বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকেল ৩টায় বাজেট বক্তৃতা শুরুর ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট পর অর্থমন্ত্রী স্পিকারের কাছে ৫-৭ মিনিট সময় চান। এরপর আবার বক্তৃতা শুরু করেও তিনি অসুস্থতা বোধ করলে তার অনুরোধে স্পিকারের অনুমতিসাপেক্ষে বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী।
পড়ুন>> বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীকে বাজেট উপস্থাপনের জন্য অনুমতি দিতে অর্থমন্ত্রী স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘অসুস্থতার কারণে আমার পরিবর্তে বাজেট বক্তৃতার বাকি অংশটুকু প্রধানমন্ত্রী পড়ে শোনাবেন। এজন্য আপনার অনুমতি চাইছি। ’
তখন স্পিকার অনুমতি দিলে প্রধানমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতার বাকি অংশটুকু পড়া শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘আমি ও অর্থমন্ত্রী একই ধরনের অসুস্থতায়। একটু পরপরই চোখে ওষুধ দিতে হচ্ছে। কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে। আমি যতুটুক পারি পড়ে দিতে চাই। ’
বাজেট বক্তৃতার এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতা পড়ছি এবং আমি নিজেই আবার প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ’ তখন স্পিকার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, বাজেট বক্তৃতার যে সব জায়গায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেওয়া আছে, আপনি সব পড়বেন। ’
এর আগে কখনো অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা প্রধানমন্ত্রী পড়েননি। এবারই প্রথম শেখ হাসিনা সেই নজির গড়লেন।
এবারের বাজেটের আকার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। এবারের বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা।
বাজেটে ঘাটতি দাঁড়াবে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণ ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ উৎস হতে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে নেওয়া হবে ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এবারের বাজেটে বড় আকারের ব্যয় মেটাতে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ১৩ দশমিক ১ শতাংশের সমান।
এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আদায় করবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, এনবিআর বহির্ভূত কর আদায় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কর ছাড়া আদায় বা প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।
বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য হচ্ছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩৮ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে।
এটি অর্থমন্ত্রী হিসেবে মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেট। আর বাংলাদেশের ৪৮তম, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর চলতি মেয়াদের প্রথম ও টানা ১১তম বাজেট এবং সব মিলিয়ে ১৯তম বাজেট। এটি সংসদে পাস হবে ৩০ জুন।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে তাজউদ্দীন আহমদ ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। এ পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারের আমলে ১৫ জন অর্থমন্ত্রী (অর্থ উপদেষ্টা অথবা সামরিক আইন প্রশাসক) ৪৭টি বাজেট পেশ করেছেন।
সর্বোচ্চ ১২টি বাজেট দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে বিএনপির প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৯
এসকে/এমআইএইচ/এমইউএম/এসই/এইচএ/এমএ