ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

গচ্চা দিয়েও সনাতনি বিদ্যুতে অন্ধকারে হাতিয়া

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১৬
গচ্চা দিয়েও সনাতনি বিদ্যুতে অন্ধকারে হাতিয়া

হাতিয়া দ্বীপ থেকে: মাসে প্রায় ৩১ লাখ টাকা ভর্তুকি দিয়ে নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপে চলছে সনাতনি পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ‍ উৎপাদন। তারপরেও আলোকিত করা যায়নি পুরো হাতিয়াকে।

প্রায় পাঁচ হাজার বর্গকিলোমিটারের এই দ্বীপের সামান্য অংশ এ সুবিধা পাচ্ছে। বাকি পুরোটাই রয়ে গেছে অন্ধকারেই। আবার দিন দিন বিদ্যুৎভোগীদের সংখ্যাও কমছে।

এ উপজেলার পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে শুধু পৌর এলাকায়ই বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বেগ পেতে হয় পিডিবিকে।

নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ড থেকে পৃথক জনপদ হাতিয়ার মানুষেরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্যসহ সকল দিক দিয়েই বঞ্চিত৷ যার অন্যতম কারণ বিদ্যুৎ৷

স্বাধীনতা পূর্ব সময়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় জেনারেটরের মাধ্যমে যে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু ছিল, কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে সেই সনাতনি পদ্ধতিতেই এখনো বিদ্যুৎ উৎপাদন চলছে। যার পরিমাণ মাত্র ৮শ’ ৫০ কিলোওয়াট। অথচ পুরো হাতিয়ার চাহিদা প্রায় ১ হাজার ৫শ’ মেগাওয়াট।

জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে তৎকালীন সরকারের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ৬টি জেনারেটরের মাধ্যমে সীমিতভাবে বিদ্যুৎ চালু করে।

এখন দ্বীপ অঞ্চলের বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় থাকা এলাকায়ও দিনে-রাতে দুই দফায় মাত্র কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। বাকি পুরোটা সময় থাকে অন্ধকারে। পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ না পাওয়ায় পড়ালেখা, ব্যবসা-উৎপাদন ও দাফতরিক কাজে পিছিয়ে দ্বীপের বাসিন্দারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় অঙ্গীকারাবদ্ধ বর্তমান সরকার বিদ্যুৎখাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করলেও হাতিয়ার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এখনও পড়ে আছে মান্ধাতার আমলে।

নতুন করে ৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও প্রশাসনিক জটিলতায় এর কাজ থেমে আছে।

স্থানীয়রা জানান, এ দ্বীপ অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকায় এখানকার শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা, বিভিন্ন কারখানার উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রশাসনের দাফতরিক কাজগুলো চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে সনাতনি পদ্ধতিতে জেনারেটরের মাধ্যমে চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজেও পাওয়া গেছে চরম অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ৷

পৌর শহরের ব্যবসায়ী মঈনউদ্দিনের অভিযোগ, প্রতি বছর জেনারেটর মেরামতের নামে লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। নামমাত্র টেন্ডার দেখিয়ে এই টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন হাতিয়া বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর এর ভোগান্তি পোহাতে হয় হাতিয়ার সাধারণ গ্রাহকদের। বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও ভুতুড়ে বিল ও মিনিমাম চার্জ পরিশোধ করতে হয় সাধারণ গ্রাহকদের।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যে তেল বরাদ্দ দেয় সরকার, তা সরবরাহ করতে ঠিকাদাররা বড় ধরনের চুরি করেন। এতে জড়িত থাকেন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মচারীরাও৷

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাতিয়ার নলছিরা, আফাজিয়া, খাসের হাট, চৌমুহনী, শাকুরিয়া, বাংলা বাজার, বিবরবিরি সেন্টার বাজার, জাহাজমারা, রামচরণ বাজার, তমরউদ্দিন এলাকাগুলোও এক সময় বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় ছিল। তবে উৎপাদন স্বল্পতায় এসব এলাকায় এখন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে না। উপজেলার অন্য এলাকাগুলোতে আজও বিদ্যুতের খুঁটিও যায়নি।

হাতিয়া পিডিবি’র আবাসিক প্রকৌশলী গাজী গিয়াস উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের আটটি জেনারেটরের মধ্যে ছয়টি  বিকল হওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। সাধ্যমতো যা উৎপাদন হয়, তাই বন্টন করছি, এখানে অনিয়মের কিছু নেই৷

ভিআইপি লাইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সেটা কি? আমি তো ভিআইপি লাইন বুঝি না’!

হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন বলেন, জেনারেটরের মাধ্যমে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, তা চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল৷ সাবমেরিনের মাধ্যমে পানির নিচ দিয়ে যদি মুল গ্রিডের সঙ্গে হাতিয়াকে যোগ করা যায় তাহলে তাহলে সমস্যার সমাধান হবে৷  
সম্প্রতি এ বিষয়ক একটি প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাস হয়েছে বলেও তিনি জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১৬
জেপি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।