ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

শুক্রবারের স্পেশাল রিপোর্ট

চাল-গমের উপর চাপ কমাবে সাদা ভুট্টা

মহিবুল আলম সবুজ, শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৬
চাল-গমের উপর চাপ কমাবে সাদা ভুট্টা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য চাল।

গমের উপরও নির্ভরতা কম নয়। কিন্তু প্রতিনিয়তই কমছে দেশের আবাদযোগ্য জমি। একই সঙ্গে বাড়ছে খাদ্যের চাহিদা। চাল ও গমের উপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শস্যের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন গবেষকরা।

সম্প্রতি সাদা ভুট্টা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে কৃষি বিজ্ঞানীরা শোনাচ্ছেন নতুন আশার কথা। এ শস্যটিকে তারা ভাবছেন চাল ও গমের বিকল্প হিসেবে।
বেশি ফলন ও সুস্বাদু হওয়ায় পৃথিবীর বহু দেশে সাদা ভুট্টা প্রধান খাদ্য হিসেবে সমাদৃত। আমাদের দেশেও সাদা ভুট্টার চাষ করা গেলে ভাত ও গমের উপর চাপ কমবে বলেই আশা গবেষকদের।  

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে তিন লাখ হেক্টর জমিতে ২২ লাখ টন হলুদ ভুট্টা উৎপাদিত হয়। এ ভুট্টায় অধিক মাত্রায় ক্যারোটিন থাকায় সিংহভাগই ব্যবহৃত হয় মুরগি ও মাছের খাবার হিসেবে। ক্যারোটিন শরীরে অধিক পুষ্টি চাহিদা মেটালেও তা খাদ্যদ্রব্যের স্বাদ কমিয়ে দেয়। তাই সারা বিশ্বে মানুষের খাদ্য হিসেবে হলুদ ভুট্টার চেয়ে সাদা ভুট্টার কদর বেশি।

তাছাড়া সাদা ভুট্টা খেতেও বেশ সুস্বাদু। এর আটা হলুদ ভুট্টার চেয়ে মিহি হওয়ায় পৃথিবীর বহু দেশে সাদা ভুট্টা অন্যতম একটি প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

এ বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বারি) সাদা ভুট্টার দু’টি জাত- বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১২ ও বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৩ অবমুক্ত করেছে।
বারি’র মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আমীরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, উদ্ভাবিত নতুন জাত দু’টি খরা সহনশীল বলে বরেন্দ্র এলাকায় চাষের উপযোগী। এছাড়া হলুদ ভুট্টা চাষে সেচ প্রয়োজন হয় চারবার। কিন্তু সাদা ভুট্টা চাষে সেচ লাগে মাত্র একবার।

ফলনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বর্তমানে ধান ও গমের সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা হেক্টর প্রতি পাঁচ টনের মতো, যা বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আরও বাড়ানো খুবই কঠিন। অন্যদিকে সাদা ভুট্টার ফলন প্রতি হেক্টরে ৮ থেকে ১২ টন।

বাংলাদেশে সাদা ভুট্টা উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) একটি প্রকল্প প্রণয়ন করে। এ প্রকল্পের আওতায় শেকৃবি, এগ্রেরিয়ান রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের সমন্বিত উদ্যোগে শেকৃবি ক্যাম্পাস, বান্দরবান, বরিশাল, ঢাকা, দিনাজপুর, নীলফামারী ও রংপুরে সাদা ভুট্টার উপর ব্যাপক গবেষণা চলছে।

বাংলাদেশের জলবায়ুর উপযোগী সাদা ভুট্টার জাত বাছাই ও এদের উপযুক্ত উৎপাদন প্রযুক্তি সৃষ্টি, সাদা ভুট্টা দিয়ে সুস্বাদু খাবার তৈরি, চাষে কৃষককে উদ্বুদ্ধকরণ, ভুট্টাজাত খাবারে জনগণকে উৎসাহীকরণ এবং সাদা ভুট্টা উৎপাদনের উপযুক্ত অঞ্চল শনাক্তকরণ এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।   

চীন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অন্য কয়েকটি দেশের পনেরোটি সাদা ভুট্টার জাত গবেষণার জন্য ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে।

এ প্রকল্পের সমন্বয়ক শেকৃবি’র অধ্যাপক ড. মো. জাফর উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পটি সফল হলে সাদা ভুট্টা বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তায় ধান ও গমের চেয়ে বেশি ভ‍ূমিকা রাখবে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে সৃষ্ট খাদ্যাভাবের আশঙ্কাও দূর করতে সাহায্য করবে সাদা ভুট্টা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৬
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।