শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) থেকে: উপকূলীয় শহর শ্যামনগরে চিকিৎসার নামে চলছে রমরমা ব্যবসা। বেসরকারি হাসপাতাল, প্যাথলজি আর ফার্মেসি গড়ে উঠেছে ব্যঙ্গের ছাতার মতোই।
উপজেলার মেইনরোডে বঙ্গবন্ধু মার্কেটের সামনে বেশ বড় করে নগর ক্লিনিকের নাম টানানো। মার্কেটের পেছন দিকে ক্লিনিক। ছোট গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলে হাতের ডানে ডাক্তারের চেম্বার। সবমিলিয়ে ৬টি রুমের ২টিকে ওয়ার্ড বানানো হয়েছে। ভর্তি রোগী রয়েছেন ১ জন। অন্য রুমে বেড ফাঁকা। অপারেশন থিয়েটারে তালা, চাবি চিকিৎসকদের কাছেই থাকে। সেবিকা না থাকলেও আয়া রয়েছেন একজন। গাজী নামে একজন ব্যক্তি বসেন ডাক্তারের চেম্বারের সামনে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মালিকানা নিয়ে প্রায় ১০ জন অংশীদারের ঝামেলা চলায় হাসপাতালটির কার্যক্রম কিছুটা স্থবির। সরকারি হাসপতালের সহকারী সার্জন ডা. আনিসুর রহমানকে সকাল সাড়ে ১০টাতেই দেখা যায় তার মালিকানাধীন এ হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। তিনি সকালে বসেন এবং প্যারামেডিক চিকিৎসক আকবর বসেন বিকেলে। তিনিও এ হাসপাতালের অংশীদারদের একজন। হাসপাতালটিতে মাসে ২০ থেকে ৩০ জন রোগী হয় এবং ৪ থেকে ৬টি সিজার অস্ত্রপচার করা হয় বলে জানান গাজী। বেশিরভাগ সময় চিকিৎসক বা নার্স না থাকা এ ক্লিনিকে ইমার্জেন্সি থাকার প্রশ্ন অপ্রয়োজনীয়।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কটিকে এ উপকূলীয় শহরের চিকিৎসা বাণিজ্য সড়ক বললে ভুল হবে না। এই সড়কে একটি রুম নিয়েও গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দু’পাশে, সামনে সবদিকেই এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
মেইন রোড থেকে হাতের বাঁয়ে পল্লী ক্লিনিক। তিনতলা ক্লিনিকটির সিঁড়ি সরু টানেলের মতো। দ্বিতীয় তলায় ওয়ার্ডে ১ জন রোগী। ওয়ার্ডের মধ্যেই রান্না হচ্ছে। এপেন্ডিসাইডিসের রোগীকে গুদামের মত ছোট ওয়ার্ড থেকে বের করে বাইরে বাথরুমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের নিচতলায় তিনটি রুম। একটিতে তালা দেয়া, অন্যটিতে আড্ডা দিচ্ছেন কয়েজন স্থানীয় যুবক, প্রথম রুমটিতে চিকিৎসক বসেন। ৫১ বছর বয়সী ডা. স্বপন মজুমদার বাংলানিউজকে জানান, তিনি এখানকার স্থায়ী চিকিৎসক, এখানে তার মালিকানা আছে। ঢাকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ২ বছরে প্রায় ২ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে এ ক্লিনিকের নিবন্ধন পেয়েছেন। প্রথমবার রোগীকে পরামর্শ দেবার জন্য তার ভিজিট ৩০০ টাকা, পরবর্তী প্রতি ভিজিট ২০০ টাকা করে।
এই হাসপাতালে মাসে ১২ থেকে ১৫টি সিজার ও কিছু এপেন্ডিসাইডিসের অস্ত্রপচার করা হয়। এ দিয়েই মূল আয়। তিনি ছাড়াও হাসপাতালে আরো ১ জন চিকিৎসক, ১ জন নার্স ও ২ জন আয়া রয়েছেন।
পল্লী ক্লিনিক থেকে ২০ মিটার এগোলেই রিডা প্রাইভেট হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বেশ বড় জায়গায় কিছুটা আভিজাত্য নিয়ে এই ক্লিনিকে রাজধানী ঢাকারও বেশ কয়েজন চিকিৎসকদের নাম রয়েছে। সাতক্ষীরা সরকারি হাসপাতালের তিন জন চিকিৎসকের নামও দেখা গেলো। উপকূলীয় ইউনিয়ন নীলডুমুর থেকে আসা রোগী রুবেল আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, এখানে জ্বর নিয়ে এলেও একগাদা টেস্ট দেয়া হয়। হাসপাতালের নিজ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ছাড়া অন্য কোথাও থেকে টেস্ট করালে চিকিৎসকরা রিপোর্ট দেখেন না। অথচ এখানে টেস্টের খরচ অনেক বেশি।
এই সড়কেই তট, শান্তি, শ্যামনগরসহ রয়েছে আরো অন্তত ৫টি ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি সেন্টার।
শ্যামনগর সদরে বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে- জননী, সেবা, মডার্ন, সুন্দরবন।
কোনো ক্লিনিকেই নেই ব্ল্যাড ব্যংক। চিকিৎসকরা জানান, প্রয়োজনে বাইরে থেকে রক্ত নিয়ে আসেন তারা।
তবু সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক এবং ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের পরামর্শেই অনেকে এসব ক্লিনিকের শরনাপন্ন হচ্ছেন বলে জানান রোগীরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৬ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৬
এমএন/জেডএম