ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজেট

ভর্তুকিতে বরাদ্দ বাড়ছে ১২ হাজার কোটি টাকা

গৌতম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৪ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৯
ভর্তুকিতে বরাদ্দ বাড়ছে ১২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকিতে বরাদ্দ বাড়ছে ১২ হাজার কোটি টাকা

ঢাকা: আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে। এসব খাতে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বরাদ্দ ছিল ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ বরাদ্দ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা বেড়ে হচ্ছে ৫০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। যা পদ্মাসেতুর মোট ব্যয়ের প্রায় দ্বিগুণ।

এর মধ্যে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি থাকছে ৩২ হাজার ১০০ কোটি টাকা, প্রণোদনা ১৫ হাজার কোটি টাকা, নগদ ঋণ সহায়তা থাকছে ৫ হাজার কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়লেও প্রণোদনা ও নগদ ঋণে বরাদ্দ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, আগামী ১৩ জুন (বৃহস্পতিবার) জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হবে। এবারের বাজেটের সম্ভাব্য আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এটি হচ্ছে বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট। একইসঙ্গে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেট।

মন্ত্রণালয়ে সূত্রে জানা যায়, নতুন বাজেটে ভর্তুকিতে বরাদ্দ বাড়ছে। চলতি অর্থবছরে এতে বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ১৯ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। বিপরীতে আগামী বাজেটে এটি বাড়িয়ে ৩২ হাজার ১০০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেওয়া হবে বিদ্যুৎখাতে। তবে জ্বালানি তেল আমদানিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে (বিপিসি) কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। বিদ্যুতে ভর্তুকির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এ খাতে ভর্তুকি রয়েছে ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর পরেই রয়েছে গ্যাসখাতের এলএনজি আমদানিতে ভর্তুকি, যার পরিমাণ ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

অন্যান্য খাতের মধ্যে খাদ্যখাতে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকির প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ৪ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ খাদ্যখাতে ভর্তুকি কমছে ১০৪ কোটি টাকা। এছাড়াও অন্যান্য খাতে মোট ভর্তুকি রাখা হচ্ছে ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে মোট ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রণোদনা চলতি অর্থবছরের মতো ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রাক্কলন করা হয়েছে। এর মধ্যে কৃষিখাতের জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। রফতানিতে নগদ প্রণোদনাও রাখা হচ্ছে ৪ হাজার কোটি টাকা। পাটের জন্য রাখা হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা।

পুনঃঅর্থায়ন: নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর খেলাপি ঋণের ভারে নুয়ে পড়া ব্যাংক খাত বাঁচাতে আবারো দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এই অর্থ মূলত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির পূরণে ব্যয় করা হবে।

এছাড়া নগদ ঋণখাতে চলতি অর্থবছরের সমপরিমাণ অর্থ অর্থাৎ ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ভর্তুকি যতো কম দেওয়া যায় ততো ভালো। তাহলে ভর্তুকির টাকাটা সরকার অন্য খাতে ব্যয় করতে পারতো। এতদিন ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছিলো প্রধানত বিদ্যুৎ, কৃষি, রপ্তানি, খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য ইত্যাদি খাতে। এবার নতুন করে দেওয়া হচ্ছে এলএনজিতে। কারণ, সরকার হিসাব করে দেখেছে, যে দামে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে, সেই দামে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের কাছে বিক্রি করলে তাদের পণ্য উৎপাদন খরচ বেশি পড়বে। তাই গ্যাস ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই সরকার এখানে ভর্তুকি দিতে যাচ্ছে। প্রকৃত দামের চেয়ে কম দামে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বিক্রি করতে হবে বলে নতুন বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। মোট ভর্তুকি বরাদ্দ বাড়ছে মূলত এলএনজির কারণেই। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণখাতে বাজেট বরাদ্দ খুব বেশি বাড়েনি। কারণ এসময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় একপ্রকার স্বস্তিতে ছিলেন অর্থমন্ত্রীও। বাজেট প্রণয়নের সময় ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে এ খাতে বরাদ্দ কমিয়ে আনার প্রবণতা দেখা গেছে। যেমন ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২৭ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা কমিয়ে করা হয়েছিল ২৫ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বরাদ্দ ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছর থেকে ভর্তুকিতে এলএনজি যুক্ত হওয়ায় এ খাতে বরাদ্দ বেড়ে গেছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বরাদ্দ ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, আগামী ১৩ জুন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের তৃতীয় মেয়াদে ১১তম জাতীয় সংসদে (২০১৯-২০ অর্থবছর) ১১তম বাজেট উপস্থাপন করবেন নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। জীবনের প্রথম বাজেট উপস্থান করবেন তিনি। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক জনতুষ্টির এই বাজেটের সম্ভাব্য বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটে ব্যয়ের পরিমাণ বাড়ছে ৫৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। সে হিসেবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার থেকে নতুন বাজেট ১২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের থেকে ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা বেশি। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি ছিল এক লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এছাড়া নতুন বাজেটে সম্ভাব্য মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা (জিডিপির ১৩.১ শতাংশ)। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) খাতে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা (জিডিপি’র ৬ দশমিক ৮ শতাংশ) ধরা হয়েছে। আসন্ন বাজেটে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী বাজেটে ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে নতুন ভ্যাট আইন ২০১২। রাজস্ব আওতা বৃদ্ধি এবং কর ফাঁকি রোধে অনলাইনে ভ্যাট আদায়ের অবকাঠামো তৈরি করা, ইসিআর মেশিন চালুসহ নানা পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনী ইশতেহার অনুসারে ‘আমার গ্রাম আমার শহর কর্মসূচি’ বাস্তবায়নে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১৩ লাখ বাড়িয়ে ৮৭ লাখে উন্নীত করাসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারি-বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়ানো চেষ্টা করা হবে। মেগাপ্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে বাজেটে বরাদ্দ বেশি রাখা হবে। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দশ উদ্যোগও এবারের বাজেটে গুরুত্ব পাচ্ছে। এছাড়া বাজেটে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী পালনের প্রতিফলন থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৩ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৯
জিসিজি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।