ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের সশন্ত্র সংগ্রামের উত্তরসূরী বাংলার জনগণ পরিবেশ রক্ষায় কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পরিবেশ আন্দোলনের নেতারা। বলেছেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে জনজীবনে সংকটে বাড়ছে।
শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পরিবেশ সমাবেশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) আয়োজিত পরিবেশ সমাবেশের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বাপার সহ-সভাপতি ও বেনের প্রতিষ্ঠাতা ড. নজরুল ইসলাম।
সোনার বাংলায় পরিবেশ বিপর্যয় কেন, এই প্রশ্ন উত্থাপন করে তিনি বলেন, পরিবেশ রক্ষায় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও তা যথেষ্ট নয়। এ বিষয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও বেশি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ পরিবেশের এই বিপর্যয়ে বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলছে। এটিই এখন সর্বোচ্চ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
প্রথমবারের মতো আয়োজিত সমাবেশের উদ্বোধক অধ্যাপক রেহমান সোবহানের পাঠানো লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অধ্যাপক এম এম আকাশ।
তিনি বলেন, পরিবেশ রক্ষার এই আন্দোলন দীর্ঘদিনের। এই আন্দোলন করতে গিয়ে লোভী, নীতিহীন ও ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়েছে। অনেক সময় ওইসব অসাধু চক্র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ব্যবহার করেছে। আগামীতেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রয়োজন হবে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় লড়াই অব্যাহত রাখতে বাপা ও বেনকে আরও সক্রিয় হতে হবে।
পরিবেশ সমাবেশের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আক্তারুজ্জামান। তিনি বলেন, পরিবেশ সুরক্ষায় গণসচেতনতা জরুরি। সেক্ষেত্রে আজকের এই সমাবেশ বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণ ও ক্ষতিপূরণ আদায়ে বিশ্ব দরবারে বিশেষ ভূমিকা রেখে প্রশংসিত হয়েছেন। যা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা ও পরিবেশ সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, আমাদের বন ও নদীকে বাঁচাতে হবে। তা না হলে সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। যেখান থেকে নদী মরে যায়, সেখান থেকে সভ্যতাও সরে যায়। আমরা অবশ্যই উন্নয়ন চাই, কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে নদ-নদী ও বনায়নকে সঙ্গে নিয়ে। রাজধানী ঢাকা শহরের যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে এটি মোটেও পরিবেশবান্ধব নয়।
জনজীবনে বিপর্যয় নেমে আসে এমন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ না করার দাবি জানিয়ে অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশের অব্যাহত বিপর্যয়ের কারণে সংকট প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এরপর পরিবেশবাদিদের সুপারিশ উপেক্ষা করে জনস্বার্থ বিরোধী প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। যে কারণে মানুষের বেঁচে থাকার সমস্যাই এখন বড় সমস্যা।
পরিবেশ সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও বাপার সহ-সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও বাপার সহ-সভাপতি অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদ, বাপার সহ-সভাপতি অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদার, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সহ-আহ্বায়ক ও বেন এর বৈশ্বিক সমন্বয়ক ড. মো. খালেকুজ্জামান, বাপা সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, বেলার নির্বাহী পরিচালক রেজওয়ানা হাসান।
পরিবেশ সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় সমাবেশের শুরুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন বাপা মোংলা শাখার আহ্বায়ক মো. নূর আলম শেখ। এর আগে বেলুন উড়িয়ে এবং পরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়।
দিনব্যাপী সমাবেশ শেষে শনিবার (১৪ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতাহার হোসেন ভবনে ‘বাংলাদেশের হাওর, নদী, ও বিল: সমস্যা ও প্রতিকার’ বিষয়ক বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। দুই দিনের এই কর্মসূচিতে সারাদেশের পরিবেশ আন্দোলনের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২৩
টিএ/এমএমজেড