ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে শামসুল আরেফীনের গ্রন্থ

শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৯
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে শামসুল আরেফীনের গ্রন্থ গ্রন্থ ‘কালুরঘাট প্রতিরোধ যুদ্ধ ও অন্যান্য’

চট্টগ্রাম: বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলায় চট্টগ্রামের বলাকা থেকে প্রকাশিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও কবি শামসুল আরেফীনের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গ্রন্থ ‘কালুরঘাট প্রতিরোধ যুদ্ধ ও অন্যান্য’।

গ্রন্থটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত ৮.৪৫-৯টার মধ্যে হালিশহর ইপিআর সদর দপ্তরের অ্যাডজুটেন্ট ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম ইপিআর সৈনিকদের নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি।

এই রেজিমেন্টের বিদ্রোহ করতে অনেক দেরী হয়। রাত ৩টার প্রাক্কালে মেজর জিয়া এই রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসারের দায়িত্ব নিয়ে একটি ৪৫ গ্যালনের ড্রামের উপর দাঁড়িয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা দিয়ে সৈনিকদের কালুরঘাটের দিকে রওয়ানা হওয়ার নির্দেশ দেন।

‘রাত ৩টায় রওয়ানা হওয়ার সময় ইবিআরসি থেকে পালাতে সক্ষম হওয়া সৈনিকদের অনেকে তাদের সাথে যুক্ত হয়। তারা রওয়ানা হওয়ার সময় রাস্তায় ব্যারিকেড সরানো ও সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করার কাজে নিযুক্ত সৈনিকরা তখনও ফিরে না আসায় ষোলশহর হেড কোয়ার্টারে নায়েব সুবেদার আবদুল মালিকের নেতৃত্বে একটি ছোট সেনাদল তাদের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য রাখা হয়। সৈনিকরা ফিরে এলে কি করবে, সেই নির্দেশনাও নায়েব সুবেদার আবদুল মালিককে দেয়া হয়। ’

‘অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট পথিমধ্যে কালুরঘাটে ইপিআর এর ক্যাপ্টেন হারুন আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন কোম্পানির সাক্ষাৎ পায়। তারা চট্টগ্রাম শহরে ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলামের সাথে যোগ দিতে যাচ্ছিল। কিন্তু মেজর জিয়ার নির্দেশে ক্যাপ্টেন হারুন আহমেদ চৌধুরী তার কোম্পানি নিয়ে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে থাকতে বাধ্য হন। এরপর, এই রেজিমেন্ট ও কোম্পানি বোয়ালখালির করলডেঙ্গা পাহাড়ে পৌঁছে। এভাবে শুরু হয় কালুরঘাট প্রতিরোধ যুদ্ধ। ’

বইটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ সন্ধ্যা ৭.৩০টায় ২০ জন সৈনিক নিয়ে মেজর জিয়া কালুরঘাট যুদ্ধক্ষেত্র থেকে রামগড়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার পরবর্তীতে অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এই প্রতিরোধ যুদ্ধ চলে। সেদিন পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে কালুরঘাটের পতন ঘটে।

১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল কালুরঘাটের পতনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হওয়া কালুরঘাট প্রতিরোধ যুদ্ধ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।

গ্রন্থটিতে লেখক শামসুল আরেফীন এই প্রতিরোধ যুদ্ধের বিস্তারিত ইতিহাস সংগ্রহ করে কালুরঘাট প্রতিরোধ যুদ্ধ শিরোনামের প্রবন্ধের মাধ্যমে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। এছাড়াও বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসভিত্তিক অনেকগুলো প্রবন্ধ এই গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

কালুরঘাট প্রতিরোধ যুদ্ধ প্রবন্ধটির সংক্ষিপ্ত রূপ এবং অন্যান্য প্রবন্ধের মধ্য থেকে সুবেদার মেজর টি এম আলী বাহিনী, কেংড়াছড়ি অপারেশন, ১৫৫ নম্বর মাহবুবুর রহমান গ্রুপ, চিরিঙ্গা গণহত্যা, রানীরহাট যুদ্ধ, রাঙ্গুনিয়া তহশিল অফিস অপারেশন, রাঙ্গুনিয়া ফরেস্ট অফিস রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন প্রভৃতি প্রবন্ধ ‘এনসাইক্লোপিডিয়া অব বাংলাদেশ ওয়ার অব লিবারেশন প্রজেক্ট, এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ’-এ প্রেরণ করা হয়েছে বলে গ্রন্থটির ভূমিকায় উল্লেখ করেছেন লেখক।

উল্লেখ্য, শামসুল আরেফীন লোকগবেষক হিসেবে এপার-ওপার বাংলার সাহিত্যাঙ্গনে বেশ পরিচিত। তিনি লোকসাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য বিষয়ে চট্টগ্রামের বলাকা প্রকাশন থেকে অনেকগুলো গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন।

‘কালুরঘাট প্রতিরোধ যুদ্ধ ও অন্যান্য’ ছাড়া তার  উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে আছে-আস্কর আলী পণ্ডিত: একটি বিলুপ্ত অধ্যায়, বাঙলাদেশের লোককবি ও লোকসাহিত্য ১ম-৪র্থ খণ্ড, আস্কর আলী পণ্ডিতের দুর্লভ পুথি জ্ঞানচৌতিসা ও পঞ্চসতী প্যারজান, বাংলাদেশের বিস্মৃতপ্রায় লোকসঙ্গীত ১ম খণ্ড, বাঁশরিয়া বাজাও বাঁশি, আস্কর আলী পণ্ডিত: ৮৬ বছর পর, গাঙ্গেয় বদ্বীপের অনন্য সঙ্গীতজ্ঞ: স্বপন কুমার দাশ, আঠারো শতকের কবি আলী রজা ওরফে কানুফকির, আহমদ ছফার অন্দরমহল, রুবাইয়াত-ই-আরেফীন, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার দুর্লভ দলিল, সূর্য-পুত্র (কাব্যগ্রন্থ),  কবিয়াল মনিন্দ্র দাস ও তাঁর দুষ্প্রাপ্য রচনা প্রভৃতি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৯
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।