বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ বছরের বাজেট পেশের পর প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত একবছরে জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৯.২৭ শতাংশ।
অন্যদিকে, সিগারেটের সর্বনিম্নস্তর ভেঙ্গে দেশি এবং আন্তর্জাতিক দুটি স্তরে বিভক্ত করে তামাক কর-কাঠামোর জটিলতা আরও বৃদ্ধি করা হলো। তামাকবিরোধীদের সুনির্দিষ্ট কর পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রস্তাব গ্রহণ না করে করারোপের পুরনো ও জটিল এডভ্যালোরেম পদ্ধতিই বহাল রাখা হয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী একটি সহজ এবং কার্যকর তামাক কর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০১৬ সালে যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন তারও বিন্দুমাত্র প্রতিফলন নেই এবারের বাজেট প্রস্তাবনায়।
প্রস্তাবিত বাজেটে দেশীয় উৎপাদনকারী কোম্পানির প্রস্তুত করা নিম্ন মূল্যস্তরের প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের মূল্য ২৩ টাকার স্থলে ২৭ টাকা এবং আন্তর্জাতিক কোম্পানির প্রস্তুত করা সিগারেটের মূল্য ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশীয় কোম্পানির ক্ষেত্রে এই মূল্যবৃদ্ধি প্রায় ১৭.৪ শতাংশ এবং আন্তর্জাতিক কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রায় ৫২.২ শতাংশ। তবে এডভ্যালোরেম পদ্ধতি বহাল থাকায় এই দুটি পণ্যের মূল্য যতটুকু বাড়বে তার সিংহভাগই যাবে তামাক কোম্পানিগুলোর পকেটে।
উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরের করহার না বাড়িয়ে অর্থমন্ত্রী আবারো আন্তর্জাতিক তামাকপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে যাচ্ছেন। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি) একমাত্র আন্তর্জাতিক তামাকপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যারা বাংলাদেশে সকল স্তরের সিগারেট উৎপাদন করে। বর্তমানে বাজারে বিএটিবির প্রচলিত সিগারেটের ব্র্যান্ড রয়েছে ১৪টি, যারমধ্যে নিম্নস্তরের সিগারেট মাত্র ৪টি। সুতরাং উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরে সিগারেটের করহার না বাড়ানোর মাধ্যমে প্রকারান্তরে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার প্রয়াস চোখে পড়ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
তামাকবিরোধীদের দীর্ঘদিনের দাবি উপেক্ষা করে একক স্তরভিত্তিক কর কাঠামো প্রতিষ্ঠার কোনো নির্দেশনা বাজেট ঘোষণায় প্রতিফলিত হয়নি। বরং বহুজাতিক তামাক কোম্পানির পরামর্শেই স্তর সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে বিভিন্ন স্তরের সুবিধা নিয়ে সিগারেট কোম্পানিগুলোর রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ অব্যাহত থাকলো।
বাংলাদেশে অর্ধেকেরও বেশি তামাক ব্যবহারকারী ধোঁয়াবিহীন তামাক (জর্দা ও গুল) সেবন করেন। অথচ প্রস্তাবতি বাজেটে এগুলোর উপর কর বাড়ানো হয়নি। আমাদের দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষতঃ নারীদের মাঝে এই পণ্য ব্যবহারের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে জর্দা-গুল ব্যবহারের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা করার কোনো উদ্যোগ বাজেটে নেই, যা অত্যন্ত হতাশাজনক।
বাজেটে বিড়ির শুল্কহার অপরিবর্তিত রেখে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকার প্যাকেটের দাম ১৫ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসাথে বিড়ির প্রচলিত ট্যারিফ ভ্যালু বিলুপ্ত করা হয়েছে। এরফলে বিড়ির কর আদায়ের জটিলতা কিছুটা হলেও সহজ হবে। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় আগামী ৩ বছরের মধ্যে বিড়ি উৎপাদন বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন, কিন্তু বিড়ির মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে এর তেমন কোনো প্রতিফলন নেই। কেননা, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বিড়ির মূল্য প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়ানো হলেও এবার মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে মাত্র ৪১.৩৮ শতাংশ।
বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক সিগারেটের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্যটির ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে, প্রস্তাবিত বাজেটে ইলেকট্রনিক সিগারেট এবং এর রিফিল প্যাকের উপর ১০০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। একইসাথে পণ্যদুটির আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে যা প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
অন্যান্য কর প্রস্তাবগুলোর মধ্যে, ক্রমবর্ধমান তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে তামাক ও তামাকজাত পণ্য রপ্তানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সিগারেট, বিড়ি, জর্দা এবং গুলসহ সকল প্রকার তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী করদাতার ব্যবসা হতে অর্জিত আয়ের উপর ২.৫ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৭
জেডএম/