ঢাকা: উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ ভারতের বিহার এবং এর আশেপাশের এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। ফলে একটি মৌসুমী লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
এ সময়ে বাংলাদেশের আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের দু’এক জায়গায় বিছিন্নভাবে হাল্কা অথবা গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র বলছে, জানুয়ারি মাসে তাপমাত্রা কম থাকে। তবে এবার জানুয়ারির শেষের দিকে তাপমাত্রা আরও খানিকটা নেমে যাবে। এ সপ্তাহেই সারাদেশের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এছাড়া, জানুয়ারির শেষ দিকে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে।
যদিও এরইমধ্যে রোববার (১০ জানুয়ারি) কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ৪ মিলিমিটার এবং মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও রংপুরে হালকা বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
অধিদফতরের তথ্যমতে, এ সপ্তাহে দৈনিক উজ্জ্বল সূর্য কিরণ-কাল ৩-৫ ঘণ্টার মধ্যে থাকতে পারে। পাশাপাশি বাষ্পীভবনের দৈনিক গড় মান ১ দশমিক ৭৫ মি. মি. থেকে ২ দশমিক ৭৫ মি. মি. পর্যন্ত থাকতে পারে।
রোববার ঢাকা বিভাগের আকাশে খণ্ড খণ্ড মেঘ দেখা গেছে। এদিন রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকা বিভাগের কোনো কোনো জেলায় রোববার দিনগত গভীর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন থাকতে পারে।
এদিন চট্টগ্রামেও কিছু কিছু জায়গায় আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮ ডিগ্রি সে.। রাতে চট্টগ্রাম বিভাগের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সে. পর্যন্ত কমে যেতে পারে। পাশাপাশি সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকবে চট্টগ্রাম শহর এবং এর আশেপাশের জেলা।
রাজশাহী বিভাগের আকাশও এদিন মেঘাচ্ছন্ন ছিল। রাজশাহী জেলায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সে.। রাতে রাজশাহী বিভাগের কোনো কোনো জেলায় হালকা শীতল বাতাস বয়ে যেতে পারে।
রংপুর বিভাগের আকাশে কোথাও কোথাও রোববার খণ্ড খণ্ড মেঘ দেখা গেছে। এদিন রংপুর শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ ডিগ্রি সে.। রাতে নগরীসহ বিভাগের অন্যান্য জেলায় শীতল বাতাস বয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন থাকতে পারে। আরও এক সপ্তাহ এ অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে।
রোববার দিনগত রাতে খুলনা, যশোর এবং কুষ্টিয়া অঞ্চলের উপর দিয়ে হালকা শীতল বাতাস বয়ে যেতে পারে। এদিন খুলনা শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ ডিগ্রি সে.।
একই অবস্থা ছিল বরিশাল এবং সিলেট বিভাগেও। ভোর পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা ঘন মেঘে ঢাকা থাকতে পারে। অন্যদিকে রাতে শ্রীমঙ্গলের ওপর দিয়ে হালকা শীতল বাতাস বয়ে যেতে পারে।
শীতের কবল থেকে ফসল রক্ষায় পরামর্শ
এদিকে বাংলা পৌষ মাসে শীতের কবল থেকে ফসল রক্ষা করতে নিয়ম মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কবল থেকে বোরো ধান রক্ষায় রাতে বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখে দিনে তুলে ফেলতে হবে। চারাগাছ হলদে হয়ে গেলে প্রতি বর্গমিটারে ৭ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। এরপরও যদি চারা সবুজ না হয়, তবে প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম করে জিপসাম দিতে হবে। জমিতে জৈবসার এবং শেষ চাষের আগে ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার দিতে হবে। ধানের চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পর প্রথম কিস্তি, ৩০-৪০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি এবং ৫০-৫৫ দিন পর শেষ কিস্তি হিসেবে ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।
গম রক্ষায় জমিতে হেক্টরপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে এবং সেচ দিতে হবে। সেচ দেওয়ার পর জমিতে জো এলে মাটির ওপর চটা ভেঙে দিতে হবে।
ভুট্টা ক্ষেতের গাছের গোড়ার মাটি তুলে গোড়ার মাটির সঙ্গে ইউরিয়া সার ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর সেচ দিতে হবে।
আলু চারা গাছের উচ্চতা ১০-১৫ সেন্টিমিটার হলে ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। দুই সারির মাঝে সার দিয়ে কোদালের সাহায্যে মাটি কুপিয়ে সারির মাঝের মাটি গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে। ১০-১২ দিন পরপর এভাবে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে না দিলে গাছ হেলে পড়বে এবং ফলন কমে যাবে।
আলু ফসলে নাবি ধসা রোগ দেখা দিতে পারে। সে কারণে স্প্রেয়িং শিডিউল মেনে চলতে হবে। মড়ক রোগ দমনে দেরি না করে ২ গ্রাম ডায়থেন এম ৪৫ অথবা সিকিউর অথবা ইন্ডোফিল প্রতি লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে ৭ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে। পাশাপাশি মড়ক লাগা জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। আলু গাছের বয়স ৯০ দিন হলে মাটির সমান করে গাছ কেটে দিতে হবে এবং ১০ দিন পর আলু তুলে ফেলতে হবে।
রৌদ্রময় শুকনা দিনে বীজ তুলা উঠাতে হয়। তুলা সাধারণত তিন পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। শুরুতে ৫০ শতাংশ বোল ফাটলে প্রথমবার, বাকি ফলের ৩০ শতাংশ পরিপক্ব হলে দ্বিতীয়বার এবং অবশিষ্ট ফসল পরিপক্ব হলে শেষ অংশের তুলা সংগ্রহ করতে হবে।
মসুর, ছোলা, মটর, মাসকালাই, মুগ, তিসি পাকার সময় এখন। সরিষা, তিসি বেশি পাকলে রোদের তাপে ফেটে গিয়ে বীজ পড়ে যেতে পারে, তাই এগুলো ৮০ ভাগ পাকলেই সংগ্রহের ব্যবস্থা নিতে হবে। আর ডাল ফসলের ক্ষেত্রে গাছ গোড়াসহ না উঠিয়ে মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি রেখে ফসল সংগ্রহ করতে হবে। এতে জমিতে উর্বরতা এবং নাইট্রোজেন সরবরাহ বাড়বে।
এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ হামিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ইতোমধ্যে কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য লিফলেট বিতরণ ছাড়াও মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কৃষকরা বড় ধরনের কোনো সমস্যায় পড়েনি। নিয়ম মেনে চললে এই মৌসুমে ফসলের বড় ধরনের কোনো ঝুঁকি নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৬
এটি/এইচএ/