ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বাজেট

বাজেটের পর পণ্যের দাম বাড়বে না: অর্থমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৭ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৯
বাজেটের পর পণ্যের দাম বাড়বে না: অর্থমন্ত্রী দৈনিক কালের কণ্ঠ আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল | ছবি: বাদল

ঢাকা: আগামী বাজেট ‘রিজনেবল’ হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, কথা দিচ্ছি বাজেটের পর পণ্যের দাম বাড়বে না। বাজেটে কারো ওপর কোনো বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হবে না। কাউকে কোনো কষ্ট দিয়ে কাজ করবো না।

শনিবার (২৫ মে) রাজধানীর বসুন্ধরায় দৈনিক কালের কণ্ঠ আয়োজিত ‘কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের কনফারেন্স রুমে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

অর্থমন্ত্রী বলেন, রেভিনিউ আদায় থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে সুশাসন দরকার। তবে এ ক্ষেত্রে আরেকটি ক্রিটিক্যাল এলাকা হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। ব্যাংকিং খাতের যে দুরাবস্থা আমরা দেখতে পাচ্ছি, ঋণ খেলাপির কথা আমরা বলছি। এগুলো আজকে হয়নি।

তিনি বলেন, আগে যারা ব্যাংকের দায়িত্বে ছিলেন তারা একবারও চিন্তা করেননি এই ঋণখেলাপি কী? ঋণখেলাপি কেন হলো? ঋণখেলাপি আজকের সৃষ্টি না, জন্মলগ্ন থেকেই তারা ঋণখেলাপি হয়ে আসছে। এখানে একের পর এক ঋণ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইন্টারেস্ট রেট যদি কারো ১০ পারসেন্ট হয় এগুলো নেওয়া হয়েছে ১৬ পারসেন্ট করে। এগুলো যতটা পারা যায় বাড়িয়ে বাড়িয়ে ধরা হয়েছে। টাকা দেওয়া হবে না, দুটি একাউন্ট করেছে— একটিতে চার্জ হবে, আরেকটিতে চার্জ হবে না। এগুলোকে রেখে দেবেন ব্লক একাউন্টে। সেটার উপরেও ইনকাম ট্যাক্স প্রভেশন ধরা হবে। সেখানেও আবার ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হয়। এভাবে যদি চক্রবৃদ্ধি হারে ঋণ বাড়তে থাকে তাহলে কোন ব্যবসায়ী এটা শোধ দেবে? যারা এটি করেছিলেন একটিও এক্সিট রেখে আসেননি।

তিনি বলেন, রেভিনিউ ও আর্থিক খাতের সুশাসনের জন্য আগামীতে দুটি কমিশন গঠন গঠন করা হবে। অদক্ষতা, দুর্নীতি দূর করতে পারলে আমাদের রেভিনিউ আদায়ে যে লক্ষ্য রয়েছে তা পূরণ সম্ভব।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের যে অদক্ষতা আছে, মিস ম্যানেজমেন্টগুলো আছে, দুর্নীতি যেটি আছে সেগুলো দূর করতে পারলেই ৩ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা আয় করবো বলেছি, সেটি ডাবল হয়ে যাবে।

অটোমেশন সম্পর্কে তিনি বলেন, অটোমেশন প্রয়োজন রয়েছে তবে এটি অর্ধেক হলো আর অর্ধেক হলো না, তাহলে দুর্নীতি কমবে না। আমরা ইতিমধ্যে ঠিক করেছি সারা বাংলাদেশে যে সকল মালামাল প্রবেশ করছে, সবগুলোই স্ক্যানারের মাধ্যমে আসবে। এতে করে দুর্নীতি কমবে।
দৈনিক কালের কণ্ঠ আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠক | ছবি: বাদলগোলটেবিল বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। এক লাফে এভারেস্টের চূড়ায় ওঠা যাবে না। তবে চেস্টা থাকতে হবে বাস্তবসম্মতভাবে বাড়ানোর।

বৈঠকে রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ট্যাক্স কমাতে হলে রাজস্ব বোর্ডের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কেউ ইচ্ছা করে ট্যাক্স দিতে আসেন না। বছরে মিনিম্যাম ট্যাক্স ৫ হাজার টাকাও অনেকে দিতে চায় না। তবে কারো ওপর কোনো বোঝা চাপানো হবে না।

বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, আগামী বাজেটে প্রত্যেকটি মার্কেটের জন্য প্রণোদনা প্রয়োজন। এক্সপোর্টের ক্ষেত্রে ট্যাক্স ৫ টাকা কমানো হলে এক্সপোর্ট বহুগুণে বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দিন বলেন, ট্যাক্স রেট কমিয়ে দেওয়া গেলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। ’৮৩ সালে অটোমেশন প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম, সেটি এখনো শেষ হয়নি। সামান্য একটি বিধিতে এটি আটকে আছে।

সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন বলেন, ব্যাংকিং খাত যদি ঠিক না থাকে তাহলে দেশের অর্থনীতি ঠিক থাকে না। তাই এই খাতকে সম্পূর্ণ প্রফেশনালভাবে চলতে হবে। রাজনৈতিকদের বাদ দিয়ে সম্ভব না, তাদের নিয়েই সমস্যা সমাধান করতে হবে।

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারবিডা) সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, অটোমোবাইল সেক্টর গত ২ বছর ধরে বৈষম্যের স্বীকার। আমরা পুরানো গাড়ির আমদানির ক্ষেত্রে অবচর হার ৪৫ শতাংশ পেতাম, এটি ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। নতুন গাড়ির ডিউটি কমেছে আর আমাদের বাড়ানো হয়েছে। তাই আগামী বাজেটে এই বৈষম্য দূর করার দাবি জানাই।

ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, পুঁজিবাজারে টার্ন ওভার এক হাজার কোটি টাকা থেকে ৩০০ কোটিতে নেমেছে। তাই ডিএসইকে বাঁচাতে ব্রোকারেজ হাউজের ট্যাক্স ৫ পয়সা থেকে দেড় পয়সা করার দাবি জানান।

ডিবিএ’র সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, পুঁজিবাজারে টার্নওভার কমে গেছে, ভালো কোম্পানিকে বাজারে নিয়ে আসতে হবে। তাই এক্ষেত্রে ভালো কোম্পানিকে ইনসেনটিভ দিয়ে আনার আহবান জানান তিনি। বাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রাখার দাবি করেন তিনি।

দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আজম জে চৌধুরী, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান, এনবিআর’র সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবদুল মজিদ, বিডার নির্বাহী পরিচালক আমিনুল ইসলাম ও পিপিপির সিইও আলকামা সিদ্দিকী প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩৭ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৯
এসএমএকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।