ঢাকা: দেখতে দেখতে শেষ হতে চলেছে বাঙালির প্রাণের বইমেলা। দিবস কেন্দ্রিক বই বিক্রি বাড়ার পাশাপাশি ছুটির দিনের প্রতি আলাদা প্রত্যাশা থাকে প্রকাশকদের।
শুক্রবার (১১ মার্চ) মেলার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ব্যাপক লোক সমাগম ঘটে। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে বরাবরের মতো মেলায় প্রবেশ করছেন। পছন্দমতো বই কিনছেন, ছবি তুলছেন নতুন বই হাতে নিয়ে। ছুটির দিন হওয়ায় সর্বস্তরের পাঠক-দর্শনার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয় মেলাপ্রাঙ্গন।
অনেকেই অফিস ছুটি থাকায় পরিচিতজনদের বই উপহার দিতে এসেছেন। তেমনই একজন বেসরকারি কর্মকর্তা শাহরিয়ার চৌধুরী। তিনি তার সাত-আটজন শুভাকাঙ্ক্ষীকে বাংলা একাডেমির স্টল থেকে বই কিনে দিচ্ছিলেন। একই সঙ্গে বই হাতে নিয়ে ফ্রেমে বন্দি করছেন আনন্দঘন সময়।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমাদের এখন পাঠক কমে গেছে। এ কারণে পরিচিতদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বই উপহার দিচ্ছি। ছুটির দিন হওয়ায় বিক্রি বেড়েছে স্টলগুলোতে।
নালন্দা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ছুটির দিনে বরাবরই বিক্রি ভালো হয়। আশা করছি আজও বই বেশি বিক্রি হবে। আমাদের অন্তিম বইটি বেশি বিক্রি হচ্ছে।
বইমেলায় মিরপুর থেকে সন্তানদের নিয়ে এসেছেন আব্দুল কাদের হানিফ। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ছুটির দিন ভিড় হবে জেনেও এসেছি। কারণ আমাদের সন্তানদের বইয়ের সঙ্গে যোগসূত্র করিয়ে দিতে হবে।
অমর একুশে বইমেলার ২৫তম দিনে নতুন বই এসেছে ৩১২টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় নান্দনিক সমাজ গঠনে আবৃত্তির ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিমাই মন্ডল। আলোচনায় অংশ নেন লায়লা আফরোজ এবং শাহাদাৎ হোসেন নিপু। সভাপতিত্ব করেন কবি জাহিদুল হক।
প্রাবন্ধিক বলেন, শুভ বোধসম্পন্ন যা আমাদেরকে নন্দিত করে অর্থাৎ আনন্দ দেয় তা-ই নান্দনিক। শুভ চেতনা, সুন্দর চেতনা যখন মঙ্গলময় সমাজ নির্মাণ করে তখন সেটিই হয় নান্দনিক সমাজ। যে কোনো শিল্পই শুভ-সুন্দর চেতনা দিয়ে নান্দনিক সমাজ গঠনে সহায়ক। আবৃত্তি একটি শিল্প বিধায় আবৃত্তিও নান্দনিক সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখে। আবৃত্তি মনকে পরিশুদ্ধ করে, চেতনাকে জাগ্রত করে। কবিতার বিষয় এবং পঙ্ক্তিসমূহ যদি যথাযথ আবৃত্তির মাধ্যমে অর্থসহ শ্রোতার কাছে পৌঁছানো যায়, তাহলে সেটা মানুষের নান্দনিক চিন্তা বাড়াতে সহায়তা করে।
আলোচকরা বলেন, ইতিহাসের ধারাবাহিকতার দিকে তাকালে দেখা যায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত নানা আন্দোলন সংগ্রামে কবিতার ভাষা আবৃত্তির মাধ্যমে গণমানুষের প্রতিবাদের ভাষায় রূপান্তরিত হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আবৃত্তিচর্চা আরও জোরদার হয়েছে। বৈষম্যহীন, মানবিক ও নান্দনিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আবৃত্তিচর্চার পরিসর ও নতুন নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জাহিদুল হক বলেন, আবৃত্তি এমন এক নান্দনিক শিল্প যা মানুষকে মানবিক ও পরিশুদ্ধ করে তোলে। আবৃত্তি শিল্প অভিনয় শিল্পেরই অংশ। মহৎ কবিদের কবিতায় যে বাণী থাকে তা আবৃত্তিশিল্পী তার অভিনয়-দক্ষতায় মানুষের অন্তরে পৌঁছে দেয় এবং মানুষের মধ্যে মানবপ্রেম, প্রকৃতিপ্রেম ও দেশপ্রেমকে জাগ্রত করে। তখনই সমাজ নান্দনিককতাপূর্ণ হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২২
এসকেবি/এমএমজেড