ঢাকা: চলছে কালবৈশাখীর মৌসুম। আগামী জুন পর্যন্ত হতে পারে বজ্রঝড়ও।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) দেশের পাঁচ জেলায় অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে মাঠে মারা গেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও আবহাওয়া অফিস বলছে, বজ্রপাতের সময় বা কালো মেঘ দেখলেই ঘর থেকে না বেরোনোই হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ। তবে প্রয়োজনে বাইরে বেরোতে হলে বেশ কিছু পরামর্শ মেনে চলতে বলা হয়েছে।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপ্রিল-জুন মাসে বজ্রবৃষ্টি বেশি হয়; বজ্রপাতের সময়সীমা সাধারণত ৩০-৪৫ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করাই উত্তম।
এ ছাড়া ঘন কালো মেঘ দেখা দিলে ঘরের বাইরে হবেন না; অতি জরুরি প্রয়োজনে রবারের জুতা পড়ে বাইরে বেরোতে পারেন। বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, খোলা মাঠ অথবা উঁচু স্থানে থাকবেন না। ধানক্ষেত বা খোলা মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকুন। যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন।
টিনের চালা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। উঁচু গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার বা ধাতব খুঁটি, মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন।
এ ছাড়াও আকাশে কালো মেঘ দেখা দিলে নদী, পুকুর, ডোবা বা জলাশয় থেকে দূরে থাকুন। বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতর অবস্থান করলে, গাড়ির ধাতব অংশের সাথে শরীরের সংযোগ ঘটাবেন না; সম্ভব হলে গাড়িটি নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন।
বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি ও বারান্দায় থাকবেন না। জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের ভেতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন।
মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ল্যান্ডফোন, টিভি, ফ্রিজসহ সব বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন এবং এগুলো বন্ধ রাখুন।
বজ্রপাতের সময় ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করতে পারবেন।
বজ্রপাতের সময় শিশুদের খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখুন এবং নিজেরাও বিরত থাকুন।
বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ ধরতে যাবেন না, তবে এ সময় সমুদ্র বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করুন। বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির ধাতব রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না।
প্রতিটি বিল্ডিংয়ে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন। খোলা স্থানে অনেকে একত্রে থাকাকালীন বজ্রপাত শুরু হলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে সরে যান। কোনো বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সবাই এককক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে যান।
বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মত করেই চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে বা হাসপাতালে নিতে হবে। বজ্র আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদ স্পন্দন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, বজ্রপাতে হটস্পট বলা হচ্ছে দেশের মধ্যাঞ্চল। বিশেষ করে মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লা এসব অঞ্চলে এবং জামালপুর, সিরাজগঞ্জসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে বজ্রপাত বেশি হচ্ছে।
আবাহওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন বলেন, বজ্রপাতের অন্যতম কারণ হচ্ছে তাপপ্রবাহ ও পশ্চিমা লঘুচাপের মিশ্রণ। অর্থাৎ দক্ষিণের গরম বাতাস আর পশ্চিমা লঘুচাপের মিশ্রণের কারণে প্রচুর বজ্রমেঘের সৃষ্টি হয়। মেঘের মধ্যে থাকা ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জের গঠন ও পরিবহনের ফলে বজ্রপাত হয়।
কারো ওপর বজ্রপাত হলে, সেটা থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় নেই। তবে বজ্রপাত যাতে এড়িয়ে চলা যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে।
এ ছাড়া বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড স্থাপন মৃত্যু কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে খোলা মাঠে কিংবা ভবনের ছাড়ে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন করা হয়।
ইইউডি/এএটি