ঢাকা, রবিবার, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫

ক্যারিয়ার

কাজের জন্য চাই সুন্দর কর্মপরিবেশ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৯ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৮
কাজের জন্য চাই সুন্দর কর্মপরিবেশ

'একজন মানুষ কখনোই অন্যকে উৎসাহ দিতে পারে না যতক্ষণ না পর্যন্ত সে নিজেকে উৎসাহিত না করে' কথাটি আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। সেলফ মোটিভেশন বা আত্মোৎসাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

'একজন মানুষ কখনোই অন্যকে উৎসাহ দিতে পারে না যতক্ষণ না পর্যন্ত সে নিজেকে উৎসাহিত না করে' কথাটি আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। সেলফ মোটিভেশন বা আত্মোৎসাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

কিন্তু এটি সত্যিই খুব কঠিন হয় যদি আশেপাশের পরিবেশ তার অনুকূলে বা নিয়ন্ত্রণে না থাকে। কর্মস্থলে একটি প্রতিষ্ঠানের টিম ম্যানেজার এবং উচ্চপদস্থ ব্যবস্থাপনা কমিটি বিভিন্ন ভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুপ্রাণিত করতে পারেন।

একটি সুন্দর কাজের পরিবেশ কর্মচারীদের কাজ করার ইচ্ছার যেমন যোগান দেয়, তেমনি ভাবে কাজের প্রতি তাদের উৎসাহ বাড়ায়। প্রধানত দলীয় কাজের ক্ষেত্রে এগুলো বেশ ফলপ্রসূ হয়। কিভাবে আপনার টিমকে অনুপ্রাণিত করবেন এবং একটি অত্যাবশ্যকীয় ও কাজ করার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করবেন, তার কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করা যাক।

সকলের কাজই অর্থবহ:
এটি কেবলমাত্র কাজের দায়িত্ব সম্পর্কে নয় বরং এটি হচ্ছে কোম্পানির দৃষ্টিভঙ্গি ও লক্ষ্য সম্পর্কে। আর এ সকল লক্ষ্যের দিকে এগোনোর ক্ষেত্রে কোম্পানির সকল কর্মচারীদের একটি স্বচ্ছ ধারণা থাকা উচিত এবং সেটি বাস্তবায়নে নিজেদের দায়িত্ব ও কাজ সম্পর্কে অবগত থাকা প্রয়োজন। লক্ষ্য নির্ধারণ একটি স্বচ্ছ এবং বিস্তর ধারণার যোগান দেয় এবং কর্মীদের বুঝতে সাহায্য করে কোন লোকটি ঠিক কোন কাজ করার উপযোগী হবে। আর কোনো ফলপ্রসূ কাজই হলো কোনো কর্মচারীর জন্য সর্বোচ্চ স্বীকৃতি। কারণ কাজটি যদি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে তবেই সেই কাজটি যে করেছে তাকে বাদ দেওয়াটা কর্তৃপক্ষের জন্য সত্যিই অসম্ভব।

যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন ভাতা:
যখন আপনি আপনার কর্মচারীদের বেতন নির্ধারণ করবেন, নিশ্চিত হোন যে তা তাদের জন্য যথেষ্ট এবং তা আপনার সমতুল্য বা একই ধরনের যে কোম্পানিগুলো রয়েছে তারা এই পদের জন্য যে বেতন নির্ধারণ করতেন তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রায় ২৬ শতাংশ চাকরিরত লোক তাদের চাকরি নিয়ে অসন্তুষ্ট এবং তারা তাদের চাকরিটি ছেড়ে দিতে চায় কেবলমাত্র ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির জন্য। শুধুমাত্র কম বেতন দেওয়ার কারণে কখনোই আপনার কোম্পানির দক্ষ লোকগুলোকে হারাবেন না।

কাজের জন্য একটি সুস্থ এবং সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখুন:
কাজ করার পরিবেশ এবং কোম্পানির ধরণ বা বৈশিষ্ট্যও হতে পারে অনুপ্রেরণা যোগানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম কিংবা সবাইকে নিরুৎসাহিত করবার কারণ। কর্মক্ষেত্রে কেউই হিংসা, তথ্যের অপপ্রচার, কারোর সঙ্গে মতের বিরোধ বা সংঘর্ষ পছন্দ করেন না। কিন্তু কখনো কখনো এগুলোকে প্রতিরোধ করা সত্যিই খুব কঠিন। এ পর্যায়ে একজন দলনেতার দায়িত্ব হচ্ছে কাজের পরিবেশ বিঘ্ন ঘটায় এমন কারণগুলোকে চিহ্নিত করে তা যথাসম্ভব দূর করতে চেষ্টা করা এবং যদি কোনো মতবিরোধ হয়ে থাকে দলের অধীনস্থদের মধ্যে তা সমাধানের চেষ্টা করা। সেই সঙ্গে এটাও একজন দলনেতার জন্য জরুরী যেন তার অধীনস্থ লোকদের পারস্পারিক বিশ্বাস ও ভরসা পুনরায় ফিরে আসে। এছাড়াও আরো যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো সকল ধরনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অব্যবস্থাপনাগুলো এড়ানো। কারণ এটি কর্মচারীদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যে আত্মবিশ্বাস প্রয়োজন হয় তা নষ্ট করে।
 
