ঢাকা, বুধবার, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বায়ুদূষণ রোধে সরকার ব্যর্থ: সবুজ আন্দোলন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩
বায়ুদূষণ রোধে সরকার ব্যর্থ: সবুজ আন্দোলন

ঢাকা: দিন যত যাচ্ছে বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয় ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে বায়ুদূষণ রোধে সরকার চূড়ান্ত উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে, এতে সাধারণ জনগণের মনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের উদ্যোগে রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে ক্যাফে ধানসিঁড়িতে ত্রি-মাসিক কর্মপরিকল্পনা ও বর্ধিত সভায় বক্তারা এমন অভিযোগ করেন।

সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদারের সভাপতিত্বে অতিথি আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সবুজ আন্দোলনের উপদেষ্টা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল কুদ্দুস বাদল, অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মেজবাউদ্দীন জীবন চৌধুরী, সবুজ আন্দোলন পরিচালনা পরিষদের অর্থ পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন রুপা, পরিচালক অধ্যক্ষ নাদিয়া নূর তনু, অভিনেতা উদয় খান।

অনুষ্ঠানের সভাপতি বাপ্পি সরদার বলেন, বায়ুদূষণ রোধে বর্তমান সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ, সেই সাথে নেই কোনো কর্মপরিকল্পনা। যার ফলে প্রত্যেকটি বিভাগীয় শহরে সাধারণ জনগণকে পড়তে হচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। যুক্ত হতে হচ্ছে মৃত্যুর মিছিলে। বায়ুদূষণে গড়ে প্রতিবছর বাংলাদেশে ৮০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। যে কোনো সমস্যার থেকে সরকারের উচিত বায়ুদূষণসহ সকল প্রকার দূষণ রোধে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা। বায়ুদূষণের ফলে মাথাব্যথা, বমি, শ্বাসকষ্ট, চোখ ও গলার ক্ষতি, রক্তে অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতা কমে যাওয়া, এ্যাজমা, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়জ্যেষ্ঠ মানুষ। ঢাকা শহরে মেট্রোরেল, নির্মাণাধীন বিল্ডিং, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, শহরের চারপাশ দিয়ে ইটভাটা, মেডিকেল, কারখানা, মনুষ্যসৃষ্ট বর্জ্যের কারণে অতিরিক্ত বায়ুদূষণ দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা শহর বায়ুদূষণের নগর হিসেবে উঠে এসেছে এক নম্বরে।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প করছে, আমরা অবশ্যই সাধুবাদ জানাই কিন্তু সকল উন্নয়নই জনগণের জন্য। সুফলের চেয়ে যদি কুফল বেশি হয় তাহলে তার সমাধান খুঁজতে হবে। আমরা অবশ্যই সরকারের পাশে আছি। সবুজ আন্দোলন সব সময় জনগণের জন্য কাজ করছে। প্রত্যেকটি ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করলে বায়ুদূষণসহ সকল প্রকার পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব।

বায়ুদূষণ রোধে সুবজ আন্দোলনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো: ঢাকার চারপাশের শহরগুলোকে নগরায়ন সুবিধার মাধ্যমে ঢাকা সিটির জনসংখ্যা কমানো। শহরের চারপাশজুড়ে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইটভাটা বন্ধ করে পরিবেশ বান্ধব ভাটা চালু এবং উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। সরকারের সকল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতি করলে তাদেরকে জরিমানার আওতায় আনা এবং  সকাল-বিকাল নির্মাণাধীন প্রকল্প এলাকায় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে বাধ্য করতে হবে। ঢাকা শহরের চারপাশের নদী বন্দরের ব্যবহার বাড়ানো এবং নদীর চারপাশ দিয়ে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা। আবাসন কোম্পানিগুলোতে ২৫ ভাগ সবুজায়ন নিশ্চিত করে প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধ্য করতে হবে। অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করা এবং গাড়ি চলাচলে জোড় বিজোড় সংখ্যা চালু করে একদিন পরপর রাস্তায় গাড়ি নামাতে বাধ্য করতে হবে। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করে শহরের বাইরে ময়লা রাখার জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে। শহরের মধ্যে অবস্থিত সকল প্রকার শিল্প কলকারখানা বিশেষ করে গার্মেন্টস ও কেমিক্যালের কারখানা বন্ধ এবং হাসপাতালের ক্ষতিকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যত্রতত্র না ফেলতে তদারকির ব্যবস্থা করা।

প্রত্যেকের বাসার ছাদে এবং মার্কেট ও দোকানের সামনে গাছের টবের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সরকার ও সকল পরিবেশবাদী সংগঠনের সমন্বয়ে এস্টেক হোল্ডার বডি তৈরি করতে হবে। প্রতিদিন দুইবার রাস্তা ঝাড়ু দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং অন্তত একদিন পরপর রাস্তা পানি দিয়ে ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি খরচে প্রত্যেকটি গণমাধ্যমে পরিবেশ বিপর্যয় রোধে জনসচেতনতা তৈরিতে বিজ্ঞাপন প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৩
এমএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।