ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

ডাইনোসরের রক্ত উষ্ণ, না শীতল?

রাজিউল হাসান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৩ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৫
ডাইনোসরের রক্ত উষ্ণ, না শীতল?

ঢাকা: লাখ লাখ বছর আগে পৃথিবী দাপিয়ে বেড়ানো ডাইনোসরের দল কেমন ছিল, তা জানতে মানুষের আগ্রহের সীমা নেই। তার ওপর তাদের ব্যাপারে নিত্যনতুন তথ্য আবিষ্কার এ আগ্রহকে দিন দিন বাড়িয়ে তুলছে আরও।



কেমন ছিল ডাইনোসরের জীবন, কীভাবে পৃথিবীতে এলো ‍তারা, কীভাবেইবা বিলুপ্তি- ডাইনোসরকে নিয়ে মানুষের শত সহস্র প্রশ্ন, শত সহস্র বিতর্ক।

ডাইনোসরদের নিয়ে বিতর্কের অন্যতম একটি হলো, কেমন ছিল ডাইনোসরের রক্ত? অর্থাৎ, সরীসৃপ প্রজাতির এই তৃণভোজী প্রাণীর মধ্যে স্তন্যপায়ীর বৈশিষ্ট্য থাকায় আসলে তাদের রক্তের উষ্ণতা কাদের মতো ছিল, তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই বিতর্ক চলে আসছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে।

এবার সে বিতর্কের ইতি টেনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর আলবুকারকিতে অবস্থিত নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী জন গ্র্যাডি ও তার দল।

ডাইনোসরদের রক্তের তাপমাত্রা নিয়ে এতোদিন একদল বিজ্ঞানী দাবি করে এসেছেন, এরা ছিল শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণী। অর্থাৎ, শরীরের উষ্ণতার জন্য বাহ্যিক পরিবেশের ওপর নির্ভর করতে হতো তাদের। সেই সঙ্গে ব্যাঙের মতো শীতনিদ্রায় যেতে হতো। এ ধরনের প্রাণীকে জীববিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘অ্যাক্টোথার্ম অ্যানিমেল’।

আবার আরেক দল বিজ্ঞানী দাবি করছিলেন, না। ডাইনোসররা শীতল রক্তের প্রাণী ছিল না। তারা ছিল স্তন্যপায়ীদের মতো উষ্ণ রক্তের। এর অর্থ, শক্তি পুড়িয়ে তারা দেহেই প্রয়োজনীয় উষ্ণতা তৈরি করে পরিবেশের সঙ্গে সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারতো। এই প্রজাতির প্রাণীকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়, ‘অ্যান্ডোথার্ম অ্যানিমেল’।

বিতর্কটা আরও উসকে দেওয়ার মূল কারণ ডাইনোসরদের মিশ্র বৈশিষ্ট্য। একদিকে, ডাইনোসরের জন্ম হতো ডিম ফুটে। আবার এরা ছিল মেরুদণ্ডী। কোনো কোনো বিজ্ঞানীর দাবি, ডাইনোসর তৃণভোজী হলেও বাচ্চা ডাইনোসর মায়ের স্তন পান করেই বড় হতো। সব মিলিয়ে এসব মিশ্র বৈশিষ্ট্যের কারণে ডাইনোসরের রক্ত আসলে শীতল ছিল, না উষ্ণ ছিল- তার সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলেন না বিজ্ঞানীরা।

সম্প্রতি জন গ্র্যাডির নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ডাইনোসরদের রক্ত টিকটিকির মতো শীতলও ছিল না, আবার স্তন্যপায়ীর মতো উষ্ণও ছিল না। এই বিশালদেহী প্রাণিপ্রজাতির রক্ত ছিল শীতল ও উষ্ণের মাঝামাঝি পর্যায়ের। রক্তের তাপমাত্রায় মাঝামাঝি বৈশিষ্ট্যের এ ধরনের প্রাণী প্রজাতিকে বলা হয় ‘মেসোথার্ম অ্যানিমেল’।

