ঢাকা, শুক্রবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

সিলেটে ২৪ ঘণ্টায় ২৯৪ মি.মি বৃষ্টি

৫ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ওপরে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০২৪
৫ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ওপরে

সিলেট: সিলেটে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে সোমবার (১ জুলাই) দিন ও রাতে। ডুবেছে রাস্তাঘাট, নগরের বিভিন্ন এলাকায় ওঠেছে পানি।

তবে মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল থেকে বৃষ্টি হয়নি। আকাশে কখনো রোদকে আড়াল করে ভাসছে মেঘের ভেলা। কিন্তু বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং ক্রমশ, এ অঞ্চলের বাড়ছে নদ-নদীর পানি।   

গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ২৯৪ মিলিমিটার। আর ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করলেও কুশিয়ারা নদী ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কুশিয়ারা নদীর পানি পাঁচটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। কেবল পাহাড়ি নদী সারিগোয়াইনের পানি বিপৎসীমার তিন সেন্টিমিটার ওপরে অবস্থান করছে।  

ফলে উজানে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেছে কুশিয়ারা নদী। আবারও প্লাবিত হয়েছে কুশিয়ারার তীরবর্তী জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা ও বালাগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা। আর মৌলভীবাজারের বড়লেখা ও জুড়ি উপজেলা হয়ে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি নদী জুড়ি, কন্টিনালা, ফানাই, আন ফানাই ও সোনাইনদীর পানি সরাসরি হাকালুকি হাওরে এসে পড়ছে। ফলে হাওর তীরবর্তী ছয়টি উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি লোকজনের সংখ্যা বাড়ছে।  

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য মতে, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় কুশিয়ার নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিল ৮৮ সেন্টিমিটার। গত বন্যার পর কুশিয়ারার পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটারে নেমে আবারও বেড়ে যায়। আজ দুপুর ১২টায় জকিগঞ্জের অমলশীদ পয়েন্টে ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়া একই সময়ে শেরপুরে কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  

এছাড়া গোয়াইনঘাটে সারিগোয়াইন নদীর পানি বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহমান রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় পর্যন্ত জৈন্তাপুর সারিঘাটে সারি নদীর বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আজ সেটি বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার নিচে নেমে এসেছে।  

আর গত ২৩ জুন থেকে ভারী বর্ষণে কুশিয়ারার পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বেড়ে ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তখন কেবল কুশিয়ারার চারটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। এ কয়দিন ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি না হওয়া ও দেশে বৃষ্টি কম হওয়াতে কুশিয়ারার ফেঞ্চুগঞ্জ ব্যতীত অন্যান্য পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে আছে। আর ফেঞ্চুগঞ্জে ধীরগতিতে সোমবার (১ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত পানি কমে গিয়ে বিপৎসীমার ৮১ সেন্টিমিটার ওপরে অবস্থান করছিল। কিন্তু আবহাওয়ার পূর্বাভাসের গতকাল সকাল থেকে হওয়া ভারী বর্ষণে কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যে কারণে উপর্যুপরি বন্যার মোকাবিলা করছেন ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জসহ কুশিয়ারার তীরবর্তী উপজেলার বাসিন্দারা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন বলেন, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) সিলেটে ২৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর সোমবার বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত মাত্র ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আগের দিন সোমবার ১২ ঘণ্টায় (সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত) বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১৫৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার। আজ সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ দেখানো হয়েছে তিন মিলিমিটার।  

আগের দিন সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত ভারী বর্ষণে নগরের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে বাসা-বাড়িতে ওঠেছে পানি। এছাড়াও উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মানুষজন আবারও ছুটছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।  

সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, গতকাল পর্যন্ত জেলায় ১৩টি উপজেলায় এখনো ৭ লাখ ৩ হাজার ৩৬ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। ৬৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্রের ১৯৫টিতে আশ্রিত আছেন ৯ হাজার ৫৯৮ জন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘন্টা, জুলাই ০২, ২০২৪
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।