বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে এ বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। তবে বাজেট পেশকালে মুস্তফা কামাল অসুস্থতা বোধ করায় তার পরিবর্তে বাজেট বক্তৃতার বাকি অংশ পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয় প্রস্তাবিত বাজেটটি। দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে বাজেটটি অনুমোদন করা হয়। এরপর প্রথা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংসদ অধিবেশন কক্ষে যান অর্থমন্ত্রী। তারপর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়।
অধিবেশনের শুরুতেই স্পিকারের অনুমতিসাপেক্ষে বাংলাদেশের বাজেট ইতিহাস নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করেন অর্থমন্ত্রী। এরপর তিনি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট বক্তৃতা করেন।
বিকেল ৩টায় বাজেট বক্তৃতা শুরুর ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট পর অর্থমন্ত্রী স্পিকারের কাছে ৫-৭ মিনিট সময় চান। এরপর আবার বক্তৃতা শুরু করেও তিনি অসুস্থতা বোধ করলে তার অনুরোধে স্পিকারের অনুমতিসাপেক্ষে বাজেট বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী।
এবারের বাজেটের আকার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। এবারের বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা।
বাজেটে ঘাটতি দাঁড়াবে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণ ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ উৎস হতে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে নেওয়া হবে ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এবারের বাজেটে বড় আকারের ব্যয় মেটাতে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ১৩ দশমিক ১ শতাংশের সমান। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আদায় করবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, এনবিআর বহির্ভূত কর আদায় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কর ছাড়া আদায় বা প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।
বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য হচ্ছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩৮ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে।
রাজস্ব আয় প্রসঙ্গে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে, তবে সেটা করের হার বাড়িয়ে নয়। বরং সেটা করতে হবে করের আওতা বিস্তৃত করে।
এই বাজেটকে ‘দেশের সব মানুষের জন্য’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে পার্বত্যাঞ্চল যেমন বাদ যায়নি, তেমনি বাদ যায়নি সমতল ও চরাঞ্চল। উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিমের কেউ বাদ পড়েনি। দেশের কৃষক, কামার-কুমার, জেলে, তাঁতী, ব্যবসায়ী, বেদে, বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী, হিজড়া, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ সব পেশার মানুষের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে এই বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীকে অবহিত করাটা প্রয়োজন মনে করছি যে, আমরা ২০১৯-২০ এর বাজেটটিতে দেশের জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে, তেমন কোনো উপকরণ অন্তর্ভুক্ত করিনি।
এটি অর্থমন্ত্রী হিসেবে মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেট। আর বাংলাদেশের ৪৮তম, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর চলতি মেয়াদের প্রথম ও টানা ১১তম বাজেট এবং সব মিলিয়ে ১৯তম বাজেট। এটি সংসদে পাস হবে ৩০ জুন।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে তাজউদ্দীন আহমদ ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। এ পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারের আমলে ১৫ জন অর্থমন্ত্রী (অর্থ উপদেষ্টা অথবা সামরিক আইন প্রশাসক) ৪৭টি বাজেট পেশ করেছেন।
সর্বোচ্চ ১২টি বাজেট দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে বিএনপির প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৯
এসকে/এমআইএইচ/এমইউএম/এসই/এইচএ
** অর্থমন্ত্রীর অনুরোধে বাজেট পেশ করছেন প্রধানমন্ত্রী