বর্তমানেও মেসোথার্ম অ্যানিমেল রয়েছে। এর কয়েকটি উদাহরণ হলো, টুনা মাছ, লামনিড হাঙর ও কচ্ছপ। লাখ লাখ বছর আগে ডাইনোসরদের জীবনপ্রণালী কেমন ছিল, তা এই প্রাণীগুলোর বিষয়ে গবেষণা করলেই সহজে জানা যাবে বলে দাবি জন গ্র্যাডির।

গ্র্যাডির বলেন, মেসোথার্ম প্রাণীরা শক্তি পুড়িয়ে উষ্ণতা তৈরি করতে পারলেও তা স্তন্যপায়ী বা পাখিদের মতো ধারাবাহিক না। যেমন, টুনা মাছ তার দেহে পারিপার্শ্বিক অগভীর জলের তাপমাত্রার চেয়ে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণতা তৈরি করতে পারে। তবে আরও গভীরে গেলে তাদের এই বিপাক প্রক্রিয়া পরিবেশের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে যায়।

জন গ্র্যাডি ও তার সহকর্মীরা ৩৮১ প্রজাতির প্রাণীর দৈহিক বৃদ্ধির হার নিয়ে গবেষণা করেছেন। এর মধ্যে ২১ প্রজাতির ডাইনোসরও রয়েছে। ডাইনোসরদের জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে তারা এদের বৃদ্ধির হার নির্ণয় করার চেষ্টা করেছেন। এরপর গবেষকরা বৃদ্ধির হারের সঙ্গে প্রাণিদেহে শক্তি পুড়িয়ে উষ্ণতা সৃষ্টির হারের তুলনা করেন। এতে দেখা যায়, স্তন্যপায়ী প্রাণীর বৃদ্ধির হার সরীসৃপের তুলনায় দশগুণ বেশি দ্রুত। তবে ডাইনোসরদের বৃদ্ধির হার এই দুই প্রজাতির মাঝামাঝি পর্যায়ের। এ কারণে ডাইনোসরদের মেসোথার্ম প্রজাতিতে ফেলেছেন গ্র্যাডির দল।

গ্র্যাডি বলেন, বৃদ্ধি মাঝামাঝি হওয়ায় ডাইনোসরদের রক্তও শীতল আর উষ্ণের মাঝামাঝি পর্যায়ে ছিল। এর অর্থ, এরা টুনা মাছের মতো একটা নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত নিজের দেহে শক্তি পুড়িয়ে তাপ সৃষ্টি করতে পারতো।

তিনি আরও বলেন, রক্ত উষ্ণ ও শীতলের মাঝামাঝি হওয়ায় ডাইনোসররা খুব সম্ভবত বাস্তুসংস্থানজনিত কিছু সুবিধাও ভোগ করেছে। যেমন, তারা কুমিরের চেয়ে দ্রুত ভূ-পৃষ্ঠে চলাচল করতে পেরেছে কিন্তু সম আকৃতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর তুলনায় কম খাবারেই দিনযাপন করতে পেরেছে।

জন গ্র্যাডি ও তার সহকর্মীদের এই গবেষণাকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির প্যালানটোলজিস্ট গ্রেগরি এরিকসন বলেন, ডাইনোসরদের প্রকৃতি ও বৃদ্ধির বিষয়টি আরও পরিষ্কার করেছে এই গবেষণা। সেই সঙ্গে বহুদিনের একটি বিতর্কেরও অবসান ঘটেছে এখন।

তবে নিজের গবেষণায় এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যেতে রাজি নন জন গ্র্যাডি। তিনি এবার পোলার অঞ্চল, যেমন আলাস্কায় পাওয়া ডাইনোসর জীবাশ্ম নিয়ে গবেষণা করবেন। অনুসন্ধানের ভিত্তি আরও শক্ত করতেই আরও কয়েকটি প্রজাতির ডাইনোসরের বিষয়ে জানা জরুরি বলে জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৭ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৫
আরএইচ/এটি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।