ঢাকা: মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলার ৩৮তম আসর। মেলা চলার কথা রয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলা একাডেমিতে বইমেলা নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সচিব মো. আবুল মনসুর, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, বাংলা একাডেমির সচিব এ এইচ এম লোকমান, বইমেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ প্রমুখ।
এ সময় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে সময় বাড়তেও পারে। তবে কঠোরভাবে মানা হবে স্বাস্থ্যবিধি। আর মাস্ক ব্যতীত প্রবেশ করা যাবে না বইমেলায়। লাগতে পারে টিকা সনদও।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট জায়গায়। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিট দেওয়া হয়েছে। মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর মেলায় ৩৫টি প্যাভিলিয়ন থাকবে।
এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এম্ফি থিয়েটারের পূর্বদিকে মেলার মূল প্রাঙ্গণে। সেখানে ১২৭টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি ও মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। এবারও শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। তবে কোভিড পরিস্থিতির কারণে প্রথমদিকে ‘শিশুপ্রহর' থাকবে না।
বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪টি প্রবেশ ও ৩টি বের হওয়ার পথ থাকবে। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো ও রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।
বইমেলার প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। মেলা এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী নিয়ে প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২২ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ ও ২০২২ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হবে।
এছাড়া ২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।
এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১০৭টি বই।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য- ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্বাধীনতার মর্মবাণী সবার মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু-গ্রন্থভুক্ত হস্তলিপি বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যবহার করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ বাস্তবায়ন কমিটি একটি প্যাভিলিয়ন নিয়েছে।
এছাড়া কোভিড মহামারি পরিস্থিতিতে যখন বইমেলা হচ্ছে তখন মেলায় যাতে স্বাস্থ্যবিধি সম্পূর্ণভাবে মান্য করা হয় সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মেলার বিন্যাসেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্যাভিলিয়নগুলো উদ্যানের সব প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এবার বইমেলা ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত ৮টা ৩০ মিনিটের পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় ও চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২
এইচএমএস/আরবি