ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বাজেট

নতুন বিষয়ে বিদেশ থেকে শিক্ষক আনতে চান অর্থমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২১ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৯
নতুন বিষয়ে বিদেশ থেকে শিক্ষক আনতে চান অর্থমন্ত্রী

ঢাকা: নুতন এমপিওভুক্তির মাধ্যমে শিক্ষায় গতিশীলতা সৃষ্টি করতে চান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে শিক্ষক আনতে চান অর্থমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) জাতীয় সংসদে চলতি অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ বাজেটের আকার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।


 
নতুন এমপিওভুক্তি
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ‘সুসংবাদ’ দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নানাবিধ কারণে এমপিওভুক্তি কার্যক্রমটি বন্ধ ছিল। এবারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনায়, দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ থাকা এমপিওভুক্তি কার্যক্রমের জন্য এ বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান রাখা হয়েছে।
 
অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন আমাদের ছাত্র-ছাত্রীর ঘাটতি নেই। ঘাটতি দেখা দিয়েছে উপযুক্ত এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষকের। প্রাথমিক স্তর থেকে শিক্ষার সর্বস্তরে আমাদের উপযুক্ত এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষকের কাছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে হস্তান্তর করতে চাই। শিক্ষার সব স্তরের জন্য উপযুক্ত শিক্ষক বাছাইকরণ, তাদের প্রশিক্ষণ, সময়োপযোগী শিক্ষার বিষয়ে বস্তু নির্ধারণ এখন একান্তই সময়ের দাবি। আমাদের সরকার এ বছর থেকে এসবের বাস্তবায়ন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
 
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব এখন তৃতীয় শিল্প বিপ্লব থেকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে উত্তরণের পথে। বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদেরও তৈরি হতে হবে। না হলে সামনে অগ্রসর হওয়া আমাদের জন্য দুরূহ হবে। তাই আমাদের ক্লাসরুমগুলো বিষয় উপযোগী করে তুলতে হবে। যেখানে শেখানো হবে ন্যানো টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, রোবোটিক্স, অর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ম্যাটেরিয়াল সাইন্স, ইন্টারনেট অব থিংস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, ব্লকচেইন টেকনোলজি ইত্যাদি। এ সব বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। প্রধানমন্ত্রী নিজেও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন।
 
জাপানের সম্রাট মেইজির একটি ঘটনা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, উল্লিখিত বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার জন্য জাপানের সম্রাট মেইজি মতো আমাদেরও প্রয়োজন মেটাতে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে শিক্ষক নিয়ে আসতে হবে। এ সব কার্যক্রম আমরা কাল থেকেই শুরু করতে চাই এবং সেজন্য ২০১৯-২০ অর্থবছর হতে আমরা শিক্ষাখাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ রাখছি।
 
সংখ্যা নয়, মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা
প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের সামনে এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ প্রাথমিক পর্যায়ে মান উন্নয়ন ও প্রায়োগিক শিক্ষার প্রসার ঘটানো।
 
তিনি বলেন, দারিদ্র্যের কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয় গমনোপযোগী শিশুর শিক্ষা যাতে ব্যাহত না হয় সে লক্ষ্যে উপবৃত্তি প্রদান চলমান থাকবে। বিদ্যালয়সমূহের অবকাঠামো নির্মাণ, নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে সারাদেশে মৌলিক স্বাক্ষরতা পরিচালনা এবং আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার ঘটানো হবে। প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের দেশি-বিদেশি যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক বিশ্বের সমতুল্য করে তোলা হবে।
 
স্কুল ফিডিং, আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার ক্যাপাসিটি উন্নয়ন, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ডিজিটাল প্রাথমিক শিক্ষা শীর্ষক একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৫০৩টি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইন্টারঅ্যাকটিভ ক্লাসরুম তৈরি করা হবে।
 
পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানসমূহে কম্পিউটার ও আইসিটি সামগ্রী সরবরাহ; বিনামূল্যে বই বিতরণ এবং উপবৃত্তি কার্যক্রম অব্যাহতসহ উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
 
২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রাথমিক শিক্ষা খাতে ২৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ২০ হাজার ৫২১ কোটি টাকা।
 
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা
মানসম্মত মাধ্যমিক শিক্ষার সম্প্রসারণে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, অনগ্রসর এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি দেওয়া অন্যতম। মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে ৫ বছর মেয়াদে মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এর আওতায় ছাত্র-ছাত্রীদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত শিক্ষায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী।
 
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২.৬৭ লাখ শিক্ষককে বিগত দুই অর্থবছরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং চলতি অর্থবছরে ১.০৩ লাখ এবং আইসিটি বিষয়ে ৩.১৩ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া কাজ চলছে।
 
মাধ্যমিক শিক্ষা অবকাঠামো নির্মাণ ও শিক্ষা উপকরণ
২০১৯-২০ অর্থবছরে শুধুমাত্র মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা খাতে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা বর্তমান ২০১৮-১৯ অর্থবছরের উন্নয়ন বরাদ্দের তুলনায় ৫৪ শতাংশ বেশি।
 
২০১৯-২০ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খাতে ২৯ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। যা বর্তমান ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ২৫ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা ।
 
কর্মসংস্থানবান্ধব কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা
মানসম্পন্ন কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকার আইসিটি খাতসহ বিকাশমান প্রযুক্তিসমূহের কারিগরি জনশক্তির প্রয়োজন মেটাতে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা কর্মসূচিতে বৈচিত্র্য আনয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
 
মাদাসা শিক্ষা
সরকার মাদাসা শিক্ষার উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মাদ্রাসাগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন ও শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়া স্থাপন করা হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য কমানোর লক্ষ্যে দাখিল ও ইবতেদায়ী স্তরে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে। দেশে ১ হাজার ৮০০টি মাদ্রাসার নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
 
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেন। গত অর্থবছরে ছিল ৫ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা।
 
বর্তমানে ২৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। আগামী ২০১৯- ২০ অথবছরে এ বাবদ মোট বরাদ্দ ৮৭ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, যা মোট বাজেট বরাদ্দের ১৬.৭৫ শতাংশ এবং জিডিপির ৩.০৪ শতাংশ।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৯
এমআইএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad