ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: থ্রিলার বই বরাবরই রোমাঞ্চকর। পুরো বইটা এক নিমিষে পড়ার ইচ্ছা জাগে।
শুধু আরিফ নয় গল্প, উপন্যাস, কবিতার পাশাপাশি বর্তমানে উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের থ্রিলার বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে বলে মনে করছেন প্রকাশকরা।
শিখা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী রিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে থ্রিলার বই। বনানী কবরস্থান বইটা সর্বাধিক বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ব্ল্যাকমুনসহ আমাদের চারটি থ্রিলার বই রয়েছে। যা তরুণদের বেশি আকৃষ্ট করছে।
তাম্রলিপি প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী মাহবুবুর রহমান রুমাত বাংলানিউজকে বলেন, তরুণরা বর্তমানে থ্রিলার বইয়ের প্রতি বেশি ঝুঁকছে। বিশেষ করে কিশোরীরা যারা ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত তারা বেশি ভূতের গল্প, বিভিন্ন রোমাঞ্চকর বই ব্যাপকভাবে কিনছেন। আমাদের সাদমান সাঈদ চৌধুরীর মনশ্চক্ষু, মালিহা তাবাসসুমের অ্যাকিলিসের টেন্ডন নামের মেডিক্যাল থ্রিলার বই বেশি বিক্রি হচ্ছে।
আদর্শ প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী আব্দুল মঈন খান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের থ্রিলারধর্মী বই কম। মাইন্ড ট্রাভেল নামে একটি বই আছে যা তরুণদের মধ্যে চাহিদা রয়েছে।
বইমেলার পাশাপাশি অনলাইনেও এসব থ্রিলারধর্মী বইয়ের চাহিদা টপ ক্যাটাগরিতে থাকছে। থ্রিলার প্রকৃতির বই ‘হিমলুং শিখরে’র লেখক ইকরামুল হাসান শাকিল বলেন, আমার এ বইটা রকমারিতে থ্রিলার ক্যাটাগরিতে টপ ফাইভে আছে। অনলাইনে এর অনেক প্রচারণা হয়েছে। এ বইয়ে গতানুগতিক থ্রিলার বইয়ের বাইরে গিয়ে নতুন অনেক কিছু আমি সন্নিবেশিত করেছি।
বইমেলায় গাজীপুরের হারবাইদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বই কিনতে এসেছেন দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের তিন বন্ধু। তাদের দুজন আরিফুল ইসলাম ও নুর মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, বইয়ের প্রতি আমাদের অন্য রকম টান আছে। সব ধরনের বই পড়ি। নিজের মতো করে চিন্তা করতে পারি বই পড়ার মধ্যে। সায়েন্স ফিকশান, থ্রিলার বইয়ের প্রতি আমাদের আগ্রহ রয়েছে।
ইকবাল হাসান নামে এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, আজ আমার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় বইমেলা চলে আসলাম। অনেক ভিড় হবে জেনেও এসেছি। বইমেলা আমার প্রাণের মেলা হলেও সব সময় আসার সুযোগ হয়না। আজকে ছুটির দিন পাওয়ায় উৎফুল্ল মনে চলে এসেছি। এবারের মেলায় গতবারের চেয়ে অনেকটাই পরিবেশবান্ধব। তাই এসে ভালো লাগছে।
শনিবার (১২ মার্চ) অমর একুশে বইমেলার ২৬তম দিনে নতুন বই এসেছে ৮০টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় একুশের গল্প ও উপন্যাস শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রফিকুর রশীদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নাসের রহমান, পাপড়ি রহমান ও স্বকৃত নোমান। সভাপতিত্ব করেন ইমদাদুল হক মিলন।
প্রাবন্ধিক বলেন, সাংস্কৃতিক আন্দোলন কীভাবে রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হতে পারে তার এক মহান দৃষ্টান্ত বাঙালির ভাষা আন্দোলন। ছাত্র, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে শুরু হলেও ভাষা আন্দোলন এক সময় বাংলার আপামর জনসাধারণের আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে পরিণত হয়। একুশের ভাষা আন্দোলনের পরপরই এর চেতনা ও আবেগ-মথিত গল্প সংকলন প্রকাশিত হতে থাকে। বাংলা সাহিত্যে ‘একুশের সাহিত্য’ নামে নতুন একটি ধারা সৃষ্টি হয়। প্রতিবছরই মহান একুশের প্রেক্ষাপট ও চেতনাকে উপজীব্য করে লিখিত হচ্ছে নতুন নতুন গল্প ও সাহিত্য। এমনকি বায়ান্ন-পরবর্তীকালে জন্মগ্রহণ করেছেন এমন কথাসাহিত্যিকদের গল্প-উপন্যাসেও বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে মহান একুশ। আমাদের কথাসাহিত্যিকরা ৫২’র ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত অধ্যায়কে যেমন তুলে এনেছেন, তেমনি একুশ পরবর্তী সময়ে একুশের প্রভাবকে তাদের গল্প ও উপন্যাসে উপস্থাপন করেছেন।
আলোচকরা বলেন, ভাষা আন্দোলনের পর বাঙালির মনে ভাষার চেতনা দৃঢ় রূপ লাভ করে যা ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করে এবং এর প্রভাবে বাংলা সাহিত্যে নতুন একটি মাত্রা যুক্ত হয়। অমর একুশ বিষয়ে রচিত গল্প ও উপন্যাসে সংঘবদ্ধ বাঙালির প্রতিবাদী চেতনা স্থান পেয়েছে। একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ সমকালীন ও ভবিষ্যতের কথাসাহিত্যিকদের হাতে ভাষা আন্দোলন বিষয়ক মহান সাহিত্য রচিত হবে এ আশা আমরা করতেই পারি।
সভাপতির বক্তব্যে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, মহান একুশের ভাষা আন্দোলন বাঙালির চেতনাকে নাড়া দিয়েছিল, রঙিন করে তুলেছিল। আর সেই চেতনা থেকে উপাদান নিয়েই লিখিত হয়েছে ভাষা আন্দোলন বিষয়ক গল্প ও উপন্যাস। একুশের চেতনাবাহী তাদের সাহিত্যকর্মকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২২
এসকেবি/আরবি