ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজেট

সস্তা সিগারেটের দাম কমালেন অর্থমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৯ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৬
সস্তা সিগারেটের দাম কমালেন অর্থমন্ত্রী

ঢাকা: সিগারেটখাতের কাঙ্খিত রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক ও মূল্যের কর কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রস্তাব থেকে সস্তা সিগারেটের দাম কমিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।  

এতে প্রায় হাজারকোটি টাকার রাজস্ব কমে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।


 
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের মূল্যস্তরে পরিবর্তন আনতে এনবিআর একটি প্রস্তাব দিয়েছে। এতে বিদ্যমান ৪টি স্তর থেকে কমিয়ে ৩টি স্তর করা হয়েছে। পরিবর্তন আনা হয়েছে সম্পূরক শুল্ক হারেও। তবে ব্যাপক হারে বিড়ি ও ধোঁয়াহীন তামাকের সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে।  
 
জানা গেছে, বর্তমানে নিম্নমানের ১০ শলাকার এক প্যাকেটের দাম ১৮ টাকা। এর সম্পূরক শুল্ক হার ৪৮ শতাংশ। বাজেটে দাম বাড়িয়ে ২৭ ও সম্পূরক শুল্ক ৫৪ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। কিন্তু অর্থমন্ত্রী তা আমলে না নিয়ে ১০শলাকার এক প্যাকেটের দাম কমিয়ে ২২ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে ৫০ শতাংশ নিজ হাতে নির্ধারণ করে দিয়েছেন।  
 
তামাক বিরোধী সংগঠনগুলোর আশঙ্কা ১০ শলাকার এক প্যাকেটের দাম ২২ টাকা থাকলে বাজার ধরে রাখতে কমদামী সিগারেটের দাম প্রতি শলাকা দুই টাকা রাখবে সিগারেট কোম্পানিগুলো।  
 
মাদকদ্রব্য ও নেশাবিরোধী কাউন্সিল (মানবিক) এক বিবৃতিতে এই পদক্ষেপে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। মানবিক বলছে, অর্থমন্ত্রী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা না করে তামাক কোম্পানির স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে প্রতীয়মান। যা কারোরই কাম্য নয়।  
 
এছাড়া ২১ থেকে ৪২ টাকা দাম বাতিল করে ৪৫ টাকা বা তার বেশি দামের জন্য ৬২ শতাংশ এবং ৭০ টাকা বা তার বেশি দামের সিগারেটের জন্য ৬৪ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত হতে পারে। ১০১ টাকা বা তার ওপরের মূল্যমানের সিগারেটের মূল্য প্রতি ১০ শলাকার জন্য ১০ টাকা বাড়িয়ে নতুন মূল্য নির্ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।  
 
অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এনবিআরের সুপারিশে বলা হয়, বিগত কয়েক বছরে সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক ও মূল্যের কর কাঠামো পরিবর্তনের কারণে অন্য সব স্তরের সরবরাহের হিস্যা হ্রাস পেয়ে সর্বনিম্ন স্তরের সরবরাহ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। বর্তমানে সিগারেটের ৭৯ শতাংশ নিম্নস্তরে সরবরাহ হচ্ছে। ভবিষ্যতে একক স্তরভিত্তিক কর কাঠামো প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে তিন বছরওয়ারি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথম বছর হিসেবে ৩টি স্তর করা যায়।
 
যদিও কিছুদিন আগে একটি আলোচনা সভায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে খারাপ সস্তা সিগারেটই বেশি প্রসারিত হচ্ছে। সস্তা সিগারেট ও বিড়ি এবার কোনভাবেই রেহাই পাবে না। এটাকে প্রশ্রয় দেওয়া কোনো ভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।  
 
২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অংশ হিসেবে সিগারেটের একক কর কাঠামো নির্ধারণের তাগিদ দেন বিশেষজ্ঞরা।  
 
অন্যদিকে বিড়ির ট্যারিফ মূল্য ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। ফিল্টার ছাড়া হাতে তৈরি ৮ শলাকা বিড়ির ট্যারিফ মূল্য ১ টাকা ৫৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ২৫ টাকা, ১২ শলাকার জন্য ৩ টাকা ৪০ পয়সা ও ২৫ শলাকার জন্য ৭ টাকা ১০ পয়সা করা হচ্ছে। এসব বিড়ির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে। আবার ফিল্টারযুক্ত ১০ শলাকা ট্যারিফ মূল্য ২ টাকা ৬৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩ টাকা ৮৫ পয়সা ও ২০ শলাকার জন্য ৫ টাকা ৩৪ পয়সা থেকে ৭ টাকা ৭৫ পয়সা করা হচ্ছে। এসব বিড়ির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হচ্ছে।  
 
ধোঁয়াবিহীন তামাক, জর্দা ও গুলের সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করা হচ্ছে। আমদানি পর্যায়ে এসব পণ্যের সম্পূরক শুল্ক ১০০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫০ শতাংশ করা হচ্ছে।
 
সিগারেটের দাম বাড়ানোর যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। টেকসই রাজস্ব আদায় খাতে পরিণত করতে কমদামী সিগারেটের দাম ধাপে ধাপে বাড়ানোর প্রস্তাব দেন তিনি। সম্প্রতি তামাক নিয়ে এক আলোচনা সভায় কমদামী সিগারেটের মূল্য কমপক্ষে ৩ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেন এই অর্থনীতিবিদ।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০১৫০ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৬
এসই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।