ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজেট

বর্ধিত তামাক করে রাজস্ব বাড়বে, বাঁচবে জীবন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১২ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৭
বর্ধিত তামাক করে রাজস্ব বাড়বে, বাঁচবে জীবন কেমন তামাক কর চাই শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন। ছবি: শাকিল

ঢাকা: আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেটে সকল তামাকজাত পণ্যের প্যাকেট বা কৌটা প্রতি সুনির্দিষ্ট (স্পেসিফিক) কর আরোপের দাবি উঠেছে। সোমবার (৮ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে আয়োজিত ‘কেমন তামাক কর চাই’ শীর্ষক প্রাক-বাজেট প্রেস কনফারেন্সে এ দাবি তোলা হয়। একই সঙ্গে বেশ কিছু প্রস্তাবনা ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশে তামাকের উপর শুল্ক-কাঠামো অত্যন্ত জটিল এবং তা আদায় হয় ad valorem অর্থাৎ মূল্যের শতাংশ হারে যা অতিরিক্ত জটিলতা তৈরি করে। কর ফাঁকির সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।

তাই তামাক পণ্যে সুনির্দিষ্ট কর আরোপ প্রয়োজন।  

প্রজ্ঞা ও এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) এর উদ্যোগে তামাকবিরোধী সংগঠন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, এসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি), ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল একশন (ইপসা) ও  তামাকবিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) সম্মিলিতভাবে  এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক। প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর সাবেক সদস্য (ট্যাক্স পলিসি) মো: আমিনুর রহমান।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব:) আব্দুল মালিকের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরো ছিলেন আত্মা কনভেনর মর্তুজা হায়দার লিটন, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস এর বাংলাদেশ কান্ট্রি এডভাইজর শফিকুল ইসলাম, উবিনীগ এর নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স (সিটিএফকে) এর গ্রান্টস ম্যানেজার ডা. মাহফুজুল হক ভুঁঞা, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ।

সংবাদ সম্মেলনে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, সিগারেটের বহুস্তর বিশিষ্ট কর কাঠামো কর ফাঁকির অন্যতম উৎস। সুতরাং আমাদের ধীরে ধীরে একক কর কাঠামোর দিকে যেতে হবে। আমরা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করতে চাইলে এই উদ্যোগগুলো আমাদের নিতে হবে।

মো: আমিনুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে সিগারেট চোরাচালান বিষয়টি অমূলক। আশা করি, এনবিআর এই অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে চোরাচালানকৃত সিগারেট প্রতিরোধ সপ্তাহ পালনের উদ্যোগ থেকে সরে দাঁড়াবে।

জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব:) আব্দুল মালিক বলেন, তামাকজনিত ক্ষতি মোকাবিলায় আমাদের তামাকের উপর কর বাড়ানো দরকার।

প্রস্তাবনা
১. সিগারেট (১০ শলাকার প্যাকেট): নিম্নস্তরের সিগারেটে ২৫.৯৫ টাকা, উচ্চস্তরের সিগারেটে ৪৯.৬০ টাকা এবং প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটে ৮২ টাকা সুনির্দিষ্ট কর ধার্য করে খুচরা মূল্য যথাক্রমে কমপক্ষে ৪০ টাকা,  ৭০ টাকা এবং ১২০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
২. বিড়ি (২৫ শলাকা): বিড়ির ফিল্টারযুক্ত ও ফিল্টারবিহীন এই বিভাজন বাতিল করে প্রতি ২৫ শলাকা বিড়ির উপর ১০.১৩ টাকা সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করে বিড়ির খুচরা মূল্য ২২.৩০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
৩. ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য (জর্দা ও গুল): প্রতি ২০ গ্রাম ওজনের ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যে ১৬ টাকা সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করে এসআরও এর মাধ্যমে এর খুচরা মূল্য কমপক্ষে ৩২ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
৪. সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল রাখা জরুরি।
এসব প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে সিগারেট থেকে সরকারের অতিরিক্ত ৫,২০০ কোটি টাকা, বিড়ি থেকে অতিরিক্ত ১,০৩০ কোটি টাকা এবং প্রতি ২০ গ্রাম ধোঁয়াবিহীন তামাকের (জর্দা ও গুল) কৌটা বা প্যাকেট থেকে অতিরিক্ত ৬ টাকা রাজস্ব আয় হবে। একইসাথে তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে কমবে।

সুপারিশমালা
১. সিগারেটের মূল্যস্তর প্রথা পর্যায়ক্রমে তুলে দিতে হবে, এই মূলস্তর প্রথা কর ফাঁকির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার।
২. সিগারেট, বিড়ির শলাকার সংখ্যা এবং  জর্দা, গুলের ওজনের উপর ভিত্তি করে সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করতে হবে।
৩. পর্যায়ক্রমে সকল তামাকপণ্য অভিন্ন পরিমাণে (শলাকা সংখ্যা এবং ওজন) প্যাকেট/কৌটায় বাজারজাত করতে হবে।
৪. আয় এবং সময়ের সাথে সঙ্গতি রেখে প্রকৃত মূল্য বৃদ্ধির জন্য তামাকপণ্যের মূল্য বাৎসরিক সমন্বয় করতে হবে।
৫. খাদ্য নিরাপত্তা সুসংহতকরণে তামাকের উপর বিদ্যমান রপ্তানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
৬. তামাকের চুল্লি প্রতি বাৎসরিক ৫ হাজার টাকা লাইসেন্সিং ফি আরোপ করতে হবে।
৭. তামাকের কর প্রশাসন শক্তিশালী করা, কর সংগ্রহ ব্যবস্থা উন্নত করা এবং কর ফাঁকি রোধকল্পে শুল্কমুক্ত বিক্রয় প্রথা তুলে দেওয়া দরকার।
৮. তামাকপণ্যের উপর ২ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আরোপ করা দরকার। এখান থেকে অর্জিত রাজস্ব প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি পরিচালনায় ব্যয় করা উচিত।
৯. একটি সহজ এবং কার্যকর তামাক কর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হেব, যা তামাকের ব্যবহার হ্রাস এবং রাজস্ব বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৭
এসটি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।