বৃহস্পতিবার (০৭ জুন) জাতীয় সংসদে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় এসব উদ্যোগের কথা জানান তিনি।
বাজেট বক্তৃতায় তিনি জানান, অস্বচ্ছল যুদ্ধাহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে অথবা নাতি-নাতনিদের সহায়তা দেওয়ার একটি ব্যবস্থা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় তৈরি করছে।
বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৩৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪০ লাখ করা হচ্ছে।
বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতাভোগীর সংখ্যা ১২ লাখ ৬৫ হাজার থেকে ১৪ লাখ করা হচ্ছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ও উৎসব ভাতার পাশাপাশি বার্ষিক দুই হাজার টাকা হারে বাংলা নববর্ষ ভাতা চালু করা হচ্ছে। এছাড়া জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিজয় দিবস উপলক্ষে জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা করে বিশেষ সম্মানী ভাতা চালু করা হচ্ছে।
অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা আট লাখ ২৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ করা হচ্ছে।
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির হার বাড়িয়ে প্রাথমিক স্তরে ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায়, মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকায় এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৭০০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকায় বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এছাড়া এই ভাতাভোগীর সংখ্যা ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার করা হচ্ছে।
হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উপবৃত্তির হার প্রাথমিক স্তরে ৩০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৪৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা এবং উচ্চতর স্তরে এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ২০০ টাকা করা হচ্ছে।
বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৬ হাজার থেকে ৬৪ হাজারে উন্নীত এবং এদের মধ্যে বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ২৩ হাজার থেকে ৪০ হাজারে এবং শিক্ষা উপবৃত্তির সংখ্যা ১১ হাজার থেকে ১৯ হাজারে উন্নীত করা হচ্ছে।
ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজ্ড ও জন্মগত হৃদরোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার করা হচ্ছে।
চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্যা ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজারে বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
দরিদ্র মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা মাসিক ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় বৃদ্ধি এবং ভাতার মেয়াদ দুই বছরের স্থলে তিন বছর করা হচ্ছে। পাশাপাশি, ভাতাভোগীর সংখ্যা ছয় লাখ থেকে বাড়িয়ে সাত লাখ করা হচ্ছে।
কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তার আওতায় মাসিক ভাতা ৫০০ টাকার জায়গায় ৮০০ টাকা এবং ভাতা দেওয়ার মেয়াদ দুই বছরের পরিবর্তে তিন বছর করা হচ্ছে। পাশাপাশি, ভাতাভোগীর সংখ্যা দুই লাখ থেকে বাড়িয়ে আড়াই লাখ করা হচ্ছে।
কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার প্রতিটিতে ২০ হাজার হিসেবে মোট ৪০ হাজার বৃদ্ধি করে ভিজিডি কার্যক্রমের উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ৪০ হাজারে বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
ভাতার হার ও ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমকে লক্ষ্যভিত্তিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক করার জন্য তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক সংস্কার কার্যক্রম তথা জি-টু-পি পদ্ধতির প্রবর্তন করা হয়েছে। এর আওতায় সব উপকারভোগী সরকারি কোষাগার থেকে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে নিজ নিজ পছন্দের ব্যাংক হিসাব বা মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে মাসের নির্দিষ্ট তারিখে ভাতা পাবেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সংগতি রেখে প্রত্যেক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির জন্য ডিজিটাল তথ্য-ভাণ্ডার প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা উপকারভোগী নির্বাচনে দ্বৈততা রোধে সহায়তা করবে। পাশাপাশি, নতুন ভাতার আবেদন, অভিযোগ ব্যবস্থাপনা, অর্থ বরাদ্দ, অর্থ ছাড় ইত্যাদি বিষয়ও এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। ফলে সরকারি সম্পদ ও সেবায় সাধারণ জনগণের সহজ অভিগম্যতা ও অধিকার নিশ্চিত হবে। পাইলট ভিত্তিতে মাতৃত্বকালীন ভাতা কর্মসূচির সাতটি উপজেলায় জি-টু-পি’র মাধ্যমে ভাতা বিতরণ পদ্ধতির চালু করা হয়েছে। বয়স্কভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা এবং প্রতিবন্ধী ভাতা ১১টি জেলায় জি-টু-পি পদ্ধতিতে বিতরণের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করি, আগামী অর্থবছরে সারাদেশে এটি সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে আমরা যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৭ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৮
এমআইএইচ/এসআই