ঢাকা: রাজস্ব আদায়ে বিশ্বের সবগুলো দেশ থেকেই বাংলাদেশ তুলনামূলক পিছিয়ে মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ভালো সেবা পেতে হলে পর্যাপ্ত রাজস্ব দিতে হবে। বাজেটকে কেন্দ্র করে একটু রাজস্ব বেশি দিলে মন্দ হয় না।
শুক্রবার (০৩ জুন) বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা পৃথিবীর সবদেশের থেকে কম রাজস্ব আদায় করি। একটি না দুইটি দেশ আমাদের নিচে আছে। সরকার কী সেবা দিলো তা নিয়ে কথা বলি, কিন্তু ভালো সেবার জন্য যে পর্যাপ্ত রাজস্ব দরকার সেটি নিয়ে মাথা ঘামাই না। আর সে জন্য একটু রাজস্ব বেশি দিলে মন্দ হয় না।
মোবাইল ফোনের ওপর রাজস্ব বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আগে যেমন টেক্স আসতো, তেমন আসছে না এই খাত থেকে। মোবাইল ফোনে যারা কথা বলেন, এটি তেমন কিছু নয় বলে আমি মনে করি। এতে তাদের জন্য অতিরিক্ত কোনো প্রভাব পড়বে না।
২০১৬-১৭ বছরের অর্থবছরে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা রাজস্ব খাত থেকে সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা মোট বাজেটের ১২.৪ শতাংশ। এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের তুলনায় ৬৫ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা বেশি।
এছাড়া এনবিআর বহির্ভূত কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্র নির্ধাণ করা হয়েছে ৭ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। কর-বহির্ভূত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।
এদিকে, বাজেট ঘোষণার পর বিভিন্ন জিনিসের দাম বেড়ে যায় এটিকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে মুহিত আরও বলেন, তেলের দাম বিশ্বজুড়ে কমেছে। প্রত্যেকটি পণ্যের দাম বিশ্বজুড়ে কমছে। সেগুলোর দাম বাজেটের পর বেড়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সব সময় থাকবে
কোন শর্তে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলো এমন প্রশ্নে মুহিত বলেন, জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার আইন এ সরকার যতদিন থাকবে তা বলবৎ থাকবে। পরিবর্তন হবে না।
নারীবান্ধব বাজেট
একটি সংবাদ মাধ্যমে ‘নারীর উন্নয়নে জিডিপির ৪.৭৩ শতাংশ’-শিরোনামকে নির্বোধ উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে নারীর সংখ্যা সমান সমান। যা কিছু বাজেটে রয়েছে সেখানে নারীর শেয়ার রয়েছে। পুরোপুরি শেয়ার আমরা কখনো দেই না। কারণ এখনও মেয়েদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ অনেক সীমিত। নারীদের জন্য ৩০ শতাংশ বাজেট রাখা উচিত।
মধ্যম আয়ের দেশ হবে
অপর একটি সংবাদমাধ্যমে ‘মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত ব্যাহত হবে’-এ শিরোনামের জন্য সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে বিরাট পণ্ডিত উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের অবস্থানে আছে।
রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা ‘উচ্চাবিলাসী’
‘ইয়েস, রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাবিলাসী’-উল্লেখ করে মুহিত বলেন, গতবছরের রাজস্ব আদায় বেশ নিম্নমানের ছিল। এর আগের বছরের রাজস্ব আদায় দুই ডিজিটের বেশি ছিল। গত সাতবছর রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরে অনেক লোকবল নিয়োগ হয়েছে, নতুন অফিস হয়েছে। ৯৬টি উপজেলায় অফিস রয়েছে, প্রত্যেক উপজেলায় হবে। কর্মকর্তাদের সাতবছর কাজ করতে দেখেছি। কর্মকর্তা ও এনবিআরের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত কর আদায়ের প্রস্তাব করেছি। এজন্য অনেক কষ্ট করতে হবে, একটি পরিকল্পনা আছে। কার্যক্রম শুরু হবে জুন মাস থেকে।
‘আমি আমার কর্মকর্তাদের নিয়ে চ্যালেঞ্জ নিতে চাই, তারা এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফল হবে,’ বলে জোর দাবি করেন অর্থমন্ত্রী।
পোশাক খাতে করপোরেট কর ৩৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু উৎসে কর বাড়ানো হয়েছে- এমন প্রশ্নে মুহিত বলেন, ব্যবসায়ীরা এতে অসন্তুষ্ট নন।
বাজেট দেওয়ার পর পণ্যের দাম বেড়েছে এমন প্রশ্নে মুহিত দাবি করেন, গত সাতবছরে বাজেট দেওয়ার পর পণ্যের দাম বাড়েনি। ইতোমধ্যে দাম কমেছে। তেল, সারসহ সব পণ্যের দাম বিশ্বব্যাপী কমে যাচ্ছে। বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব থাকবে।
বাজেট প্রতিক্রিয়াশীল
কেউ কেউ প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ বলেছেন এমন প্রশ্নে মুহিত বলেন, বাংলাদেশ প্রগতিশীল দেশ। কিছু সংখ্যক ছাড়া কেউ এর বাইরে নেই। বিএনপি এমন উক্তি করে- যাতে তারা বাজেটে সন্তুষ্ট নয়। খালেদা জিয়া যে দল করেন এটি কোনো দল নয়, বিরোধীদল তো নয়ই।
ভবিষ্যতে কাস্টমস শুল্ক থাকবে না
মোটরসাইকেলসহ বেশ কিছু পণ্য আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে- এতে দেশীয় শিল্প হুমকির মুখে পড়বে কিনা এমন প্রশ্নে মুহিত বলেন-অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ মুক্তবাজারের একটি অংশ হবে। এক কথায় বলতে গেলে ক্ষতিকর পণ্য ছাড়া অন্য কিছুতে কাস্টমস শুল্ক থাকবেই না। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পৌঁছাতে হলে শুল্ক অনেক কমাতে হবে।
বাজেট বাস্তবায়ন ৯৫ শতাংশ
বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নে উদাহরণ দিয়ে মুহিত বলেন, আমরা যখন প্রথম ক্ষমতায় আসি তখন অ্যানুয়েল ডেভেলপমেন্ট বাজেট ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ৯৬ হাজার কোটি টাকা। দক্ষতা উন্নয়ন হয়েছে উচ্চাবিলাসী টার্গেটের জন্য হয়েছে আরও হবে।
বড় বাজেট বাস্তবায়ন কম: সিপিডি
বাজেটের আকার বাড়ছে কিন্তু বাস্তবায়ন কম হচ্ছে- সিপিডির উল্লেখ করা প্রশ্নে মুহিত বলেন, বর্তমান সরকারের গত সাতবছরে বাজেটের ৯৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এর আগের বাজেটগুলো ৮০ থেকে ৮৮ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।
বিনিয়োগ অবস্থা
স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগে একটি ধাক্কা এসেছে স্বীকার করে মুহিত বলেন, বাংলাদেশে সর্বোচ্চ দুই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এসেছে। গত প্রায় দেড় বছরে দেশের পরিস্থিতির ভিত্তিতে বিনিয়োগে আস্থা তৈরি হয়েছে। দেশের শ্রমজীবী মানুষ আর স্ট্রাইক চায় না, কাজ করতে চায়, ছুটিও চায় না।
জেলা বাজেট
জেলা বাজেট বাদ দেওয়া হলো কেন? এমন প্রশ্নে মুহিত বলেন, সরকারের শাখা-প্রশাখার মাধ্যমে একটি জেলায় কী ধরনের বাজেট যায়, কি ধরনের কাজ হয় তা পরীক্ষা করার জন্য এ বাজেট দেওয়া হয়েছিল। অদূর ভবিষ্যতে স্থানীয় সরকারের একটি কাঠামো আসতে হবে। সেজন্য এ বাজেট দিয়ে পরীক্ষা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান প্রশ্নের উত্তর দেন।
এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
***২ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করা হয়েছে
** ২০২১ সালের মধ্যেই মধ্য আয়ের দেশ
**‘খাদ্যশস্য রফতানি হচ্ছে’
**ভবিষ্যত পরিকল্পনার ভিত্তি তৈরি সরকারের চ্যালেঞ্জ
**ফের কমছে তেলের দাম, অর্থমন্ত্রীর ইঙ্গিত
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৬/আপডেট ২০০০ ঘণ্টা
আরইউ/এসই/আইএ