ঢাকা: রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভাগী শহরের বায়ু ‘দূষণরোধ প্রকল্প’ বাস্তবায়নে গড়িমসির চিত্র দেখা গেছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে বায়ু দূষণ বাংলাদেশের নগরাঞ্চলের জনগণের স্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় সমস্যা।
যে কোনো দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ সব বিষয় সামনে রেখেই সাত বছর আগে শুরু হয় উদ্যোগ। যা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।
বায়ু দূষণ রোধের লক্ষ্যে নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ উন্নয়নের উদ্যোগ শুরু হয় ২০০৯ সালে। ৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী ও খুলনায় বায়ু দূষণ রোধের কার্যক্রম শুরু হয়।
বায়ুর মান উন্নয়ন ও ইটভাটা ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে যানজট নিরসন, বাসরুট নেটওয়ার্ক যুক্তিযুক্তকরণ, পরিবহন খাতের দক্ষতা উন্নয়ন করা অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু বাড়তি জনসংখ্যার কারণে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি বলে জানায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্র থেকে জানা গেছে, শহরাঞ্চলে বায়ু দূষণরোধের প্রাথমিক উদ্যোগ ২০১৪ সালে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। দ্বিতীয় ধাপে আবারও সময় অপরিবর্তিত রেখে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮ কোটি। এর পরে তৃতয়ী ধাপে জুলাই ২০০৯ থেকে জুন ২০১৬ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়, ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ কোটি। চতুর্থ ধাপে ৮০ কোটি টাকা ব্যয় এবং জুন ২০১৯ সাল নাগাদ সময় বাড়ানো আবেদন করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ৩৫ মিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে। অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে প্রকল্পের নতুন কিছু কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ফলে আবারও ব্যয় ও সময় বাড়াতে হবে প্রকল্পের। বৈদেশিক পরামর্শকের ইনকাম ট্যাক্স ১০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এ কারণেই প্রকল্পের আওতায় নতুন ইনকাম ট্যাক্স যোগ করে প্রকল্পটি সংশোধন করা হবে।
জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও পরামর্শক সেবার ব্যয়ও বেড়েছে। যে কারণে পুরো প্রকল্পের সময় ও ব্যয় আবারও বাড়াতে হবে। মূলত পরিকল্পনার অভাবেই বার বার বাড়ছে প্রকল্পের সময় ও ব্যয়।
মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, সঠিক সময়ে বায়ু সেল গঠন, বায়ুমান পরিবীক্ষণ-বিশ্লেষণ, ইট ভাটার নির্গমন ব্যবস্থা এবং আধুনিক প্রযুক্তির ইটভাটাও প্রবর্তন করা হয়নি। এমনকি প্রকল্পের ডিপিপি ( উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) অনুযায়ী ফুটওভার ব্রিজ, ট্রাফিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা, ইন্টারসেকশন উন্নয়ন এবং সার্বক্ষণিক বায়ুমান পরিবীক্ষণের জন্য যন্ত্রপাতি কেনা হলেও বাস্তবে প্রয়োগ অধরাই রয়ে গেছে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, নানা কারণে প্রকল্পের কাজ একটু ধীরগতি হয়েছে। শহরের বায়ু নিরাপদ করতে প্রকল্পটির কাজ চলমান আছে। ডিপিপি’তে নতুন কিছু কাজ অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। যে কারণে প্রকল্পের সময় ও ব্যয় আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক নতুন করে আরও ৩৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিতে চেয়েছে। এটা হাতে পেলেই নতুন করে কিছু কাজ শুরু হবে। শহরের জনবল বাড়ছে, বাড়ছে দূষণও। তারপরও আমরা শহরের বায়ু দূষণে কাজ করছি। আমার বিশ্বাস আস্তে আস্তে শহরের বায়ু দূষণ রোধে সক্ষম হবো। এটা একটি সমন্বিত কাজ। যে কাজগুলো বাস্তবে রুপ দিতে আরও কিছু সময় ও অর্থ প্রয়োজন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বায়ু দূষণের ফলে শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন রোগব্যাধী ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিশেষ করে শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সামগ্রিক উৎপাদনশীলতাসহ অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বায়ু দূষণের হার শতকরা ২০ থেকে ৮০ শতাংশ হ্রাস করে বছরে সাড়ে ৩ হাজার লোকের জীবন বাঁচানো সম্ভব। ৮০ থেকে ২৩০ মিলিয়ন জনগণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা মহানগরসহ দেশের অন্যান্য বড় শহরগুলোতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান বেড়েই চলেছে। প্রকল্পটি সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে এর সুফল বঞ্চিত হচ্ছেন নগরবাসী।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৬
এমআইএস/এসএইচ