ঢাকা: অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, মানবসম্পদের উন্নয়ন ও আয় বৈষম্য নিরসনে ‘প্রবৃদ্ধি-উন্নয়ন ও সমতা ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা’র বাজেট ঘোষণা হচ্ছে বৃহস্পতিবার (০২ জুন)।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এদিন বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করবেন।
বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী সম্পূরক আর্থিক বিবৃতি, প্রজাতন্ত্রের সরকারি হিসাব, সংযুক্ত তহবিল প্রাপ্তি, মঞ্জুরী ও বরাদ্দের দাবিসমূহ (অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন), বিস্তারিত বাজেট উন্নয়ন, নারী উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ৪০টি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম, শিশুদের নিয়ে বাজেট ভাবনা, মধ্যমেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি, মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামো, বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি, বাজেটের সংক্ষিপ্ত সার, দক্ষতা উন্নয়ন ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের অগ্রাধিকার, কাঠামো রূপান্তরে বৃহৎ প্রকল্প: প্রবৃদ্ধি সঞ্চারে নতুন মাত্রা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৬ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যাবলী ২০১৫-১৬ সংসদে পেশ করবেন।
গ্রামীণ রাস্তাঘাট আর অবকাঠামোর উন্নয়নে প্রান্তিক অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ও গ্রামীণ জনজীবনের মান উন্নয়নে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে এবারের বাজেটে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফির উপর ভ্যাট থাকছে না। গত অর্থবছর শিক্ষায় ভ্যাট আরোপের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তা প্রত্যাহার করা হয়।
ওই সময় অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটে তা আরোপ করার ঘোষণা দিলে তা করা হচ্ছে না। এবারের বাজেটে বিশ্বব্যাংকের কোনো সহায়তাও থাকছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি বাজেটে প্যাকেজ ভ্যাটও থাকছে। তবে প্যাকেজ ভ্যাটের পরিমাণ গড়ে বর্তমানের চেয়ে ৫০ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে।
অর্থাৎ বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ীদের জন্য ১৪ হাজার টাকা প্যাকেজ ভ্যাট নির্ধারিত আছে। এটিকে ২৫ হাজার টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে।
এছাড়া বর্তমানে অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য ১০ হাজার টাকা, পৌর এলাকার জন্য ৭ হাজার ২০০ টাকা এবং দেশের অন্যান্য এলাকার জন্য ৩ হাজার ৬০০ টাকা করে প্যাকেজ ভ্যাট কার্যকর রয়েছে।
নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে প্যাকেজ ভ্যাট বাতিল হয়ে যাবে। সব ক্ষেত্রেই তখন ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর হবে। একই সঙ্গে ভোগ্যপণ্যসহ দেশে উৎপাদিত পণ্যের ট্যারিফ সুবিধা থাকছে। সিগারেটের মূল্যস্তর ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ছে।
তবে ভ্যাট অব্যাহতি পাচ্ছে অনলাইন কেনাবেচায়। মোটরসাইকেল, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার শিল্প ২০১৮ সাল পর্যন্ত এসআরও সুবিধা পাবে।
বাড়ছে না ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত আয়সীমা:
আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হচ্ছে না। অপরিবর্তিত থাকছে ন্যূনতম কর হারও। এর ফলে চলতি অর্থবছরের নির্ধারিত হার অনুযায়ী আগামী অর্থবছরে করদাতাদের কর দিতে হবে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারসহ স্থানীয় বাজারেও পণ্যমূল্য স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। এসব বিবেচনায় করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত থাকছে।
অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, এবারের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ, তবে লক্ষ্যমাত্রা অকৃত্রিম করার সম্ভাবনা আছে। মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
এক নজরে বাজেট:
২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটের আকার তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরে ছিলো দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরের বাজেট গত অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৪৫ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা বেশি।
বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এরমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর ব্যবস্থা থেকে আদায় করা হবে দুই লাখ তিন হাজার ১৫২ কোটি টাকা।
বাকি ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা ঘাটতি মেটাতে সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতে হবে ব্যাংক খাত, সঞ্চয়পত্র ও বৈদেশিক ঋণ থেকে।
গত অর্থবছরে দুই লাখ আট হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এনবিআর থেকে আয়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল এক লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরে ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে ৩৮ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার। এর মধ্য থেকে আগে নেওয়া বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে আট হাজার ১৫৮ কোটি টাকা।
ফলে বিদেশি উৎস থেকে নতুন অর্থবছরে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩০ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরের বাজেট থেকে উন্নয়নমূলক কাজে এক লাখ ১৭ হাজার ২৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এডিপি বহির্ভুত প্রকল্প ব্যয় হবে ৪ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা।
এছাড়া দুই লাখ ১৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা অনুন্নয়ন খাতে এ অর্থবছরে ব্যয় করবে সরকার। এর মধ্যে অনুন্নয়ন রাজস্ব ব্যয় এক লাখ ৮৮ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা।
সরকারের নেওয়া অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা ও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ করা হবে এক হাজার ৭১১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ০০২৩ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৬
এসই/এমএ/