বইমেলা প্রাঙ্গন থেকে: আদিকালে মুনি-কন্যারা গাছের বাকল পরতেন। তাও আবার সবসময় লম্বা-চওড়ায় যথেষ্ট হতো না বলে টেনে টুনে পরতে হতো।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বইমেলা শুরু হলেও বুধবারও স্টল গোছানোসহ পুরো মেলা প্রাঙ্গনের অর্ধেকেরও বেশি কাজ বাকি। অর্ধেকের বেশি স্টলে যেমন এখন পর্যন্ত বই ওঠেনি, হাতে গোনা কয়েকটি স্টল বাদে তেমনি সব স্টলেই চলছে পেরেক ঠোকা আর রঙ তুলির কাজ। প্যাভেলিয়নগুলোও এখনো তৈরি নয় পাঠকদের বই উপহার দিতে। তবে তাতে কি, বইপ্রেমী পাঠকদের পদচারণায় ঠিকই জমে উঠেছে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশ।
প্রতিবছর ১লা ফেব্রুয়ারি বাঙালির প্রাণের প্রিয় মেলা অমর একুশে বইমেলা শুরু হলেও করোনার কারণে এবার তা পিছিয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় অনেকটা দ্বিধাও ছিল যে বইমেলা আদৌ হবে কি না। তবে সব জল্পনা-কল্পনা দূরে সরিয়ে, দুই সপ্তাহ পিছিয়ে শুরু হলো বইমেলা।
এদিকে গতবারও একই অবস্থা ছিল বইমেলার। করোনার কারণে ফেব্রুয়ারির মেলা গতবছর শুরু হয় মার্চে। চলে হাজারো বিধি-নিষেধ মেনে। ফলে প্রায় সকল প্রকাশকদেরই ক্ষতির খাতা নিয়ে ছাড়তে হয় মেলা প্রাঙ্গন। এবারও যেন তেমন না হয় তার জন্য অবশ্য প্রথম থেকেই বলে আসছিলেন প্রকাশনা সংস্থার কর্তা-ব্যক্তিরা। বিশেষ করে সরকারের দিক থেকে যখন ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলা সময় নির্ধারণ করা হয়, তখন থেকেই মাসব্যাপী মেলা করার আহ্বান জানান প্রকাশকরা। মঙ্গলবার মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও সে কথা উঠে এসছে এবং তাতে সাড়াও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনী আয়োজনে পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতির সভাপতি আরিফুর রহমান ছোটন এবারের বইমেলা আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী পর্যন্ত মেলা চালিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান। সে আহ্বানে প্রধানমন্ত্রী সাড়া দিয়ে বলেন, করোনা পরিস্থিতি এখন যেহেতু একটু স্বাভাবিক আছে, সেহেতু আমরা এটা ভাবতে পারি। সকলে পরামর্শ করে যেটা ভালো হয়, সেই সিদ্ধান্তটা নেওয়া যেতে পারে।
এ বিষয়ে পরে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মেলা বাড়বে বলে জানান তিনি। এছাড়া খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে মেলা গুছিয়ে উঠবে বলেও জানান তিনি।
মুহম্মদ নুরুল হুদা বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু আশা প্রকাশ করেছেন সেহেতু এই মেলাটি বাড়ানোর ব্যাপারে আমরা বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছি এবং দাপ্তরিকভাবে এ বিষয়ে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হবে। আর মেলা এখনো অগোছালো রয়েছে কারণ স্টল মালিকরা এখনো তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। স্টলের কাজ শেষ না হলে পুরো মেলার মাঠ এবং সড়ক পরিষ্কার করে কোনো লাভ হবে না। স্টলের কাজ শেষ হলে আগামী তিন দিনের ভেতরে অগোছালো এবং অপরিষ্কার অবস্থার অবসান হবে।
বইপ্রেমী নাজমুল হাসান বলেন, প্রত্যেকবার প্রথম দিনেই মেলা বেশ গোছানো থাকে। কিন্তু এবার মেলা অনেক বেশি অগোছালো। এখন পর্যন্ত অনেক স্টলেই বই ওঠেনি। তাই যে বইগুলো এসেছে সেগুলো ঘুরেফিরে দেখছি এবং পুরনো বইগুলোর ভেতর থেকেই কিছু বই ক্রয় করেছি। নতুন বইয়ের খোঁজখবর নিয়েছি। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যেই মেলা গুছিয়ে উঠবে এবং নতুন বইয়ের সমারোহ ঘটলে সেগুলো থেকে পছন্দের বইগুলো সংগ্রহ করতে পারবো।
প্রকাশকরাও বলছেন একই কথাই। মেলার প্রথম দিন মেলা প্রাঙ্গনে লেখকদের উপস্থিতিও ছিল কম। তবে যারা এসেছেন, তাদের মতে শুধু মেলা নয়, বরং লেখার উপরেও করোনার বড় প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে কবি রওশন আরা মুক্তা বলেন, আগে যেখানে একটি নারী চরিত্র শাড়ীর আঁচল বিছিয়ে বসতো, এখন সেই জায়গাটি নিয়েছে মাস্কের উপমা। করোনার একটা বড় প্রভাব লেখা-লেখির ওপর চলে আসছে। তবে এর মধ্য দিয়েও অনেক ভালো লেখা আসছে এবং অন্যান্য সব বইয়ের পাশাপাশি সেগুলোও এই মেলাকে আরও প্রাণিত করবে বলেই মনে করি।
আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনি বলেন, যেভাবে মেলার পরিধি বাড়ানো হচ্ছে সে তুলনায় পরিপক্ক, গুণগত ও মানসম্পন্ন প্রকাশনা সংস্থা অনেক কম। অথচ শুধু জায়গা ভরাটের জন্য নতুন ও অপপরিপক্ক প্রকাশকদের স্টল দেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া উচিত। অপরিপক্ক ও নিম্নমানের প্রকাশকদের দিয়ে মেলা ভরিয়ে ফেললে ঐতিহ্যবাহী এই মেলা গুণগতমান হারাবে। তবে এই সমস্যাগুলো পেরিয়ে আমরা যদি একটি গুছিয়ে উঠতে পারি, তবে বইমেলা আরও নান্দনিক এবং মর্যাদাপূর্ণ হবে। আর প্রথম দিন হিসেবে লোকসমাগম ভালো। এটা বরাবরই ছিল, এবারও আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২
এইচএমএস/এসআইএস