ঢাকা: প্রয়োজনীয় সমর্থন পেয়ে যাওয়ায় প্যারিস জলবায়ু চুক্তি কার্যকর হচ্ছে আগামী ৪ নভেম্বর থেকে। চুক্তিটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ছিল ন্যূনতম ৫৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণকারী দেশের সমর্থন।
বুধবার (০২ নভেম্বর) দুপুরে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে আসন্ন জলবায়ু সম্মেলন কপ-২২ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।
কনফারেন্স অব দি পার্টিস বা কপ-২২ সম্মেলনে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ২১তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের চুক্তি বাস্তবায়নে ঐক্যমতের আশা করছে স্বল্পোন্নত দেশগুলো। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্যারিস চুক্তির বিষয়বস্তু তুলে ধরেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, গত বছর প্যারিসে অনুষ্ঠিত ২১তম বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের প্যারিস চুক্তিতে বাংলাদেশ গত ২২ এপ্রিল স্বাক্ষর করে এবং ২১ সেপ্টেম্বর তা রেক্টিফাই করেছে। প্যারিস চুক্তিতে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি (শিল্পবিপ্লব পূর্ব সময়ের তুলনায়) ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার জন্য প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ পর্যন্ত (২৪ অক্টোবর) ১৯১টি দেশ ওই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ মোট ৮৪টি সদস্য দেশ (যা মোটি বৈশ্বিক কার্বন নিসঃরণের ৬০ দশমিক ৯৮ প্রতিনিধিত্ব করে) অনুসমর্থন করেছে। প্যারিস চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার জন্য পৃথিবীর গ্রিনহাউজ গ্যাসের অন্তত ৫৫ শতাংশ নির্গমণ করে এমন অন্তত ৫৫টি দেশকে অনুসমর্থন গ্রহণ বা অনুমোদনের শর্ত গত ৫ অক্টোবর পূর্ণ হয়েছে। ফলে কপ-২২ সম্মেলনের আগেই চুক্তিটি কার্যকর হচ্ছে।
সচিব বলেন, প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দেশগুলো প্রতি বছর ১০০ মিলিয়ন ডলার দেবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য। ইতোমধ্যে ২০১৫-২০২০ সাল পর্যন্ত ১০ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। এই ক্ষতিপূরণ থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলো ১ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলারে ২৭টি প্রকল্প নিয়েছে। যার একটি প্রকল্প বাংলাদেশ গ্রহণ করেছে বলে জানান সচিব। গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের এই টাকায় বাংলাদেশ ৮০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের টাকা খরচ করার মতো সক্ষমতা বা আমাদের অ্যাকাউন্ট সিস্টেম উন্নত নয় বলে মন্তব্য করে সচিব বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ওদের অর্থ প্রাপ্তির শর্তগুলো শিথিলতার পাশাপাশি আমাদের অ্যাকাউন্টে সিস্টেমের মান আরও উন্নত করতে। এটি হলে অর্থপ্রাপ্তি সহজ হবে। শুধু প্রকল্প নিলেই হবে না, আমরা টাকাটা কোন উদ্দেশ্যে খরচ করবো তা নিশ্চিত করতে হয়।
আগামী ৭-১৮ নভেম্বরে মরক্কোর মারাকাস শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২২। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেন পরিবেশ মন্ত্রী। একই সঙ্গে পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী, সচিবসহ একটি প্রতিনিধি দল এ সম্মেলনে অংশ নেবে।
এবারই সবচেয়ে কম খরচে এবং ছোট দল সম্মেলনে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন পরিবেশ মন্ত্রী।
প্রথমে ব্যস্ততার কারণে সম্মেলনে যেতে চাননি প্রধানমন্ত্রী, পরে পরিবেশের কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন। এটা আমাদের আশার কথা- যোগ করেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুস আলীসহ মন্ত্রণালয়ের ঊধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৬/আপডেট: ১৮৪০ ঘণ্টা
এসএম/এমজেএফ/