কেউই এখন সেই বসকে পছন্দ করে না, যে সবসময় কেবল নিজেই সিদ্ধান্তই গ্রহন করে এবং নিজ সিদ্ধান্তকে সবসময় শ্রেষ্ঠ বলে দাবী করে। একটি জরিপে অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, ৩৮ শতাংশ কর্মকর্তা কর্মচারী বলেছেন তারা তাদের বসের সঙ্গে কাজ করার চাইতে অপ্রীতিকর কিছু করাটাই পছন্দ করবেন, যা কোনো কোম্পানীর জন্য কখনোই সমীচীন নয়।
আপনার কর্মচারীদের লক্ষ্য সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা দিন, তারপর তাদেরকে তা অর্জনের সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়টি খুঁজে নেওয়ার সুযোগ দিন। মনে রাখবেন, একটি সুন্দর কাজের পরিবেশ তৈরি করতে খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন পড়বে না, প্রয়োজন পড়বে আপনার স্বচ্ছ ও উদার মানসিকতার।

উন্নয়ন এবং আত্মোন্নয়নের সুযোগ প্রদান:
পেশাদার দক্ষতা এবং নতুন সব দক্ষতা উন্নয়ন একটি নিরেট অনুপ্রেরণা প্রদানকারী কারণ হতে পারে। নিশ্চিত করুন আপনার সকল কর্মচারী একটি নিদিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি তার কোম্পানি এবং দলের মধ্যে দেখতে পাচ্ছে বা খুঁজে পাচ্ছে। আপনার টিম মেম্বাররা কি চাইছে তা জানার চেষ্টা করুন। যখনই সম্ভব চেষ্টা করুন তাদেরকে যোগ্যতার উন্নতি, কর্মজীবনের অগ্রগতি এবং নতুন যোগ্যতা বৃদ্ধির সুযোগ দিতে। যখন কর্মচারীরা নতুন কিছু দেখার সুযোগ পাবে তখন তারা ধীরে ধীরে নিজেদের জন্য এবং সংগঠনের জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তাদের নিজেদের কর্মজীবনের উৎকর্ষ সাধনের জন্য যে সকল সুযোগ প্রয়োজন তা প্রদান করুন এবং আধুনিক প্রযুক্তি এবং শিল্প সংবাদ সম্পর্কে জানতে সাহায্য করুন।

আপনার টিম মেম্বারদের কথা শুনুন:
সকল দলনেতারই তাদের কাজের পেছনে নিজস্ব কিছু কারণ রয়েছে যা তারা করছেন (অর্থের বাইরেও) যেমন সহনীয় সময়সূচি, বোনাস, ভ্রমণে সুযোগ, বা ভ্রমণ না করা ইত্যাদি। সকল সম্ভাব্য কারনগুলোর মধ্যেই শেখা এবং পেশাদার বৃদ্ধি অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া কর্মচারীদের চাহিদা এবং সে অনুযায়ী সুযোগ প্রদান তাদের অনুপ্রেরনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চিনুন এবং প্রশংসা করুন:
নিশ্চিত করুন যে, আপনার দলীয় সদস্যদের ভালো কাজগুলোকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং তাদের ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করা হচ্ছে। দলের সবাইকে একত্রে প্রশংসা করার থেকে প্রত্যেককে আলাদাভাবে তাদের কৃতিত্ব এবং অর্জনের উপর ভিত্তি করে প্রশংসা করুন। এটি দলের কর্মচারীদের নিজেদের আরো বেশি কাজ করতে উৎসাহিত করবে এবং দলের কাজের মান বৃদ্ধিতে অনুপ্রাণিত করবে।

এক জরিপে দেখা যায়, ৩৯ শতাংশ কর্মচারী অনুভব করেন তাদের কাজ যথেষ্ট পরিমানে প্রশংসিত হচ্ছে না। আপনার দলের লোকদের সাহস যোগান যাতে করে তাদের প্রত্যেক কর্মক্ষেত্রে নিজেদের সবটুকু প্রচেষ্টা প্রয়োগ করে এবং এবং পরামর্শ গ্রহন করে। যাতে কীভাবে যে কোনো কাজ আরো সুন্দরভাবে সম্পাদন সম্ভব হয়। প্রশ্ন করুন, তাদের উত্তর শুনুন এবং যখনই সম্ভব তাদের সমাধানের উপায়গুলো বাস্তবে প্রয়োগ করুন।

