ঢাকা: সূর্য ঠিক মাথার ওপরে। রোদের তাপদাহ জানান দেয়, ঘড়ির কাঁটা তখন দুপুর ২টার ঘরে।
বাইরে তীব্র গরমের তুলনায় ঘরের ভেতরে সিলিং ফ্যান প্রশান্তির বাতাস ছড়াচ্ছে বটে। সেই বাতাসই নিতে আসে চড়ুইটি। কিন্তু প্রশান্তির বদলে ধপ করে পাখিটার জীবন প্রদীপই নিভিয়ে দিলো সিলিং ফ্যান।
ঘরে ঢুকতেই ফ্যানের ডানার বাড়ি খেয়ে চঞ্চল চড়ুইটি হঠাৎ মাটিতে পড়ে কাতরাতে থাকে। তৎক্ষণাৎ তার সেবায় লেগে পড়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখার (সিটিএসবি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) জুয়েল চন্দ্র দেবনাথ।
জুয়েল দেখেন তার হাত রক্তে লাল হয়ে গেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ডিএমসি) জোনে দায়িত্বরত এ পুলিশ কর্মকর্তা চড়ুইটিকে বাঁচাতে মেডিকেল ক্যাম্প পুলিশ গোয়েন্দাদের রুমে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
এসময় ঘরে থাকা অন্যরা আশা ছেড়ে দিলেও তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে থাকেন, ‘বাসা থেকে পাখির ছানা পড়ে আহত হলে কিছুটা সেবা করে ছোটবেলায় কতো সারিয়ে তুলেছি! বাসায় ফেরত দিয়ে আসার পরে সেগুলো সুস্থও হয়ে গেছে। ’
কিন্তু চড়ুইটার যে আর সময় ছিলো না! জুয়েলের সেবাকে ব্যর্থ করে খানিক পরেই নিথর হয়ে গেল তার ছোট্ট দেহটি।
মঙ্গলবারের (১৯ এপ্রিল) এই ঘটনাটি বলার সময় জুয়েলের চোখ গড়িয়ে জল বের হচ্ছিল যেন প্রিয় কাউকে হারানোর বেদনায়।
জুয়েল জানান, কাক বা অন্য কোনো প্রাণী যেন খেতে না পারে, সেজন্য চড়ুইটির সমাধী দিয়েছেন তিনি গোয়েন্দাদেরই অফিসের সামনে।
ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার সরিষাহাটি গ্রামে বাড়ি জুয়েলের। তিনি বলছিলেন, ছোটবেলা থেকেই পাখি তার ভীষণ প্রিয়।
দীর্ঘ সময় স্তব্ধ থাকার পরে ধরা গলায় জুয়েল কথা বলে ওঠেন। “মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে, মানুষ পশু-পাখিকেও ভালোবাসবে। তাই তো সে মানুষ”।
“পাখিরা পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করে। এতো বড় আকাশে যদি পাখি না ওড়ে, আকাশ আর ভালো লাগবে?” প্রশ্ন রাখেন জুয়েল।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৬
এটি/এইচএ/