ইনানী থেকে ফিরে: দীর্ঘদিন ধরেই বন ও বন্যপ্রাণি সংরক্ষণে কাজ এবং গবেষণা করছেন শাহরিয়ার সিজার রহমান। বাংলাদেশের সরীসৃপ ও উভচর প্রাণী নিয়েও বিস্তর গবেষণা করেছেন তিনি।
সম্প্রতি কক্সবাজারের ইনানীতে বন, বন্যপ্রাণি, পরিবেশ প্রভৃতি নিয়ে কথা হয় সিজার রহমানের সঙ্গে। বাংলানিউজের পক্ষে কথোপকথনে অংশ নেন বাংলানিউজের নিউজরুম এডিটর শুভ্রনীল সাগর।
বাংলানিউজ: বাংলাদেশের যে শিক্ষাব্যবস্থা, সেটি চাকরিমুখী। আপনি গবেষণামুখী হলেন কীভাবে?
শাহরিয়ার সিজার রহমান: ছোটবেলা থেকেই আমি কখনও ভালো ছাত্র ছিলাম না। নতুন কিছু শিখতে সবসময় কৌতূহলী ছিলাম। ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির প্রতি আমার প্রচণ্ড ভালোবাসা ছিলো। তখন থেকেই আমার আগ্রহের জায়গা জুড়ে ছিলো পশুপাখি। এমন নয় যে, ছোট থেকেই ঠিক করেছিলাম গবেষক হবো। আমার ক্ষেত্রে যেটি সুবিধা হয়েছে, আমি ২০০৪ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেছি। বাংলাদেশের যে শিক্ষাব্যবস্থা সেটি একটি শিশুর ইচ্ছাকে শুরুতেই মেরে ফেলে। আমি সৌভাগ্যবান, আমার ক্ষেত্রে সেটি ঘটেনি। আমি সবসময় আমার প্যাশনকে অনুসরণ করে গিয়েছি। আর শেখার জন্য ক্লাসরুমে বসে থাকার দরকার নেই। শেখার সুযোগ আমাদের চারপাশেই রয়েছে। আমি যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে প্রচুর স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করতাম। পরিবেশ ও বন্যপ্রাণির উপর বড় বড় বিজ্ঞানীদের কাছে লিখতাম, তাদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে অংশ নিতাম, বিভিন্ন প্রজেক্টে যেতাম, ভ্রমণ করতাম। ওখান থেকেই গবেষণার কাজটি শিখে যাই। স্বেচ্ছাসেবী কাজের সুবিধা হচ্ছে, আপনি নিজের সম্পর্কে জানতে পারবেন- কোনটাতে আমি ভালো, কোনটাতে আমি খারাপ। আর ক্লাসরুমের বাইরে থেকে না শিখলে আপনি শিখবেন না। যেটা আমি অনেক আগে থেকেই শুরু করি। কারণ, আসল কাজটা সেখানেই।
বাংলানিউজ: ২০১১ সালে দেশে এসে কী করলেন?
শাহরিয়ার সিজার রহমান: আমি কিছু ফান্ড জোগাড় করে বাংলাদেশ পাইথন প্রজেক্ট শুরু করি। ওটা ছিলো পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই প্রথম অজগরের উপর টেলিমেট্রি প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষণা। এতে ছোট একটি ট্রান্সমিটার অজগরের শরীরে স্থাপন করা হয়। ওটার সাহায্যে ওকে অনুসরণ করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ওর পরিবেশ-প্রতিবেশ, কী খাচ্ছে, কতোটুকু জায়গাজুড়ে থাকছে- এসব তথ্য নিয়ে সংরক্ষণের কাজে লাগানো হয়। এরপর পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজ শুরু করি। পাশাপাশি অজগরের উপর কাজ এখনও চলছে।
বাংলানিউজ: এখন কাজটি কী অবস্থার মধ্যে রয়েছে?
শাহরিয়ার সিজার রহমান: ২০১১ সালে যখন প্রথম শুরু করি তখন আমি প্রচুর সময় দিতাম, এখনও দিই। বলা যায়, ওটা এখন শিশু থেকে কিশোরে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট লোকজন রয়েছে। তারা কাজগুলো এগিয়ে নিচ্ছেন।
বাংলানিউজ: কোন অঞ্চলজুড়ে গবেষণা চলছে?
শাহরিয়ার সিজার রহমান: আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মৌলভীবাজারের বনাঞ্চলকে প্রাধান্য দিচ্ছি। বিশেষ করে লাউয়াছড়া বনে যেসব বিরল প্রজাতির প্রাণি রয়েছে তাদের উপর গবেষণা ও সংরক্ষণে যা যা করা দরকার সেগুলো নিয়ে কাজ করি। সেইসঙ্গে মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা তৈরি করা যায়। যেমন আমাদের যারা ইন্টার্ন গবেষক ও স্বেচ্ছাসেবকরা রয়েছেন, তাদের নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজ করা আসলে খুব কঠিন। ওরকম গহীন বনে আমি বাইরের কোনো শিক্ষার্থীকে নিয়ে যেতে পারবো না। সেদিক দিয়ে লাউয়াছড়ায় সবাই যেতে পারে। এখানে অজগর, কচ্ছপ, বনরুই নিয়ে গবেষণা চলছে।
বাংলানিউজ: ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স (সিসিএ) কবে প্রতিষ্ঠা হয়?
শাহরিয়ার সিজার রহমান: সিসিএ ২০১৬ সালেই প্রতিষ্ঠা হয়। এতে বোর্ড মেম্বার রয়েছেন ১১ জন। এছাড়া ঢাকাকেন্দ্রিক চার-পাঁচজন এবং মাঠপর্যায়ে ১০ জন কাজ করছেন।
বাংলানিউজ: সিসিএ প্রতিষ্ঠার পেছনের গল্পটা কী?
শাহরিয়ার সিজার রহমান: আমি লাউয়াছড়ায় কাজ শুরু করি ‘কারিনাম’ নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায়। একটা পর্যায়ের একটি অর্গানাইজেশন প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এতোদিন কাজ করতাম স্বাধীনভাবেই। কিন্তু আরও একটু বড় আকারে যখন কাজ করবো তখন ফান্ড ও সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ব্যাপার রয়েছে। তখন আপনার একটা লিগ্যাল এনটিটি দরকার। দশজনে যখন মিলে কাজ করি তখন একটি পরিচয় দরকারি হয়ে পড়ে। সেখান থেকেই সিসিএ প্রতিষ্ঠা। আমরা গত মার্চ মাসে অফিসিয়ালি রেজিস্ট্রেশন করেছি।
সাক্ষাৎকারের বাকি অংশ পড়তে ক্লিক করুন-
* দেয়ার ইজ নো ফাইনাল ভিক্টরি ইন কনজারভেশন
* প্রত্যেকে বন ও বন্যপ্রাণি সংরক্ষণে এগিয়ে আসতে পারেন
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৬
এসএনএস/আরআই
** সবে শুরু, লক্ষ্য বহুদূর
** হস্তশিল্পে ভবিষ্যৎ দেখছে ম্রো জনগোষ্ঠী
** প্রজন্মের মধ্যে হস্তশিল্পকে টিকিয়ে রাখা জরুরি
** ঐতিহ্য ও আধুনিকতা বিনিময়ের কর্মশালা
** কক্সবাজারে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের নিয়ে কর্মশালা