কর্মচারীদের খুশি থাকাকে উৎসাহিত করুন:
প্রাণোজ্জ্বল কর্মচারীরাই মূলত কোনো কোনো টিমের সব থেকে উদ্যমী এবং ইতিবাচক মনোভাবের সদস্য, এবং তাদের আচরণ এক অর্থে সংক্রামক। আপনার কর্মচারীরা আপনার প্রতি, তার নিয়োগকর্তার প্রতি এবং তার কাজের প্রতি খুশী কিনা সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখুন। কিন্তু যদি কেউ খুশী না থাকে, তবে আপনি আপনার দলীয় সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ার পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না।

দলের সঙ্গে কথা বলুন এবং অকারণে মিটিং এড়িয়ে চলুন:
সঠিক কথোপকথন বা যোগাযোগের অভাবে দলের যে কোনো কাজ কতখানি দূর্বল করে তা আলাদাভাবে বলার প্রয়োজন রাখে না। তাই অবশ্যই আপনাকে আপনার সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, যাতে করে তারা সহজভাবে তাদের কাজ সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য আপনাকে দিতে পারে এবং তাদের কাজের ফলাফলের প্রতিক্রিয়া তাদের দিতে পারে। দক্ষ যোগাযোগ প্রবাহ তৈরি করুন এবং সেই সকল পন্থা প্রহন করুন যা আপনার দলের প্রয়োজন পূরনে সক্ষম হবে। কিন্তু কখনোই অকারণে মিটিং ডাকবেন না। কারন অহেতুক মিটিং কাজ করার সময় নষ্ট করার একটি ভয়াবহ কারন হতে পারে। দেখা যায়, প্রতি সপ্তাহে কর্মচারীরা এ সকল অহেতুক মিটিংয়ের জন্য ৩-৪ ঘন্টা সময় নষ্ট করেন। তাই আগে থেকেই আপনার মিটিংগুলোর একটি এজেন্ডা তৈরি করুন এবং সে সম্পর্কে কর্মচারীদের জানান। কেবলমাত্র তাদেরকেই মিটিংয়ে অংশ নিতে ডাকুন যাদের মিটিংয়ে সত্যিই প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে মিটিং শুরু করুন এবং যত দ্রুত সম্ভব তা শেষ করুন।

পুরস্কার প্রদান করুন:
যেকোনো কাজের জন্য পুরস্কার প্রদান কর্মীদের অনেক বেশি উৎসাহ প্রদান করে এবং কাজে ব্যস্ত রাখার উদ্দীপনা হিসাবে কাজ করে। তাই একটি পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহন করুন যা আপনার কোম্পানীর দক্ষ এবং সক্রিয় কর্মীদের উৎসাহিত করতে সাহায্য করবে।

স্বচ্ছ লক্ষ্য স্থাপন:
একটি আর্ন্তজাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, প্রায় ৬৩ শতাংশ কর্মী জানিয়েছেন, তারা তাদের কাজের অনেক সময়  অকারণে নষ্ট করেছেন কারণ তারা জানতেন না কোন কাজটি ছিল বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনটি কম প্রয়োজনীয়। একজন দলনেতার গুরুদায়িত্ব হলো তার দলে একটি স্বচ্ছ ও স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া। আর যদি আপনি তা করতে চান তবে নিশ্চিত করুন সকলেই সেই লক্ষ্য সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পোষণ করেছেন এবং বুঝতে পারছেন তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কী। এবং সেই সঙ্গে নিশ্চিত করুন যেন তারা বুঝাতে পারেন তাদের আপেক্ষিক অগ্রাধিকার কি এবং দলীয় ভূমিকা আদৌ তাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে না কি।

এগুলো ছাড়া উৎসাহ ও অনুপ্রেরণামূলক কর্মপরিবেশ তৈরি সম্ভব যেখানে কর্মচারীরা প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত হবে এবং ব্যস্ত থাকবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে কেবল সেই কাজগুলোই করুন যা আপনার দলের জন্য ফলপ্রসূ এবং উপযুক্ত হবে। না হলে সবই পন্ডশ্রম হয়ে দাঁড়াবে। আর এসকল কারণেই প্রেরণামূলক প্রক্রিয়াকরণ এবং পদ্ধতিগুলো দলের অধিক উৎপাদনশীলতা এবং কর্মক্ষমতা উন্নয়নের জন্য আবশ্যক।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৮
আরএএ/এডিবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।