ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বিলুপ্ত দেশি ভালুক

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০১৪
বিলুপ্ত দেশি ভালুক ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: একটি বড় ধরনের জরিপ প্রকল্পে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে দেশি ভালুক (শ্লথ বিয়ার- বৈজ্ঞানিক নাম- মেলারসাস উরসিনাস) চিরতরে হারিয়ে গেছে।

বর্তমানে এই ভালুকের অস্তিত্ব আর বাংলাদেশে নেই।

এমনকী একটি ভালুকও আজ পর্যন্ত আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংরক্ষণবাদী গবেষকরা এক জরিপের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছেন।

সায়েন্স ব্লগ ‘সায়েন্টিফিক আমেরিকান’-এ ৪ অক্টোবর  ‘শ্লথ বিয়ারস কনফার্মড এক্সটিংক্ট ইন বাংলাদেশ’ নামে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষকেরা জানাচ্ছেন, হয়ত একসময় ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশে শ্লথ ভালুক পরিবেশে ফিরে আসতে পারে। তবে এখন শ্রীলঙ্কার দ্বীপে এই দেশি ভালুকের উপপ্রজাতির দেখা মেলে।

দেশি ভালুক আকৃতিতে লম্বা, এর লোম লম্বা এবং এর নাক লম্বাটে।

ব্রিটিশ উপনিবেশ থাকাকালে সব ধরনের মানুষই এই দেশি ভালুক শিকার করতেন। ফলে ১৯ শতকের শেষ দিকে এই প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীতে পরিণত হয়।

প্রাণবৈচিত্র্য বিপন্নে দেশভাগও দায়ী:
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানি বিভক্তি প্রাণিজগতকেও বিভক্ত করে। ভৌগলিক সীমারেখা দুইদেশের বনকে বিভক্ত করে। এই সময় পাকিস্তান ও ভারতে বন উজাড় করার ফলে দেশি ভালুকের আবাস, খাদ্য ও প্রজননে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এতে করে হারিয়ে যেতে থাকে দেশি ভালুক।

এছাড়াও দেশি ভালুক শিকার বিশেষ করে বাচ্চা দেশি ভালুক বন থেকে ধরে এনে রাস্তায় সাধারণ মানুষকে নাচ দেখানোর মাধ্যমে আয় (যদিও এরা নাচে না পিটিয়ে বাধ্য করার ফলে দ্রুত মারা যায়) করার কারণে এই প্রজাতি প্রাণীর জীবন বিপন্ন করে তোলে।

তেমনি বাংলাদেশেও দেশি ভালুক শিকার করার ফলে এবং বন উজাড় করায় এরা আবাসস্থল হারিয়ে ফেলে। এতে করে দেশি ভালুক বাংলাদেশ থেকে চিরতরে হারিয়ে যায়।

১৯৯৯ সালে প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) জরিপ থেকে জানা যায়, দেশি ভালুক বাংলাদেশে শেষ দেখা গেছে সত্তর দশকের প্রথম ভাগে।
 
পরিবেশ সংরক্ষণবাদীরা জানান, সর্বশেষ কয়েকটি দেশি ভালুক বাংলাদেশের পূর্বদিকের প্রত্যন্ত বনে বাস করতো। পরে সেখানকার বন উজাড় হয়ে গেলে সেখান থেকে চিরতরে হারিয়ে যায় এই দেশি ভালুক।

প্রকল্প কর্মকর্তার গবেষণা তথ্য উপস্থাপনের পর শেষ আশাটাও হারিয়ে যায়। প্রকল্প কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহেদ মাহবুব চৌধুরী জানান, আমরা নিশ্চিত, দেশি ভালুকি এখন অস্তিত্বহীন। এর নাম এখন লাল তালিকায়।

লাল তালিকভুক্ত একহাজার সাতশ প্রজাতির প্রাণীর ওপর গবেষণা জরিপ চালানোর জন্য বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশের বন বিভাগ প্রকল্পে অর্থায়ন করে। এই জরিপ থেকেই দেশি ভালুকের তথ্য উঠে আসে।

দেশি ভালুক তাদের আবাসস্থলে সাধারণত একধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। কিন্তু মানুষ এদের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত করায় এরা তাদের আবাসস্থল হারায়। এতে করে অস্তিত্বের সংকটে পড়ে এই দেশি ভালুক।

আইসিইউএনের জরিপ অনুযায়ী, বিগত ৩০ বছর আগেও ৩০ থেকে ৪৯ ভাগ দেশি ভালুক দেখা যেত প্রকৃতিতে। কিন্তু পরবর্তীতে সংখ্যায় তা  ক্রমশ কমতে থাকে।

দুর্ভাগ্য যে, দেশভাগ এই দেশি ভালুকদেরও বিভক্ত করে ফেলে। এতে করে এদের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কারণ, বন উজাড়, আবাসস্থল ও খাদ্যের সংকট দেশি ভালুক অস্তিত্বের মুখে পড়ে। শুধু তাই-ই নয়, দেশ ভাগের ফলে বন বিভক্ত হয়। এতে করে উভয় সীমান্তের বনের দেশি ভালুকেরা আর একত্রিত হওয়ার সুযোগ খুবই কম পেয়েছে। এটিও তাদের টিকে থাকাকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়।

দেশি ভালুককে পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে হলে এর আবাসস্থল, খাদ্য ও প্রজননের সুযোগ করে দিতে হবে। এ জন্য প্রাকৃতিক বন উজাড় না করে বরং সৃজন করতে হবে। তারপরেও দেশি ভালুকের ফিরে আসাটা একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই রয়ে যাবে বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে।

আইসিইউএনের জরিপ বিশ্লেষণ পড়তে ক্লিক করুন

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।