'কোয়াক' 'কোয়াক'! কিছুক্ষণ পর পরই এই ধ্বনি নির্জনতার মাঝে বারবারই একমাত্র তাজা-শব্দ হয়ে মুখরিত করে তুলেছে চারপাশ। এ ডাকটিকে যে একটি বিশেষ প্রজাতির ব্যাঙের সেটা বুঝে উঠতেই কিছুটা সময়ে লেগে যায়।
লাউয়াছড়া জাতীয় বনের স্থায়ী বাসিন্দা লাল-চোখ ব্যাঙ। ইংরেজি নাম Smith’s Litter Frog বা Red-eyed Frog। আর বৈজ্ঞানিক নাম Leptobrachium smithi। চোখের পাতা উপর লাল অংশ রয়েছে বলে এমন নামকরণ।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং সরীসৃপ ও উভচর প্রাণী গবেষক অনিমেষ ঘোষ অয়ন বাংলানিউজকে বলেন, এই ব্যাঙ মূলত পাহাড়ি এলাকায় পাওয়া যায়। বিশেষ করে সিলেট, মৌলভীবাজারসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলোতে। এছাড়াও কম্বোডিয়া, মায়ানমার, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে তাদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
‘সাব-ট্রপিকাল ও ট্রপিকাল বনের পাতার লেয়ার বা ঝোপের মাঝে অথবা গাছের কাণ্ডে এবং গর্তে এরা বসবাস করে থাকে। মূলত পাহাড়িছড়ার আশেপাশে একটু আর্দ্র পরিবেশে এরা থাকতে খুব পছন্দ করে। ’
প্রজনন মৌসুম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্রিডিং সময়ে অর্থাৎ মে-জুন মাসে পুরুষ ব্যাঙ মেয়ে ব্যাঙটির মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য ক্রমাগত ডাকতে থাকে। লাউয়াছড়া বনে আমরা যখন গবেষণা কাজের জন্য ঢুকতাম সন্ধ্যা হলেই এদের ডাক শুনতে পেতাম। মূলত সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ঘণ্টা তিনেক এদের ডাক শোনা যেত। লাউয়াছড়া বনে যেসব স্থানে ছড়া বা পাহাড়িগাছ এবং সেই গাছের নিচে প্রচুর পাতার লেয়ার থাকে সে সক স্থানে আমরা এই ব্যাঙকে বেশি পেতাম।
অবাক করার বিষয় হলো, যে সব স্থানে আকাশি বা মেহগনি গাছের বনায়ন করা আছে, সেখানে এই ব্যাঙকে আমরা খুব একটা দেখিনি।
এ সরীসৃপ ও উভচর গবেষক বলেন, আমাদের গবেষণায় আমরা দেখছি, লাল-চোখ ব্যাঙ খোলামেলা পরিবেশ খুব একটা পছন্দ করে না। মিশ্র বনায়ন এবং প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বনের যে অংশ আছে লাউয়াছড়ায় সেগুলোতে এ প্রজাতিটি খুব বেশি দেখা যায়। বিশেষত, যে সব জায়গায় গাছের সংখ্যা বেশি এবং বনের মাটিতে 'লিফ লিটার' বা পাতার পুরুত্ব অধিক সেসব স্থান তাদের বেশি পছন্দ।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এ প্রজাতিটিকে তালিকাভুক্ত করে এর প্রতি শঙ্কা প্রকাশ করেছে। যেভাবে আমাদের প্রাকৃতিক বন ও পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে তাতে অন্য প্রজাতির মতোই লাল-চোখ ব্যাঙও হুমকির মুখে। জানান এই গবেষক।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৭
বিবিবি/এএ