ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

পাহাড়ের মাটিতে বিদেশি ড্রাগন ফ্রুট

অপু দত্ত, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৫
পাহাড়ের মাটিতে বিদেশি ড্রাগন ফ্রুট ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খাগড়াছড়ি: ২০১৪ সালের ১ জুলাই মাটিরাঙ্গার তবলছড়ির এলাকায় ঢালু পাহাড়ের একটি জমিতে ১৩০টি ড্রাগান ফ্রুটের চারা লাগান সমির মল্লিক নামে এক ব্যক্তি। ঠিক এক বছরের ব্যবধানে গাছে ফল এসেছে।

অনেক পরিশ্রম ও যত্ন শেষে গাছে ফল আসায় বেজায় খুশি তিনি।

তিনি বলেন, রাঙ্গামাটির রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে ১৩০টি ড্রাগন গাছের চারা সংগ্রহ করে নিজ জায়গায় রোপন করি। নিয়মিত পরিচর্যার ফলে এখন গাছগুলোতে ফল এসেছে। ফলগুলো বিক্রির জন্য বেশ কয়েকটা সুপার শপে কথা বলেছি। ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।

কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা জানায়, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায় গাছটির আদি নিবাস। এর বৈজ্ঞানিক নাম Hylocereus undatus। . যেটি বিদেশি ফল হিসেবে পরিচিত। সুস্বাদু চড়া দামের এ ফল এখন চাষ হচ্ছে পাহাড়ে। পাহাড়ের উর্বর মাটি এই ড্রাগন গাছের উপযুক্ত বলে জানিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।

বর্তমানে নতুন ফল হিসেবে এটি খুব জনপ্রিয়। ফল দ্রুত বৃদ্ধি পায়। সন্ধ্যা রাতে এ গাছে সাদা রং এর ফুল ফুটে ভোর রাতে ফুল নেতিয়ে পড়ে। মে মাসে গাছে ফুল ফোটা আরম্ভ করে জুন মাসে ফল পাকা শুরু হয়। জুন মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত গাছে ফুলের কুড়ি, ফুল, কাঁচা ফল, পাকা ফল সবই থাকে।

ডিম্বাকৃতির প্রতিটি ফলের ওজন ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রাম এবং গোলাকৃতির ফল আধা কেজি থেকে এক কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। সম্প্রতি মালয়েশিয়া, চীন, শ্রীলংকাসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এ ফল চাষে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও রয়েছে এই ফল চাষের যথেষ্ট সম্ভাবনা।

ড্রাগন ফলের জনপ্রিয় কিছু জাত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে আমেরিকান বিউটি, থমসন, ব্লাডি ম্যারি, রেড জাইনা, ভিয়েতনামী জাইনা, জামোরানো,  সিউল কিচেন ও  অ্যালিস উল্লেখযোগ্য।

বছরের যেকোন সময় চারা রোপন করা যায়। পিলারের চারিদিকে দুই ফুট প্রস্থ ও দুই ফুট গভীর করে মাদা তৈরি করতে হয়। গর্তে ১৫-২০ কেজি  গোবর বা কম্পোস্ট সার ও কিছু ছাই মাটিতে মিশ্রিত করে ২০০ গ্রাম পটাশ প্রয়োগ করতে হবে। সেচ প্রদান করে দুই সপ্তাহ রেখে প্রতিটি পিলারের সঙ্গে এক থেকে দেড় ফুট উচ্চতার ২/৩টি করে চারা রোপন করতে হবে।

কাঁচা ফল সবুজ রংয়ের। ফলের ত্বকের উপর ছোট ছোট পাতা, বিশেষ করে ফলের শেষ প্রান্তের পাতা (বৃতি) লাল রং ধারণ করলে এবং ফলের শেষ প্রান্তে অবস্থিত নাভি ফেটে গেলে বুঝতে হবে ফলটি পরিপক্ক হয়েছে। সপ্তাহকাল বৃষ্টিমুক্ত ও উষ্ণ আবহাওয়ায় ফল সংগ্রহ করলের ফল সুমিষ্ট হয়।

জাত ভেদে ফুল ফোটার দিন থেকে ৩৫ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। বছরের মে মাস থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত একই গাছে ৫/৬ বার ফল সংগ্রহ করা যায়। চার বছর বয়সী একটি গাছ থেকে ১২৪টি ফল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। যাদের ওজন ২০০ গ্রাম থেকে ১২০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়েছে। জাত ভেদে পূর্ণাঙ্গ গাছ বছরে ১০০ কেজি পর্যন্ত ফলন দিতে পারে। ভিয়েতনামে গড় ফলন হেক্টরে ২০-২৫ টন। উপযুক্ত পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনায় ড্রাগন ফলের গাছ ২০-২৫ বছর পর্যন্ত ফলনশীল থাকে।

পরিপক্ক ফলকে ৭ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করলে ২ মাস পর্যন্ত সজীব থাকে। মৌসুমের স্বাভাবিক আবহাওয়ায় এক সপ্তাহ ফল সংরক্ষণ করা যায়। কাণ্ডসহ পাকা ফল ঝুলিয়ে রাখলে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।

সরাসরি সূর্যের আলো ও বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকলে ড্রাগন গাছের নরম পঁচা রোগ হয়। মাটিতে অতিরিক্ত আর্দ্রতা থাকলে শুকনো পঁচা রোগ হয়। পানির স্বল্পতা থাকলে খরা মৌসুমে তীব্র সূর্যালোক গাছের দক্ষিণ পশ্চিম দিকে ঝুলে থাকা কাণ্ডের উপরের অংশ ঝলসে সাদাটে হয়ে যেতে পারে। ড্রাগন গাছের কাণ্ড মিষ্টি স্বাদ যুক্ত হওয়ায় এক ধরনের পিঁপড়া কচি ডগা ও ফুলের কুড়ি খেয়ে ক্ষতি করে। ভিজা মাটিতে গাছের গোড়া আঘাতপ্রাপ্ত হলে ব্যাকটেরিয়া ঘটিত নরম পচা রোগ হয়। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার লেদা পোকা গাছের কচি ডগা খেয়ে ক্ষতি করে। পাকা ফল পাখি দ্বারা আক্রান্ত হয়, এ জন্য ফলকে কাগজ বা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হয়।

ড্রাগন ফল চাষী সমীর মল্লিক জানান, প্রথমে একটি সুপার শপে এই ড্রাগন ফল দেখতে পাই। ফলটা দেখতে খুব সুন্দর ছিল, কিন্তু দাম ছিল বেশ চড়া। তখন দেখেই সিদ্ধান্ত নেই ড্রাগনের চাষ করার। পরে রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে ১৩০টি চারা গাছ দিয়ে চাষ শুরু। নিয়মিত পরিচর্যায় ড্রাগনের গাছে এক বছরের কম সময়ে ফল দেওয়া শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকটা সুপার শপ এই ফল কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলেও জানান তিনি।

খাগড়াছড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুর রউফ জানান, পাহাড়ের মাটি এতোটা উর্বর যে, যেকোন কিছু চাষ হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ড্রাগন বিদেশি ফল হলেও পাহাড়ের মাটির সঙ্গে গাছটি নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪১ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৫     
এমজেড/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।