ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

শহীদ মিনার থেকে বইমেলায় লাখো প্রাণের ঢল

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৮
শহীদ মিনার থেকে বইমেলায় লাখো প্রাণের ঢল একুশের বইমেলায় লাখো প্রাণের ঢল নেমেছে/ছবি: জি এম মুজিবুর

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: একুশে স্মরণে বাংলা একাডেমির বইমেলা বাঙালির কাছে যেন একুশের সমার্থক। শহীদ বেদীতে ফুল অর্পণ আর বইমেলায় এসে বই কেনা এখন ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই শহীদদের আত্মদানকে সমৃদ্ধ ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন একুশের প্রহরে বইমেলায় আসা লাখো মানুষ।

বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) প্রভাত ফেরির পর থেকেই ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে মা-বাবা, ছোট ভাই-বোনকে নিয়ে বড় ভাই-বোন বইমেলা প্রাঙ্গণকে ভরিয়ে তুলেছিলেন। মেলায় তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতিও ছিলো চোখে পড়ার মতো।

নারী-পুরুষের সাদা-কালো পোশাকে ছিল শোকের আবহ। মাথায় ফুলের টায়রা পরা নারী-শিশুরা ঘুরে বেড়িয়েছেন মেলায়। অনেকে এসেছেন সপরিবারে।

সন্ধ্যা পর্যন্ত মেলায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আর সন্ধ্যার পর মানুষের সারি এতই দীর্ঘ হয়েছিল যে অনেকেই মেলায় ঢুকতে সাহসই পাননি। ঘুরে গিয়ে আড্ডা দিয়েছেন কার্জন হল অথবা টিএসসিতে।

বইমেলার দরেজা খুলে গিয়েছিল সকাল সাড়ে সাতটাতেই। মেলার মূলমঞ্চে শুরু হয়েছিল একুশের প্রভাতের স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। প্রভাত ফেরি শেষে অগণিত দর্শক ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে উপভোগ করেছেন কবিদের কবিতা পাঠ। এই আসরে দেড় শতাধিক কবি কবিতা পাঠ করেন। সাদাকালো শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরে আসা ছেলে-মেয়েরা সেসব কবিতা শুনেছেন আগ্রহভরে। এরপর বেলা যত গড়িয়েছে মানুষের স্রোত তত বেড়েছে।

মেলায় এসেছেন ধানমন্ডির বাসিন্দা জাহানারা লুবনা। তিনি বলেন, বইমেলা পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে চললেও, বিভান্ন কর্মব্যস্ততায় আসার সুযোগ হয়নি। তাই আজ একুশে ফেব্রুয়ারির দিন পরিবার পরিজন নিয়ে শহীদ মিনার হয়ে বই মেলায় এলাম। সারাদিন এখানেই সময় কাটাবো।

যুগলবন্দি ইফতেখার হোসাইন বলেন, অফিসের পর সময় থাকে না। আজ সময় হয়েছে। তাই দু’জনে চলে এলাম। খুব ভালো লাগছে। সকালে বেরিয়েছিলাম। শহীদ মিনার থেকে পরে বইমেলায় এসেছি।

এদিন শহীদ মিনার থেকে বইমেলায় আসেন বিভিন্ন দেশের নাগরিকও। শহীদ দিবসে মানুষের ঢল দেখে অভিভূত হয়েছেন তারা। বাঙালির ভাষাপ্রেম দেখে হয়েছেন উদ্দীপিত। তেমনি একজন স্পেনের মিয়ো। স্পেনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন অধ্যয়ন নিয়ে পড়ছে এ তরুণী। দক্ষিণ এশীয় ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে জানলেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে। সেই থেকে বাংলাদেশে আসবেন বলে মনস্থির করলেন। পরে লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে কাজ করা একটি বহুজাতিক সংস্থার হয়ে বাংলাদেশে আসেন প্রথমবারের মতো।

বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বাঙালির ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগের বীরত্বপূর্ণ গল্পে চোখ ভিজে উঠে স্প্যানিশ নাগরিক মিয়োর। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রেক্ষাপট নিয়ে পড়তে গিয়ে আমার চোখ ভিজে উঠেছে। মাতৃভাষার জন্য যে জাতি রক্ত ঝরিয়েছে, সেজাতিকে খুব কাছ থেকে দেখছি। ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে ইংরেজি ভাষায় রচিত কোনো বই পেলে আমি কিনব। এত বড় বই মেলা, সত্যি কোথাও দেখিনি আমি। লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে ফুল দেয়া আর বাংলাদেশের বইমেলা দেখে আমি অভিভূত।

বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৮
এইচএমএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।