শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): প্রতিবারই তার সঙ্গে দেখা হয়। শারীরিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হই বারবার।
দূরবীক্ষণ যন্ত্রে চোখ রেখে বিলের দিকে তাকালেই ল্যাঞ্জাহাঁস ধরা পড়ে দৃষ্টিসীমায়। সত্যি! এ যেন ল্যাঞ্জাহাঁসের ডেরা! প্রতিবছর শীতের মাঝামাঝিতে বাইক্কা বিলে অনেক হাঁসের সঙ্গে তাদেরও দেখা যায়। লেজের মাঝের পালক সরু ও লম্বা আলপিনের মতো, যা পুরুষ পাখিকে স্ত্রী পাখি থেকে আলাদা করে।
পুরুষ পাখিটির রয়েছে কালচে খয়েরি মাথার গাঢ় রূপ। মাথার চাঁদির কাছ থেকে ঘাড় ছুঁয়ে সাদা একটি রেখা এসে মিশেছে বুক পেটের সাদা রঙের সাথে। স্ত্রী পাখির মাথা, লেজ ও ঘাড় অপেক্ষাকৃত ছোট। মাথা ও ঘাড়ের পালক বাদামি। বাকি দেহবর্ণ ধাতব বাদামি। উভয় পাখির চোখের মণির রংও একই। পা ও পায়ের পাতা কালচে।
ল্যাঞ্জাহাঁস দলবেঁধে থাকতে ও ঝাঁকে উড়ে বেড়াতে পছন্দ করে। এরা অগভীর জলে সাঁতার কেটে অথবা পানিতে মাথা ডুবিয়ে আহার খোঁজে। ভোর, সন্ধ্যা ও রাতে এরা বেশি সক্রিয় থাকে। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে জলজ কচি উদ্ভিদ, লতাপাতা, জলজ অমেরুদণ্ডী প্রাণী।
এর পুরো নাম উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস। ইংরেজি নাম Northern Pintail। এদৈর্ঘ্য প্রায় ৫৫ সেমি এবং ওজন ৭০০ গ্রাম। এরা আমাদের দেশের সুলভ পরিযায়ী পাখি। শীতকালে দেশের হাওর, বিল, জলাশয় ও উপকূলীয় জলাভূমিগুলো এরা মুখরিত করে তোলে।
এপ্রিল-সেপ্টেম্বর এদের প্রজনন মৌসুম। তখন এরা সাইবেরিয়া ও মঙ্গোলিয়ার উত্তারঞ্চেলের আর্দ্রভূমির লতাপাতার মধ্যে ঘাস, গাছ-গাছড়া ও পালক বিছিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ৭-৯টি। ২১-২২ দিন পর ডিম ফোটে। ৪০-৪৫ দিন পর ছানাদের গায়ে ওড়ার পালক গজায়। তখন তারা আকাশে ডানা মেলে।
বন্দুকধারী শিকারিসহ ফাঁদ শিকারির কাছে খুবই লোভনীয় এই জলচর পাখিটি। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণি আইন বাস্তবায়নের পর থেকে অনেক পরিযায়ী পাখির মতো এদেরও অবাধ শিকার কিছুটা বন্ধ হয়েছে। তবে পুরোপুরি নয়।
আক্ষেপের সঙ্গে বলতেই হয় - দেশের সব বিভাগের নিরাপদ জলাশয়, প্রধানত হাওর ও নদীতে এদের একসময় প্রচুর সংখ্যক দেখা যেত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ হাঁসের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৫
বিবিবি/এএ