ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

বইয়ের দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতা অসন্তোষ, প্রত্যাশা সমন্বয়ের

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯
বইয়ের দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতা অসন্তোষ, প্রত্যাশা সমন্বয়ের শিশু-সন্তান নিয়ে মেলায় বাবা-মা/ছবি: বাদল

গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: মলাটটা সুন্দর, বইটাও ভালো মানের। তবে হাতে নিয়ে খুলে দাম দেখেই রেখে দিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান। বইয়ের পৃষ্ঠা অনুযায়ী এতো দাম হবে ভাবতে পারেননি তিনি। আরো অনেককেই দেখা গেছে একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে। 

সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) গ্রন্থমেলায় বেশকিছু বই ক্রেতার সঙ্গে কথা হলে তারা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, প্রতি মেলায় একাধিকবার এসে বাজেট অনুযায়ী বই কেনেন তারা। তবে এবার পছন্দের বইগুলোর দাম অনেক চড়া।

বইমেলায় ধীরে ধীরে বাড়ছে ক্রেতা। তবে তাদের অভিযোগ, এ বছর বইয়ের দাম অন্য বছরের তুলনায় বেশি। মেলায় নতুন বইয়ের পাশাপাশি পুরনো বইয়ের দামও বেশি বলে মনে করছেন তারা।

মেলা ঘুরে দেখা যায়, এবার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে শিশুদের বইয়ের দাম। চার রঙে ছাপা ৮ পৃষ্ঠার একটি বইয়ের দাম এক থেকে দেড়শ টাকা। শিশুরা মেলায় এলে একটি বা দু’টি বই পেয়ে তৃপ্ত হয় না। চার-পাঁচটি বই কিনে দিলে তবেই তারা খুশি! আর সেই খুশি ধরে রাখতে যেন মিলিয়ে যাচ্ছে অভিভাবকদের হাসি।

তাদের মতে, মেলায় নতুন বইয়ের দাম তো বেড়েছেই, সেই সঙ্গে পুরনো বইয়ের যে দাম চাওয়া হচ্ছে, একই বই নীলক্ষেত বা মেলার পর কিনলে তাতে ছাড় দিয়ে যে দাম আসে তা মেলার বর্তমান দামের চেয়ে কম।

এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্য সোজাসাপটা জবাব প্রকাশকদের। তারা বলছেন, কাগজ, কালি, প্লেট, কাভার পেপার, পজেটিভ, লেমিনেটিং ফয়েল পেপার, আঠাসহ বই ছাপানোর প্রায় সব দ্রব্য বা কাঁচামালই আমদানি-নির্ভর। ফলে ডলারের কারণেও তাদের বইয়ের উৎপাদন খরচ বেড়েছে।

আবার দাম নিয়ে ক্রেতারা অসন্তুষ্ট থাকলেও প্রকাশকরা বলছেন ‘কিছু করার নেই’। এ প্রসঙ্গে ‘অনন্যা’ প্রকাশনীর মিজানুর রহমান জানান, আগে যে বইয়ের দাম ছিল ১২০ টাকা এখন তার দাম ১৫০ টাকা। প্রতি বছরই কাগজের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে শ্রমিক মজুরি, ছাপা ও বাইন্ডিং খরচ। সব মিলিয়ে বই তৈরি পর্যন্ত যে খরচ আসে তাতে সামান্য হলেও দাম বাড়াতে হয়। তাতে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দাম কমানোর কোনো সুযোগ থাকে না।

সময় প্রকাশনের আনিছুর রহমান জানান, গ্রাম হিসেবে কোনো কোনো কাগজ প্রতি রিমে বেড়েছে ৭শ থেকে ৮শ টাকা। সুতরাং, শুধু কাগজের দাম হিসাব করলেও দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই।

বিদ্যা প্রকাশ থেকে জানানো হয়, বইয়ের দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ কাগজের দাম। এর বাইরে লেখক সম্মানী বা প্রস্তুতি ব্যয় বেড়ে গেছে বলেইও দাম বাড়াতে হয়েছে।

শুধু শিশুসাহিত্য নয়, পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, কবিতা ও প্রবন্ধের বইয়ের দামও এবার বেশ চড়া। জনপ্রিয় একজন লেখকের ২৫০ পৃষ্ঠার একটি বইয়ের দাম ৪০০ টাকা। ২৫ শতাংশ কমিশন বাদে বিক্রি হচ্ছে তিনশো টাকায়। গতবার এই পৃষ্ঠা সংখ্যার বইয়ের দাম ছিল ২০০ টাকা।

জনপ্রিয় লেখকের ৬৮ পৃষ্ঠার একটি বইয়ের মূল্য ১৭০ টাকা। ২৫ শতাংশ কমিশন বাদে সেই বই ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতবার এই পৃষ্ঠা সংখ্যার বইয়ের দাম ছিল ১২০ টাকা। ভিন্ন চিত্রও রয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ১০০ পৃষ্ঠার বইয়ের দাম রেখেছে ১২৫ টাকা। ২৫ শতাংশ কমিশন বাদে সেই বই বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়।  

জনপ্রিয় কবি লেখকদের পাশাপাশি নবীন লেখকের গল্প, উপন্যাস, ছড়া, কবিতা, ভ্রমণ ও শিশুসাহিত্য সব ধরনের বইয়ের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা। তবে অস্বাভাবিকভাবে বইয়ের দাম বাড়ানো হয়নি বলে দাবি প্রকাশকদের।

আর পাঠকদের প্রত্যাশা, বাজারদর অনুযায়ী বইয়ের মূল্য মধ্যবিত্ত পাঠকের ক্রয় ক্ষমতার ভেতরে থাকা উচিত। কারণ বইয়ের দামের ওপর বিক্রিও নির্ভর করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।