শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): চারদিকে তখন দুপুরের রোদের তীব্রতা। উত্তাপ মাথায় নিয়ে পা চালাচ্ছি- কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের দিকে।
বসন্তের অন্যতম প্রতিনিধি হয়ে ফুলগুলো বুনো সৌন্দর্য ছড়িয়ে রেখেছে পথপ্রান্তে। হায়রে! কেউ তার খবরও রাখে না! সম্প্রতি জাগছড়া চা বাগানের নির্জন দুপুরে না আসলে হয়তো দেখাই হতো না তাদের এমন বাসন্তি-হাসির সঙ্গে!
ক্ষুদ্র মৌমাছি আর শ্বেতশুভ্র বর্ণে একটি প্রজাপতি তখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল ফুলগুলোর গালে চুম্বন দিয়ে মধু আরোহণে। কিন্তু দুর্ভাগ্য! কয়েকবার চেষ্টা করেও সেই প্রাকৃতিক চুম্বনের দৃশ্যধারণ করতে পারলাম না। প্রতিবারই ব্যর্থ হলাম।
এ গাছটির পাতা অপেক্ষাকৃত বড়। তবে ফুলের আকৃতি ছোট। একটি গুচ্ছে অনেকগুলো ছোট ছোট ফুল যুক্ত হয়ে প্রকৃতিতে শ্বেতশুভ্রতা ছড়িয়ে দিয়েছে।
সনাতন ধর্মে ফাল্গুন মাসে এ ফুল দিয়ে পূজা করার রেওয়াজ প্রচলিত রয়েছে। অঞ্চলভেদে ‘ঘেটু ফুল’সহ অন্য নামও প্রচলিত রয়েছে এর।
তবে এ ফুলকে জাগছড়া চা বাগানে ‘ঘাটু ফুল’ বলা হয়ে থাকে বলে জানালেন চা বাগানের সর্দার সুভাষ কানু। তিনি আরও বললেন, এটির নাকি ওষুধিগুণও রয়েছে। শিশুদের জ্বর সারাতে ফুলটির পাতার রস এবং দাঁতের ব্যথায় এ ফুলের মূল বিশেষ উপকারি।
পরিবেশ ও প্রকৃতি বিষয়ক গবেষক ও লেখক সৌরভ মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ভাঁট এক প্রকারের বনোফুল। গ্রামবাংলা বা পাহাড়ি এলাকায় বসন্তকালে ফুটে থাকে। বুনো ফুল বলে কোনো যত্নের প্রয়োজনই পড়ে না। পথপাশে বা পরিত্যক্ত জমিতে এমনি এমনিই জন্মায়।
এ ফুলটি মায়ানমার ও ভারতীয় প্রজাতি।
ফুলটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ভাঁটের বৈজ্ঞানিক নাম Clerondendron viscosum। ভাঁট গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। গাছের প্রধান কাণ্ড খাড়া। সাধারণত ২ থেকে ৪ মিটার লম্বা হয়। পাতা কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে, ৪ থেকে ৭ ইঞ্চি লম্বা হয়। ডালের শীর্ষে পুষ্পদণ্ডে ফুল ফোটে।
পাপড়ি সাদা। তবে কোনো কোনো ফুলের মাঝে আবার বেগুনি বর্ণ রয়েছে, জানান সৌরভ মাহমুদ।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৬
বিবিবি/জেডএস