে যান দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা। পড়া শেষ হলে পুনরায় তা ফেরত দিয়ে যান।

তবে ব্রেইল পদ্ধতিতে বই প্রকাশ একার পক্ষে সম্ভব নয় উল্লেখ করে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি আমাদেরকে স্টল দিয়েছে। কিন্তু ব্রেইল বইয়ের আরও স্টল থাকা দরকার। পাশাপাশি বাংলা একাডেমিকেও ব্রেইল বই বের করতে হবে।

স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনী থেকে এবারের মেলায় ১৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে জনপ্রিয় লেথক অধ্যাপক জাফর ইকবাল ‘আমি তপু’ ও ‘আঁখি এবং আমরা ক’জনা’ বই দুটি নিজের খরচে ব্রেইল পদ্ধতিতে বের করেছেন।

অন্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে- আনিসুল হকের ‘মা’, মালেকা বেগমের ‘ছোটদের সুফিয়া কামাল’, লুৎফর রহমান রিটনের ‘স্যাং আর প্র্যাং’, ফেরদৌস খানের ‘আম পারার সহজ অনুবাদ’, মুহিত কামালের ‘স্বপ্ন ডানা’, সোনিয়া হকের ‘অনন্ত নিদ্রা’, আলপানা হাবীবের ‘আলপনার রান্না’, লবী রহমানের ‘লবীর রান্না’, শাহরিয়ার হোসেনের ‘কলঙ্ক ভাগী’, আনিসা হকের ‘সুন্দর বনের সাদা পাহাড়’, স্পর্শ ব্রেইলের প্রধান উদ্যোক্তা নাজিয়া জাবীনের ‘হাঁসের পায়ে ঘুড়ি’ ও ‘স্বাস্থ্য তথ্য’।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৮
এসকেবি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।