ঢাকা: পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বড় কারণ গাড়ি, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তা আমরা কম-বেশি সবাই জানি। এক্ষেত্রে আমাদের খাদ্যাভ্যাস কি কিছুটা হলেও দায়ী? বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন বলছে, কেবল ‘কিছু’টা নয়, রীতিমত ‘উদ্বেগজনকভাবে’ দায়ী।
জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (ফাও) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমাদের খাদ্যাভ্যাস-বিশেষত ‘মাংস’ যে পরিমাণ গ্রিন হাউজ গ্যাস, কার্বন ডাইঅক্সাইড (সিও২), মিথেন, নাইট্রিয়াস অক্সাইডসহ অন্যান্য গ্যাস নিঃসরণ করে, ওই পরিমাণ গ্যাস পরিবহন খাত থেকেও আসে না।
ফাওয়ের প্রতিবেদন মতে, বিশ্ব এক বছরে যে ৩৬ বিলিয়ন টন “সিও২-সমতুল্য” গ্রিন হাউজ গ্যাস উৎপাদন করে, তার ১৪ থেকে ২২ শতাংশ আসে মাংস থেকে।
দেখা যায়, হাফ পাউন্ড ওজনের একটি হামবার্গার তৈরিতে দুই পেটি তাসের আকারে মাংস প্রক্রিয়া করতে গেলে পরিবেশে যে পরিমাণ গ্রিন হাউজ গ্যাস যোগ হয়, একটি ৩,০০০ পাউন্ড গাড়ি প্রায় ১০ মাইল চালালে তার সমপরিমাণ হয়।
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান চাথাম হাউজ তাদের প্রতিবেদনে জানায়, মধ্যম সারির দেশগুলো পুষ্টি অর্জনের জন্য যে হারে মাংস গ্রহণ করছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে এই শতকের মাঝামাঝি সময়ে বর্তমানের তুলনায় মাংস গ্রহণের হার ৭৬ শতাংশ বেড়ে যাবে।
উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোতে মাথাপিছু মাংস গ্রহণের পরিমাণ সমান থাকলেও, উন্নত দেশগুলোতে প্রত্যেক মানুষ উন্নয়নশীল দেশের মানুষের তুলনায় দ্বিগুণ-তিনগুণ পর্যন্ত মাংস আহার করে।
এর কারণ হলো, তারা মনে করে মাংসই অধিক স্বাস্থ্যকর খাবার।
এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের সচেতন করার দায়িত্ব মূলত রাজনীতিবিদদের নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ব্রাজিল এবং যুক্তরাজ্যের মতো বৃহৎ অর্থনীতির ১২টি দেশে জরিপ চালিয়ে এবং আলোচনা করে দেখা গেছে, এই সমস্যা মূলত শীর্ষস্থানীয়দেরই।
সমাধান হিসেবে চাথাম হাউজ মনে করে, জনসাধারণের মধ্যে মাংস গ্রহণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্কের বিষয়টি বুঝিয়ে দিলেই এই প্রয়াস অনেকটা এগিয়ে যাবে। আর এতে নেতৃত্ব দিতে হবে প্রতিটি রাষ্ট্রপ্রধানদের। যদিও বিশ্বব্যাপী মাংস শিল্প টেকসই অবস্থান নেওয়ার চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিচ্ছে।
যে কারণে রাষ্ট্রপ্রধানদের অবশ্যই সমালোচনা সহ্য করে মাংস গ্রহণ প্রসঙ্গে জনগণ, গণমাধ্যম, ব্যবসায়ী এবং বুদ্ধিজীবীদের মুখোমুখি হতে হবে। দেশভেদে এ ক্ষেত্রে আলোচনার ধরনও আলাদা হতে পারে।
এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে ‘স্থূলতা’ একটি বড় সমস্যা। চীনে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়গুলোও জনসাধারণকে বোঝাতে হবে। বোঝাতে হবে মানুষের জন্য ‘পুষ্টিকর’ মাংস পরিবেশের জন্য ‘কাল সাপ’।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৫
এটি/এইচএ