শ্রীমঙ্গল: ‘শীতের সঞ্চয় চাই,/খাদ্য খুঁজিতেছি তাই/ ছয় পায়ে পিলপিল চলি’ নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের কবিতার এ লাইনটি সকালের দৃশ্যপটে সত্য হয়ে ফিরে এলো। ঘটনাসূত্রে এর বাস্তবতার প্রমাণও পাওয়া গেল এর থেকে।
তাদের শরীরের থেকে প্রায় দশগুণ বড় দু’টি মুড়ি নিয়ে রীতিমতো একটা কাহিনী তৈরি করে ফেলেছে ওরা! সকালে বারান্দায় বসে বাড়ির গৃহকর্তা বাটিভরা যে মুড়িগুলো খেয়েছিলেন; তার মধ্যথেকে দু’চারটে হয়তো মেঝেতে পড়ে যায়। খাদ্য অনুসন্ধানে থাকা পিঁপড়েদের চোখ পড়ে যায় সেই দু’চারটে খাদ্যসম্ভারের দিকে। মহাখুশি হয় তারা।
শীতের খাদ্য হিসেবে এ মুড়িগুলো সঞ্চয়ে রাখতেই হবে। নিজেদের গুহায় নিয়ে যেতে হবে ওগুলো। টেনে-হিঁচড়ে কয়েকগুণ বড় মুড়ি দুটোকে তাদের মাটির গর্তে নিয়ে যাবার পালা শুরু হয়। কিন্তু একটি সমস্যা দেখা দেয়। তাদের মাটির গর্তের ছিদ্রটা খানিক ছোট। অনেকক্ষণ ধরে জোর চেষ্টা চলে দুটো মুড়িকে নিজেদের গর্তে অনুপ্রবেশের। কিন্তু বারবারই ব্যর্থ হতে থাকে তারা।
এ কাণ্ডটাকে ঘিরে গড়াতে থাকে সময়। মুড়ি দু’টি বাতাসের সংস্পর্শে কিছুক্ষণ থাকার ফলে খানিকটা নরম হয়ে যায়। এরমধ্যে গর্তের মুখটিকেও সামান্য বড় করে ফেলে তারা। অবশেষে প্রায় আধাঘণ্টার অক্লান্ত পরিশ্রমের পর এই বিশেষ দু’টি খাদ্য গর্তে প্রবেশ করাতে সক্ষম হয় শ্রমিক পিঁপড়ের দল।
এভাবেই পিঁপড়ের দল এখন মহাব্যস্ততায় দিন কাটাচ্ছে আমাদের চারদিকে। শীতের তীব্রতা নেমে পড়ার আগেই রাশি রাশি খাদ্য নিজেদের কাছে যে জমা রাখতে হবে। তাই বিরামহীন তাদের এমন কর্মযজ্ঞ চলছে সারা রাত দিনব্যাপি!
পিঁপড়ে ফার্মিসিডি গোত্রের অন্তর্গত সামাজিক পোকা। পিঁপড়া এদের ঘনিষ্ঠ প্রজাতি বোলতা ও তো একই বর্গ হাইমেনপ্টেরার অন্তর্গত। এখন পর্যন্ত জানা প্রায় ২২ হাজার পিঁপড়া প্রজাতির মধ্যে ১২ হাজার ৫শ’টির শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে।
এরা এক ধরনের সামাজিক পোকা। তাই সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে লাইন ধরে চলে চলাচল করে থাকে। পিঁপড়েরা যেখানে বাস করে তাদের পিঁপড়ে কলোনি বলে। একটা কলোনিতে একজন রানী পিঁপড়ে, কয়েকজন ছেলে পিঁপড়ে আর অসংখ্য কর্মী পিঁপড়ে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৪