ঢাকা: ‘বাজেট দিলেই কী, না দিলেই কী? মোরা তো কিছু পামু না। ’ সরকারের নতুন অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে এভাবেই আক্ষেপ করছিলেন নূর ইসলাম।
পটুয়াখালীর দুমকি থেকে বছর ত্রিশেক আগে ঢাকায় আসেন নূর ইসলাম। তার সঙ্গে বৃহস্পতিবার (২ জুন) বিকেলে কথা হয় পলাশী মোড়ে।
চা পানের ফাঁকে ফাঁকেই তিনি বাজেট নিয়ে বলছিলেন, ‘দশ তলার যে মালিক, হ্যায় আরও দশ তলা উডাইবে। কিন্তু মোর কী? মোর কিছুই হইবে না। তরিতরকারির দাম আবার বাইড়্যা যাইবে। ’
এক পর্যায়ে তিনি আবদার করে বলেন, ‘মামা আমাগো ভাড়াডা এবার কিন্তু আপনাগো বেশি দেতে হইবে। দ্যাহেন ক্যামনে সব কিছুর দামডা বাড়ে। ’
নূর ইসলাম কথা বলছেন দেখে হাজির হন আরও কয়েকজন। এদের একজন চা বিক্রেতা মজিবর মিয়া।
তিনি বলেন, ‘আপনি যা কইতাসেন, হ্যারা এইডা বুজব না। যত বেশি বাজেটের ট্যাকা, তত বেশি চুরি। যারা বড়লোক হেরা বড়লোকই থাকব, আর আমরা যা আছি তাই। ’
বাজেট নিয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রবিউল হাসান, বিনি আমিন শাওন, শেখ মো. আল আমিন ও আব্দুস সবুরের সঙ্গে।
শাওন বলেন, ‘বাজেটে প্রতিবছরই বরাদ্দের আনুপাতিক হার কমছে। যা বরাদ্দ হচ্ছে তাও যথাযথভাবে ব্যবহার হয় না। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি না হলে দেশের প্রত্যাশিত উন্নতি হবে না। গুণগত শিক্ষা, গবেষণায় আমাদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ’
শাওনের মতোই রবিউল, সবুর ও আল আমিনরা বলেন, ‘বাজেটের আকার বাড়ার পাশাপাশি সুষ্ঠু ব্যয়ও নিশ্চিত করতে হবে। বাজেটের আগে দেখেন চারদিকে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে, এই কাজগুলোতে দুর্নীতি ও জনগণের ভোগান্তি ছাড়া আর কিছুই হয় না। বাজেটে শিক্ষাখাতসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের চাহিদাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ’
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) মার্কেটের দোকানি রুহুল আমিন বলেন, ‘বাজেট আমাদের মতো ছোটখাট ব্যবসায়ী আর মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস তোলে। আপনার বেতন তো বাড়বে না, কিন্তু নানা পদের ট্যাক্সে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে, আবার সুযোগে পাইকারি বিক্রেতারাও জিনিসপত্র স্টক করে দাম বাড়িয়ে দেবে। ’
বয়স্ক এই ব্যবসায়ী মত দেন, ‘খেটে খাওয়া মানুষের যে আয়, চাকরিজীবীর যে বেতন-কাঠামো, তার সঙ্গে সমন্বয় করে বাজেট করতে হবে। পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ভ্যাট কমিয়ে আয়কর আদায় বাড়াতে হবে। ’
সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমানের কথায়ও ওঠে একই সুর। তিনি বলেন, ‘ভ্যাটের যে হিড়িক, তাতে তো চিড়ে চ্যাপ্টা হতে হবে। ধনী-দরিদ্র বৈষম্য কমাতে চাইলে অবশ্যই সাধারণ জনগণের ওপর থেকে করের বোঝা কমাতে হবে। ধনী বিত্তশালী লোকদের বেশি হারে আয়করের আওতায় আনতে হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১১১ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৬
এইচআর/এইচএ/