সাতক্ষীরা: শ্যামনগর অ্যাগ্রো টেকনোলজি পার্ক। ফলদ, বনজ ও ওষুধিসহ শতাধিক প্রজাতির উদ্ভিদ নিয়ে সম্প্রতি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা পরিষদ চত্বরে গড়ে তোলা হয়েছে পার্কটি।
পার্কে প্রদর্শিত দেয়ালে সবজি চাষ, ভার্মি কম্পোস্ট সার, কুইক কম্পোস্ট সার, আবর্জনা/খামারজাত সার এবং সবুজ সার তৈরি পদ্ধতি, মাশরুম চাষ, মৌমাছি পালন ও ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার পদ্ধতি উপজেলার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
ক্ষতিকর কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার ছাড়াই জৈব পদ্ধতিতে গড়ে তোলা এই অ্যাগ্রো টেকনোলজি পার্ক মন কাড়ছে সবার।
পার্ক পরিদর্শন করে কৃষকরা যেমন জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন, তেমনি ওষুধি লতাপাতা ও তার ব্যবহার জেনেও লাভবান হচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষ।
নয়নতারা, কাল কেউটে, কচুমুখী, পাথরকুচি, মিছরিপাতা, মুক্তঝুড়ি, তুলসী, হাতিশুঁড়, বেতশাক, পাহাড়ি ধনে, কাঁটা নটে, আমরুল শাক, তুলোটেপারি, হেলাঞ্চ, আদাবরুন, থানকুনি, মনিরাজ, ধুতরা কালে, ভেন্না, বাউল জেলি, কালমেঘ, লজ্জাবতী, বনমূলা, পাশাফুল, অনন্তমূল, শীষ আকন্দ, লাল কেউটে, রক্ত করবী, শ্বেত আকন্দ, নীল অপরাজিতা, শতমূল, শিউলী, হাড়ভাঙ্গা, নিমুখো, বামন আঁটি, খুদকুড়ি- এমন সব ওষুধি উদ্ভিদ নিয়ে সাজানো হয়েছে পার্কটি।
ব্রাহ্মি শাক ব্রেইনের জন্য উপকারি। তেলাকুচ ডায়াবেটিসের জন্য মহৌষধ। কচুর পাতা চোখের জন্য ভালো। আমাশয়ে ভরসা থানকুনি- এমন প্রয়োজনীয় নানা তথ্য জানা যাবে পার্কে এলে।
দেখা যাবে ক্ষতিকর পোকা দমনে অত্যন্ত কার্যকর ফেরোমন ফাঁদসহ নানা প্রযুক্তির ব্যবহার।
শুধু তাই নয়, এখানে রয়েছে-বাদাম, কালজিরা, বাটিশাক, রসুন, বরবটি, বেগুন, টমেটো, পেপে, আম, গীমা কলমি, অড়হড়, শসা, তিল, মুগ, উচ্ছে, পুঁইশাক, লাউ, কুমড়া, মিষ্টি আলু, ড্রাগন ফল, পেয়ারা, ওল, মুখি কচু, পাট, আখ, ক্যাপসিকাম, ছোলা, স্ট্রবেরি, সিম, মরিচ, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, ধুন্দুল, ঢেঁড়স, ভুট্টা, ডাটাশাক, যব, গম ও ধানের প্রদর্শনী ক্ষেতও। যার সবটাই চাষ করা জৈব পদ্ধতিতে।
পার্কে বেড়াতে আসা কলেজছাত্র মারুফ হোসেন মিলন বাংলানিউজকে বলেন, অনেক ধরনের পার্ক দেখেছি। কিন্তু ফলদ, বনজ ও ওষুধি উদ্ভিদের এমন পার্ক কোথাও চোখে পড়েনি। এখানকার সবকিছুই বিষমুক্ত-যা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।
ইমরান হোসেন নামে অপর এক দর্শনার্থী বাংলানিউজকে বলেন, পার্কটি হতে পারে কৃষকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র। তা সম্ভব হলে তারা জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।
গবেষক শাহীন ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, খাদ্যকে নিরাপদ করতে জৈব বালাই নাশক প্রযুক্তি সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। এর জন্য শ্যামনগর অ্যাগ্রো টেকনোলজি পার্ক কৃষকদের কাছে হতে পারে উৎকৃষ্ট উদাহরণ। একই সঙ্গে আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ওষুধ ভাণ্ডার সম্পর্কেও মানুষ জানতে পারবে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কৃষিবিদ আবু সায়েদ মো. মনজুর আলম বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এবং ইনোভেশন ইন পাবলিক সার্ভিস প্রকল্পের আওতায় অ্যাগ্রো টেকনোলজি পার্কটি গড়ে তোলা হয়েছে। ক্ষতিকর রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে সরাসরি উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা এ পার্কটি হতে পারে অনুসরণীয়।
সেই সঙ্গে ফসলের নতুন জাত ও প্রযুক্তি প্রসারে অ্যাগ্রো টেকনোলজি পার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৬
এসআই