ঢাকা, রবিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

খাঁচায় মাছ চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে

মো. মালেক মিঠু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৪
খাঁচায় মাছ চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বরগুনা: নদীপ্রধান জেলা বরগুনা জুড়ে রয়েছে বলেশ্বর, বিষখালী, পায়রা, বুড়িশ্বর ও আন্ধার মানিক, এই ৫ নদী। এছাড়াও রয়েছে শতাধিক ছোট-বড় খাল।



ফলে স্বাভাবিকভাবেই জেলার স্থানীয়দের অধিকাংশই জীবিকার জন্য নির্ভর করে মৎস্য শিল্পের ওপর। প্রায় সারাবছরই এসব নদী আর খালে মাছ ধরাসহ সংশ্লিষ্ট পেশায় ব্যস্ত থাকেন জেলার অধিবাসীরা।

এমনকি ইলিশের প্রজনন মৌসুমসহ বিভিন্ন কারণে নদীতে মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকার সময়ও জীবিকার তাগিদে ঝুঁকি নিয়েও নদীতে মাছ ধরেন লক্ষাধিক জেলে।
Barguna_Picture_1
সম্প্রতি জেলেদের ঝুঁকি কমাতে ও আয়ের উৎস বাড়াতে শুরু হয়েছে খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি। নতুন এই মাছ চাষ পদ্ধতি নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে এ অঞ্চলের ম‍াছ চাষি ও জেলেদের। সেই সঙ্গে তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনা।

নদীপ্রধান এ জেলার বেকার যুবক, জেলে ও চাষিদের মধ্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হচ্ছে নতুন এ পদ্ধতি। অধিকাংশ মানুষেরই বাড়ির আশেপাশে থাকা নদী-নালা, খাল-বিলে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এখানকার দরিদ্র অধিবাসীরা।
Barguna_Picture_2
বরগুনার ছয় উপজেলাতেই চালু রয়েছে প্রচুর মাছ চাষ প্রকল্প। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্থানীয়দের উদ্যোগে শুরু হয়েছে খাঁচায় মাছ চাষ। এতে জেলার অনেক বেকার যুবক, এমনকি গৃহিণীরাও সম্পৃক্ত হচ্ছেণ।

সম্প্রতি বরগুনার আমুয়া খালে এ ধরনের একটি প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয় মাছ চাষি গোলাম মোর্শেদ স্বপন ৪০টি খাঁচা নিয়ে গড়ে তুলেছেন মুক্ত জলাশয়ে খাঁচায় মাছ চাষ প্রকল্প।
Barguna_Picture_3
তিনি বাংলানিউজকে জানান, খোলা জলাশয়ে মাছ চাষের এই পদ্ধতিতে ২০০ বর্গফুটের প্রতিটি খাঁচা তৈরিতে তার খরচ‍া পড়েছে ১৬ হাজার টাকার মতো। ১০ বছর টেকসই প্রতিটি খাঁচায় ১০০০ হাজার তেলাপিয়া মাছ ৪ মাস মেয়াদে বছরে ৩ বার চাষ করা যায়।

খাঁচাপ্রতি ৪ মাসে ২৫০ কেজি মাছ উৎপাদন করতে তার মোট খরচ হয়েছে ১৭ হাজার টাকা। প্রথমবারেই প্রায় ১০ হাজার টাকা লাভের পাশাপাশি পরে প্রতিবার অন্তত ২৫ হাজার টাকার বেশি লাভ পেয়েছেন তিনি।
Barguna_Picture_4
তিনি আরো জানান, শুধুমাত্র তেলাপিয়া নয়, নদী ও পুকুরের সব  প্রজাতির মাছই চাষ করা সম্ভব এ খাঁচা পদ্ধতিতে।
 
বরগুনা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলফাজ উদ্দীন শেখ বাংলানিউজকে জানান, পুকুরের তুলনায় খাঁচায় মাছ চাষ করলে একদিকে যেমন খাবার সাশ্রয় হয়, অন্যদিকে মাছের বৃদ্ধিও হয় প্রায় দেড়গুণ। এছাড়‍া প্রাকৃতিক পানির সরবরাহ ও স্রোতের কারণে মাছের রোগ-ব্যাধিও অনেক কম। ফলে চাষিদের বাড়তি সার ও ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়না, তেমনি মাছের মৃত্যু ঝুঁকিও থাকে খুব কম।
Barguna_Picture_5
এ বিষয়ে বামনা উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান, নাজমুন্নাহার নাজু বাংলানিউজকে জানান, সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং সহযোগিতা পেলে এই মাছ চাষ এলাকাবাসীর দারিদ্র দূর করতে পারে।

তিনি বলেন, নদীতে মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুমে জেলেদের এই চাষ পদ্ধতির আওতায় আনলে একদিকে যেমন জেলেদের পুনর্বাসনের র ব্যবস্থা হবে, তেমনি রক্ষা পাবে ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনা মাছ।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।