ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

অমর একুশে গ্রন্থমেলা: বেড়েছে পরিসর, প্রকাশনা সংস্থা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৯
অমর একুশে গ্রন্থমেলা: বেড়েছে পরিসর, প্রকাশনা সংস্থা

ঢাকা: অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৯ এ বেড়েছে পরিসর, একইসঙ্গে বেড়েছে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতবার ২ লাখ ৭৫ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে গ্রন্থমেলা আয়োজন হলেও এবার তা বিস্তৃত হয়েছে ৩ লাখ বর্গফুটে।

গ্রন্থমেলার মূল থিম ‘বিজয়: ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ নবপর্যায়’-কে সামনে রেখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভকে এবার নিয়ে আসা হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণের ভেতরে, যা গতবার পর্যন্তও ছিল মেলাপ্রাঙ্গণের বাইরে।

তবে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এবার ৪৯৯টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে; গতবার যার সংখ্যা ছিল ৪৬৫টি।

ছুটির দিন ছাড়া গ্রন্থমেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।

শুক্র ও শনিবার সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং একুশে ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।

বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে অমর একুশে গ্রন্থমেলা- আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরে বাংলা একাডেমি।

উদ্বোধন অনুষ্ঠান:
শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৯ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাবু, ভারতীয় কবি শঙ্খ ঘোষ, মিশরীয় লেখক-গবেষক মোহসেন আল আরিশি। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী।

বেড়েছে মেলার পরিসর:
সংবাদ সম্মেলনে আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরেন গ্রন্থমেলা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক (বিপণন) জালাল আহমেদ।

তিনি জানান, বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলিয়ে এবার গ্রন্থমেলার ২৫ হাজার বর্গফুট বিস্তৃতি বেড়েছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতবার ২ লাখ ৭৫ হাজার বর্গফুট জায়গা জুড়ে গ্রন্থমেলা আয়োজন হলেও এবার তা বিস্তৃত হয়েছে ৩ লাখ বর্গফুটে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ৪টি চত্বরে ভাগ করা হয়েছে।

একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৪ প্রতিষ্ঠানকে ১৫০টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৯৫ প্রতিষ্ঠানকে ৬২০টি ইউনিট; সব মিলিয়ে ৪৯৯ প্রতিষ্ঠানকে ৭৭০টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে ১৮০টি লিটলম্যাগকে ১৫৫টি স্টল দেওয়া হয়েছে। ২৫টি স্টলে ২টি করে লিটল ম্যাগাজিনকে স্থান দেওয়া হয়েছে। অন্য ১৩০টি প্রতিষ্ঠান একক স্টল বরাদ্দ পেয়েছে।

একক ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করছেন, তাদের বই বিক্রি বা প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিন ইউনিট বরাদ্দ পেয়েছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র।

একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলা একাডেমির ১টি প্যাভিলিয়ন, ৪ ইউনিটের ২টি, একাডেমির শিশুকিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য ১টি, একাডেমির সাহিত্য উত্তরাধিকারে ১টি স্টল থাকবে।

এবারও শিশু চত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। এ কর্নারকে শিশুকিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও প্রতি শুক্র ও শনিবার ‘শিশু প্রহর’ ঘোষণা করা হয়েছে।

মেলার খুদে লেখকদের জন্য শিশু চত্বরে ‘তারুণ্যের বই’ নামে এক নতুন আয়োজন করা হয়েছে, যাতে খুদে লেখকরা তাদের বইয়ের প্রচারণাও করতে পারবেন।

বই কিনলে ছাড়:
গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি ও মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিকাশের চিফ মার্কেটিং অফিসার মীর নওবাত আলী জানান, এ ২৫ শতাংশ ছাড়ের পরেও বিকাশে বইয়ের মূল্য পরিশোধ করলে আরো ১০ শতাংশ মূল্যছাড় পাবেন ক্রেতারা।

প্রবেশ ও নিরাপত্তা ইস্যু:
গ্রন্থমেলায় টিএসসি ও দোয়েল চত্বর উভয় দিক দিয়ে দু’টো মূল প্রবেশপথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাহিরের মোট ৬টি পথ থাকবে।

বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমি ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।

গ্রন্থমেলায় প্রবেশ ও বাহির পথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে ৩ শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সমগ্র মেলা প্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত, দোয়েল চত্বর থেকে শহীদ মিনার হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চানখারপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত স্বাধীনতাস্তম্ভ ও এর পার্শ্ববর্তী স্থানকে নান্দনিকভাবে গ্রন্থমেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে স্বাধীনতা স্তম্ভের আলোক বিচ্ছুরণে মেলা প্রাঙ্গণ আলোকিত হয়ে উঠবে।

এ বিষয়টি নিয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, এবার বইমেলা আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর পূর্তি ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের আয়োজন। মহান দুই আয়োজন নিয়ে এ বইমেলা থেকেই জাতিকে বার্তা দিতে চাই আমরা। তাই মেলার নান্দনিক ব্যবস্থায় এসেছে পরিবর্তন।

মেলার নান্দনিক দিক দেখভাল করছে নিরাপদ মিডিয়া।
ইলিয়াস কাঞ্চনের এ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিবারই অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠলেও বাংলা একাডেমি টানা তৃতীয়বারের মতো তার উপরই ভরসা রাখছে।

গ্রন্থমেলার নানা পুরস্কার:
২০১৮ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে ‘গুণগতমান বিচারে’ সেরা গ্রন্থের জন্য প্রকাশককে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার' এবং ২০১৮ সালে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেবে বাংলা একাডেমি।

এছাড়াও ২০১৮ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক শৈলী অনুযায়ী শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।

মেলা মঞ্চের নানা আয়োজন:
এ বছর থেকেই গ্রন্থমেলায় শুরু হচ্ছে নতুন মঞ্চ 'লেখক বলছি'।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জলাধারের পাশে স্থাপিত এ মঞ্চে প্রতিদিন ৫ জন লেখক যোগ দেবেন। কথা বলবেন, তাদের প্রকাশিত বই নিয়ে। পাঠকের নানা প্রশ্নের জবাবও দেবেন তারা।

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একজন ভাষা শহীদের নামে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চার জন ভাষা শহীদের নামে চত্বর করা হয়েছে।

এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ এবং স্বাধীনতা স্তম্ভ নিয়ে নানা তথ্য সম্বলিত প্ল্যাকার্ড স্থাপিত হয়েছে গ্রন্থমেলায়।  

জালাল আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এতে গ্রন্থমেলার মূল থিম যেমন প্রতিফলিত হবে তেমনি নব প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা মেলায় আরো বেশি করে নিজেদের যুক্ত হতে এবং বায়ান্ন ও একাত্তরের চেতনায় ঋদ্ধ হওয়ার সুযোগ পাবেন।

২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমকালীন প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হবে এসব সেমিনারে।

এছাড়াও বাঙালি মনীষার জন্মশতবার্ষিকী শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং তাদের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবি কণ্ঠে কবিতা পাঠ। অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা এবং সঙ্গীত প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৯  
এইচএমএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।