ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

উপকূল থেকে উপকূল

নিঝুম দ্বীপের কাঁকড়ার গন্তব্য ২৯ দেশ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৬
নিঝুম দ্বীপের কাঁকড়ার গন্তব্য ২৯ দেশ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নিঝুম দ্বীপ থেকে: অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের বাস মেঘনা ও বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত নিঝুম দ্বীপে। দ্বীপটি বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন।

তবে দ্বীপের কাঁকড়া মন কেড়েছে বিশ্বের ২৯টি দেশের, যা থেকে দেশ আয় করে প্রচুর রাজস্ব৷

দ্বীপের ৮০ শতাংশ বাসিন্দার পেশা মাছ ধরা। মাছের পাশাপাশি কাঁকড়া আহরণও তাদের জীবন ও জীবিকার উৎস৷ এখানকার কাঁকড়া আহরণকারীরা জানান, শুকনো মৌসুমে ভাটার সময় ঝাঁকে ঝাঁকে কাঁকড়া দেখা যায়। এ সময় বিভিন্ন উপায়ে কাঁকড়া ধরেন শিকারিরা। বেন্তি জাল, লেইত বড়শি, খুচইন জাল ও শিক দিয়ে মাটি খুঁড়ে কাঁকড়া ধরা হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ও কাঁকড়ার বেপারি কেফায়েত উল্লাহ জানান, নিঝুম দ্বীপ থেকে প্রতি সপ্তাহে দুই টন টন কাকঁডা পাওয়া যায়৷ যার মূল্য ১৫ লাখ টাকা৷ সেগুলো প্রথমে যায় ঢাকায়। এরপর সেখান থেকে প্যাকিং করে চীন, থাইল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের ২৯টি দেশে পাঠানো হয়৷

কাঁকড়া রফতানি করে এ অঞ্চল থেকে প্রতি বছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাবে বর্তমানে তা সম্ভব হচ্ছে না।

হাতিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পীযুষ প্রভাকর কান্তি বাংলানিউজকে জানান, নিঝুম দ্বীপের কাঁকড়া শিকারিরা নিজ উদ্যোগে প্রক্রিয়াজাতকরণ করেন৷ এক্ষেত্রে সরকারিভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা নেই। ফলে সরকার সম্ভাবনাময় এ খাতের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

তিনি জানান, কাঁকড়া পানির আবর্জনাভুক প্রাণী। খাদ্য হিসেবে এটি বেশ উপাদেয় ও পুষ্টিকর। এতে দশমিক ৭১ থেকে দশমিক ৭৪ শতাংশ পানি রয়েছে। খনিজ পদার্থ আছে ১৯ থেকে ২৪ শতাংশ। প্রজনন মৌসুমে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) কাঁকড়া শিকার বন্ধ করতে পারলে এর উৎপাদন বাড়বে।

নিঝুম দ্বীপের শতফুল গ্রামের কাঁকডা ব্যবসায়ী মিজান মেম্বার জানান, চীন, জাপান, হংকং, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে কাঁকড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এখানকার কাঁকড়া ঢাকা হয়ে মোট ২৯টি দেশে যায়৷

বন্দরটিলা এলাকার কাঁকডার ব্যবসায়ী মেহেরাজ জানান, এ দ্বীপে এ গ্রেডের পুরুষজাতীয় কাঁকড়া পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি। যার প্রতিটি শিকারির কাছ থেকে কেনা হয় ৬০/৭০ টাকায়৷ আর ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয় ৮০/৯০ টাকায়৷ তিনি জানান, ২৫০ গ্রাম ওজনের বেশি প্রতিটি মাদি কাঁকড়াকে এ গ্রেড, ২৫০ গ্রামের নিচে ১৫০ গ্রাম পর্যন্ত বি গ্রেড এবং ১৫০ গ্রামের নিচে সি গ্রেডের হিসেবে উল্লেখ করা হয় ৷

নামার বাজার এলাকার আড়তদার কেফায়েত উল্লাহ জানান, জেলেদের কাছ থেকে কাঁকড়া কিনে ঢাকায় বিক্রি করেন তারা। বর্তমানে তারা প্রতি কেজি এ গ্রেডের কাঁকড়া ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা, বি গ্রেডের কাঁকড়া ৯শ’ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন।

তবে শুধু এ গ্রেড ও বি গ্রেডের কাঁকড়া বিদেশে রফতানি হচ্ছে। আর সি গ্রেডের কাঁকড়া স্থানীয় বাজারে ২শ’ টাকা থেকে ৩শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

১০ বছরের শিশু রনি সারা বছরই কাঁকড়া ধরে।   স্কুলে যাওয়ার চেয়ে এটাকেই লাভজনক বলে মনে করে সে ও তার পরিবার।

নিঝুম দ্বীপের বিভিন্ন এলাকার কা‍ঁকড়া শিকারিরা জানান, এ দ্বীপে উন্নতমানের কাঁকড়া থাকা সত্ত্বেও প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাবে স্থানীয় আড়তদারদের কাছে নামমাত্র দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আড়তদারেরা তাদের কাছ থেকে ঢাকায় নিয়ে চড়া দামে বিক্রি করছেন। ফলে ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক জেলেরা।

সরকারিভাবে নিঝুম দ্বীপের কাঁকড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তারা।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।