ঢাকা: ২১ জাতের আমের গাছ। কয়েকটি গাছে মুকল ও গুটিও দেখা গেলো।
আর উত্তর দিকে ডালিম, আখ, কদবেল, কলাসহ আরও কয়েকটি ফলের গাছ। ফল ও সবজির গাছগুলোর মধ্য কোনো গাছে ফুল এসেছে আবার কোনোটাতে ফল ধরেছে। ২৬০০ বর্গ ফুট জায়গা জুড়ে যেন সবুজের সমারোহ।
পাঠক এটি গ্রামবাংলার কোনো সবজিরবাগান নয়। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস এলাকার ১৫৩ নম্বর বাড়ির ছাদে গিয়ে দেখা মিললো এ বাগানের। তবে শুধু যে ওই বাড়ির ছাদেই সবুজের এমন সমারোহ তা কিন্তু নয়।
রাজধানীর বৃক্ষপ্রেমীরা সুযোগ পেলেই এখন ছুটছেন বাড়ির ছাদে বাগানের দিকে। প্রতি বছর এর সংখ্যাও বাড়ছে। কৃষি ফিস সূত্র বলছে, বর্তমানে প্রায় ছয় হাজার বাগান রয়েছে রাজধানীতে। বছরে প্রায় তিন’র বেশি ছাদে বাগান যোগ হচ্ছে। সবজি ও ফলের চাহিদা মিটিয়ে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবেও ছাদে এসব চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
কথা হয় ডিওএইচ এলাকার ছাদে বাগানকারী মীর শাহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, গত চার বছর ধরে কেমিকেলমুক্ত টাটকা সবজি ও ফল সংগ্রহ করছেন তার এ বাগান থেকে। ছাদের সবজি ও ফলের স্বাদ আর বাজারের সবজি ও ফলের স্বাদ পুরোপুরিই আলাদা।
ছোটবেলা থেকেই শাহিদুল ইসলাম গাছ লাগানো পছন্দ করেন। তিনি বলেন, কযেক বছর আগে বৃক্ষমেলায় টবে ও ড্রামে ফল, সবজির গাছ দেখে ছাদে এসব চাষ করার পরিকল্পনা মাথায় আসে। এরপর কৃষি অফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে শুরু করি।
ইংল্যান্ড থেকে চেরি টমেটোর জাত নিয়ে এসেছেন শাহিদুল। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার উদ্দেশ্যেই তিনি এ চারা লাগিয়েছেন। তিনি জানান, ছাদে এসব চাষ করতে খুব বেশি যে খরচ হয় তা কিন্তু নয়। মাটি, টব, সার, বীজের খরচ।
মীর শাহিদুল ইসলাম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ফোনে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার। শত ব্যস্ততার পরও শখের বাগানের মূল পরিচর্যার কাজও তিনিই করেন। চলতি বছরে জাতীয় ফলমেলায় বিশেষ ক্যাটাগরিতে পুরস্কারও পেয়েছেন। তিনি বলেন, ছাদে বাগান করতে হলে প্রথমে এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেয়া উচিত।
কৃষি সম্প্রসারণ ঢাকা জেলা অফিস সূত্র জানায়, ছাদে বাগান করাতে উৎসাহ দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অফিস। রাজধানীর গুলশান, তেজগাঁও ও মোহাম্মদপুর এলাকায় তিন জোনে ভাগ করে এসব সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে কর্মীরা পরিদর্শনও করেন।
রাজধানীর বিভিন্ন ছাদের বাগানকারীরা জানান, কেউ যদি বাগান করতে চান তাহলে কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে শুরু করতে পারেন। যেসব গাছের বৃদ্ধি বেশি সেসব গাছ রেখে বাকি গাছগুলো কেটে ফেলতে হবে। সব ধরনের ফল ও ফুলের চাষ করা সম্ভব ছাদে।
তবে ছাদে বাগানে কিন্তু পাখির অত্যাচার অনেক বেশি হয়। এক্ষেত্রে জাল ব্যবহার করতে হবে। মীর শাহিদুল ইসলাম তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, চলতি বছরে প্রায় এক থেকে দেড়শ ডালিম ধরেছিল গাছে। কিন্তু টিয়া পাখির অত্যাচারে একটিও ঘরে তুলতে পারেন নি।
ছাদে বাগানকারীদের দাবি, বাগানে সবচেয়ে বেশি পানি খরচ হয়। তাই পানির বিলে যদি ভূর্তিকি দেয়া যেতো তাহলে আরও অনেকেই বাগান করতে উৎসাহ পেতেন।
গুলশান মেট্রো কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন বাংলানিউজকে বলেন, ছাদে বাগানকারীদের তাদের পক্ষ থেকে নানা সেবা দেওয়া হয়ে থাকে। কারও কোনো সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট অফিসে জানালে সঙ্গে সঙ্গে পরামর্শমূলক তথ্য সরবরাহ করে থাকেন তারা। রাজধানীতে ছাদে বাগানের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি জানান, খুব সহজেই দেশি ও বিদেশী সব ধরণের ফল, ফুল ও সবজির চাষ করতে পারা যায়। এ পদ্ধতি বেশ প্রশংসাও কুড়িয়েছে। রাজধানীর পরিবেশ স্বাস্থ্য সম্মত রাখতেও কিন্তু ছাদে বাগান ভালো ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৪