ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

চোখ এড়িয়ে চলা নীলগলা ফিদ্দা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৬
চোখ এড়িয়ে চলা নীলগলা ফিদ্দা ছবি: আবু বকর সিদ্দিক/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): বছর দুয়েক আগের কথা। বাইক্কা বিলের ঢোলকলমি বনে একটি পাখিকে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে খুঁজেছিলাম।

হঠাৎ সেই পাখিটির কণ্ঠসৌন্দর্য আমার চোখে এসে ধরা দিলো। তারপর হন্যে হয়ে খুঁজলাম তাকে। কিন্তু একবার দেখা দিয়েই সে উধাও!

খালি চোখে হঠাৎ কোনো পাখিকে দেখে পরবর্তীতে অধিকতর পর্যবেক্ষণের জন্য দূরবীনে বারবার চোখ রাখতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বিরক্ত ভাবটা চলে আসে। অন্য পাখিরা এসে ধরা পড়ে লেন্সে।

সেদিন মাত্র একবার দু-তিন সেকেন্ডের জন্য দেখা দিয়ে হারিয়ে যাওয়া ওই পাখিটি ছিল নীলগলা ফিদ্দা। ইংরেজি নাম Bluethroat এবং বৈজ্ঞানিক নাম Luscinia svecica। এরা জলাভূমি সংলগ্ন ছোট ছোট গাছ-পালায় ঘুরে বেড়ায়। শরীরের বেশি অংশ ধূসর বর্ণের।

স্ত্রী পাখি থেকে পুরুষ পাখিটি বেশি সুন্দর। সেদিন বাইক্কাবিলে পুরুষ পাখিটির সৌন্দর্য দারুণভাবে আকর্ষণ করেছিল আমাকে। গলায় যেন তার চারটি রঙের অপূর্ব সমবিন্যাস। যা পাখির সৌন্দর্যকে ধূসর প্রকৃতির বুকেও দারুণভাবে মেলে ধরে।

প্রখ্যাত পাখি গবেষক, লেখক ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, নীলগলা ফিদ্দা শীতের পরিযায়ী পাখি। মাটি পাথর ও পাতা থেকে পোকা খুঁটে খুঁটে খায়। হেঁটে খাবার খোঁজার সময় লেজ উপরে তুলে লেজের লালচে পট্টি প্রদর্শন করে। এরা ছোট আকারের ভূচর পাখি। ছোট বলে সাধারণ মানুষের চোখে পড়ে কম।

পাখিটির শারীরিক বর্ণনা প্রসঙ্গে ইনাল আল হক বলেন, এদের দৈর্ঘ্য ১৫ সেমি এবং ওজন মাত্র ১৭ গ্রাম। পুরুষ পাখিটির থুতনি থেকে বুক পর্যন্ত নীল রং ও লালচে ছোপ। ওই রঙের উপস্থিতি অনেকটা মালার মতো। প্রজনন মৌসুমে সঙ্গীকে আকর্ষণের জন্য এই রঙের মালাটি প্রশস্ত হয়।

আর স্ত্রী পাখিটির বুকে কিছু সরু নীল দাগ রয়েছে। দীর্ঘ সাদা ভ্রু-রেখা। পুরুষ-স্ত্রী উভয় পাখির চোখ বাদামি। ঠোঁট কালো। মুখ উজ্জ্বল হলুদ। পা ও পায়ের পাতা কালচে-বাদামি। হাওর, বিল বা জলাশয়ের ধারের ঝোপে অথবা নলবনে এরা অন্য পাখিদের সঙ্গে রাত কাটায়। সাধারণত একাকী থাকে। এরা ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ায় বিচরণকারী পাখি।

মুন্সীগঞ্জের পদ্মার চর এলাকা থেকে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি এ পাখির ছবিগুলো তুলেছেন বলে পাখি বিষয়ক আলোকচিত্রী আবু বকর সিদ্দিক জানান।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৬
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।