ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

জৌলুস হারাচ্ছে পুরনো প্রকাশনী

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮
জৌলুস হারাচ্ছে পুরনো প্রকাশনী অমর একুশে গ্রন্থমেলা। ছবি: সুমন শেখ

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: মেলায় প্রায় প্রতিদিনই আসছে নতুন লেখকদের বই। তারা জয় করে নিচ্ছেন পাঠকের মন। বিপরীতে, পাঠকের অনেক প্রত্যাশা থাকার পরও জৌলুস হারাচ্ছে পুরনো প্রকাশনীগুলো।

প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক মোহাম্মদ নাসির আলী ও তার বন্ধু আইনুল হক খান মিলে ১৯৪৮-৪৯ সালে গড়ে তোলেন প্রকাশনা সংস্থা নওরোজ কিতাবিস্তান। সাহিত্য, বিজ্ঞান, রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধসহ নানা বিষয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বই এখান থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র উপন্যাস ‘লালসালু’ এখান থেকে প্রকাশ পায় ১৯৪৯ সালে।

১৯৫৪ সালে যাত্রা শুরু করে আহমদ পাবলিশিং হাউস। প্রায় সাড়ে ছয় দশকের এ প্রকাশনা সংস্থা এখনও প্রকাশ করছে নতুন বই। তবে পুরনো বইগুলোই বেশি দেখা যায় এখানে। এখান থেকে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ বইগুলোর মধ্যে মুনীর চৌধুরীর নাটক 'কবর', আবুল মনসুর আহমদের 'আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর', রম্যরচনা 'ফুড কনফারেন্স', গোলাম মোস্তফার লেখা 'বিশ্বনবী' উল্লেখযোগ্য।

পুরনো প্রকাশনীগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে- মাওলা ব্রাদার্স, খান ব্রাদার্স অ্যান্ড কোম্পানি, স্টুডেন্ট ওয়েজ প্রভৃতি।

দীর্ঘ পথ পেরিয়ে পথিক যেমন ক্লান্ত, তেমনি পুরনো ও স্বনামধন্য এ প্রকাশনা সংস্থাগুলোতেও পড়ছে ক্লান্তির ছাপ। বেশিরভাগ পুরনো প্রকাশনা সংস্থাই হারাতে বসেছে তাদের জৌলুস। মালিকানা বদল আর নতুনের উত্থানে তাদের কর্মে ধরছে মরিচা।  

তবে এখনও নিজেদের স্বর্ণযুগে প্রকাশিত ধ্রুপদী সাহিত্য সম্ভার নিয়ে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলাতে রয়েছে চল্লিশ, পঞ্চাশ, ষাটের দশকের এসব প্রকাশনা সংস্থা।

আহমদ পাবলিশিং হাউসের ব্যবস্থাপক রবিউল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পুরনো বইগুলোর প্রতি এখনও পাঠকের আগ্রহ আগের মতোই রয়েছে। ফলে ওই বইগুলো বারবার পুনর্মুদ্রণ হচ্ছে।

মাওলা ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আহমেদ মাহমুদুল হক বলেন, পুরনো অনেক প্রকাশনা সংস্থা বর্তমানে জৌলুস হারাচ্ছে। কারণ, বংশানুক্রমিকভাবে চলে আসা এ ব্যবসায় অনেকেই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না।  

এদিকে পাঠকের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছেন নতুন লেখকরা। মেলায় তরুণ লেখকদের বইয়ের প্রতি পাঠকের আগ্রহ বেশ ভালো। প্রকাশকদের কাছেও তৈরি হচ্ছে তরুণদের লেখার চাহিদা।

তরুণ লেখক লেখক পিয়াস মজিদ বলেন, লেখার মধ্যে নতুনত্বটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেটা যেকোনো বয়সের লেখকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বুদ্ধদেব বসু বা সৈয়দ শামসুল হক এটাই করেছেন। বর্তমানের তরুণ লেখকরা বিচিত্র ধরনের বই লিখছেন। কবিতা, উপন্যাসের পাশাপাশি থ্রিলার, ক্যারিয়ার, ভ্রমণ এমনকি আত্মকথাও লিখছেন। যা অনেকটা প্রথা ভাঙার মতো ব্যাপার।

আরেক তরুণ লেখক ইমরান মাহফুজ বলেন, তরুণ লেখকরাই আগামীতে শিল্প-সাহিত্যের নেতৃত্ব দেবে। কারণ, বড় লেখকদের অনেকেই মারা গেছেন, অনেকে আবার নিষ্ক্রিয়। এ জায়গাটি পূরণ করছে এ সময়ের তরুণ লেখকরা।

তরুণ লেখকদের লেখা এবং তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গনি বলেন, তরুণ লেখকদের মধ্যে সবাই যে ভালো করছেন, তা বলা যাবে না। তবে যারা লেখালেখিকে ব্রত হিসেবে নিয়েছেন এবং পরিশ্রম করছেন তারা নিঃসন্দেহে জায়গা করে নিতে পারবেন।

এবারের মেলায় তরুণ লেখকদের অংশগ্রহণে ভাষাচিত্র প্রকাশনী থেকে সাদাত হোসেনের উপন্যাস ‘নিঃসঙ্গ নক্ষত্র’ এবং ঐতিহ্য থেকে পিয়াস মজিদের ‘ছোট কবিতা’ অন্যতম।

তাছাড়া, তাম্রলিপি থেকে প্রকাশিত আয়মান সাদিকের ‘নেভার স্টপ লার্নিং’, আগামী থেকে মোশাহিদা সুলতানা ঋতুর গল্পগ্রন্থ ‘বড়ো শহরে ছোট গল্প’, হাবিবুল্লাহ ফাহাদের ‘দরজার ওপাশে ভোর’, দ্যু প্রকাশন থেকে প্রমা ইসরাতের ‘লাভ লোকসান’, কথাপ্রকাশ থেকে আসা ইকবাল খন্দকারের ‘ভূতুড়ে ডাকঘর’, প্রিয়মুখ থেকে ইমাম মেহেদীর কাব্যগ্রন্থ 'কাদামাটি', ঐতিহ্য থেকে ইমরান মাহফুজের কাব্যগ্রন্থ 'দীর্ঘস্থায়ী শোকসভা' পাঠকের নজর কেড়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮
এইচএমএস/এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।