ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

উপকূল থেকে উপকূল

‘জামা-কাপুড় চাই না, মোর আব্বারে চাই’

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৩ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১৬
‘জামা-কাপুড় চাই না, মোর আব্বারে চাই’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পাথরঘাটার উপকূল ঘুরে:  ‌‘বোঝা হইতে গোনে মোর আব্বারে দেহি নাই। মোর আব্বায় নাকি সিডরের সময় নিখোঁজ অইয়া গ্যাছে।

আর ফিরা আয় নায়। বাবার আদর পাই নাই। খাইতেও পাই না ঠিকমতো। মোর জামা-কাপুড় লাগবে না, মোর আব্বারে চাই। আমনেরা আইন্যা দেন’।

সরেজমিনে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরলাঠিমারা গ্রামে গিয়ে দেখা মেলে সাবিনা ইয়াসমিনের। ঘরের ভেতর থেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলছিল ১২ বছরের এই কিশোরী। প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় বয়স ছিল মাত্র ৪ বছর। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ভয়াল সিডরে নিখোঁজ হন বাবা জাকির হোসেন। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি তিনি।

পাথরঘাটার উপকূল ঘুরে দেখা গেছে সিডরে নিখোঁজ জেলেদের স্বজনদের আহাজারি। ৮ বছর পার হয়ে গেলেও এখনো পথের পানে চেয়ে আছেন তারা। কেউ বাবার জন্য, কেউ সন্তানের জন্য আবার কেউ স্বামীর জন্য।

সাবিনা ইয়াসমিন, হাসান, হামিদা ও রিতার মতো অসংখ্য সন্তান বাবার জন্য অপেক্ষা করছে আজও। সিডরের পর থেকেই প্রতি বছর ঈদ এলেই ওই সব সন্তানদের শুধু একটি কথা- ‘জামা-কাপুড় চাই না, আব্বারে চাই’।

একই গ্রামের মো. হাসান। তার বাবার নাম জাকির হাওলাদার। মা মর্জিনা বেগম জানান, হাসানকে এক বছর বয়সে রেখে বাবা সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। সিডরের পর তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, ‘বাপকে মনে রাখার মতো বয়স হাসানের হয়নি। তবে সেই সময় হাসানের যখন হাঁটার বয়সও হয়নি, তবু ছেলের দু’হাত ধরে উঠানে হাঁটি হাঁটি পা পা করে বাপ-ছেলে হাঁটতো’।

একই গ্রামের নুরুল ইসলামও সাগরে মাছ ধরার সময় সিডরে নিখোঁজ হন। তার সন্তান হামিদা ও রিতা। ওদের যথাক্রমে দুই ও চার বছর বয়সে বাবা নিখোঁজ হন। হামিদা বলে, ‘ঈদে ভালো জামা কাপুড় কিনতে পারি না। বাবায় থাকলে মোগো পছন্দের জামা ও আলতা-চুড়ি কিন্যা আনতে পারতাম। আর না অইলেও বাবার আত (হাত) ধইরা বাজারে তো যাইতে পারতাম’।

শিশুদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংকল্প ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ বলেন, পিতৃহারা শিশুরা যেমন সামাজিকভাবে হেয় হচ্ছে, তেমনি তাদের মেধা বিকাশেও অনেক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। পিতৃহারা হওয়ার কারণে তাদের ঈদের আনন্দও ম্লান হয়ে গেছে। এখানেও শিশুদের মেধার ওপরে চাপ পড়ে।

সিডরের পর থেকেই উপকূলের প্রান্তিক জনপদের মানুষের ঈদ কাটে আনন্দের বদলে চোখের পানিতে। স্বজনেরা জানেন না, ওইসব জেলেরা বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন। আদৌ কি তাদের কাছে ফিরে আসবেন?’

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০১৬
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।