ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

এক্সক্লুসিভ: হাওরের বুকে বছরের শেষ সূর্যাস্ত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭
এক্সক্লুসিভ: হাওরের বুকে বছরের শেষ সূর্যাস্ত বাংলানিউজের জন্য কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল থেকে বছরের শেষ সূর্যাস্তের ছবিটি ধারণ করেছেন সেখানকার সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মেদ তৌফিক

কিশোরগঞ্জ থেকে: শীতের শান্ত-সমাহিত নিস্তরঙ্গ জলে নেই কোনও ঢেউ। অতলান্ত হাওরের আদিঅন্তহীন জলরাশিও মনে হয় নিথর হয়ে আছে বিদায়ের বেদনায়। আলোকিত ঝকঝকে দিন শেষে বছরের শেষ সূর্য অস্ত যাচ্ছে জলের অতলে। চরাচরে অন্ধকার ঘনিয়ে মহাকালের গহীনে হারাচ্ছে একটি পূর্ণ বছর। বিদায় ২০১৭।   

বাংলানিউজের জন্য কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল থেকে বছরের শেষ সূর্যাস্তের ছবিটি ধারণ করেছেন সেখানকার সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মেদ তৌফিক। তার পাশে থেকে দেখছি, ছায়া ঘনিয়ে আসা চারদিক।

টের পাচ্ছি, প্রদোষের পরেই শীতের একটি অনন্ত রাত সামনেই অপেক্ষমাণ। বছরের শেষ রাতের শেষেই প্রকাশিত হবে আরেকটি নতুন ভোর। মহাকালের অনন্ত যাত্রাপথে এসে যুক্ত হবে নতুন বছর ২০১৮ সাল।

আমাদের চোখের সামনে দিয়ে হাওরের জল ছলছল বুকে যখন সূর্য অস্তমিত হচ্ছে, তখন বাংলাদেশ ও বিশ্বের নানা স্থানে বিদায়ের বিষণ্ন সানাই বাজিয়ে চলে যাচ্ছে একটি বছর। বাংলাদেশ ও বিশ্বের ইতিহাসে বর্তমান থেকে অতীত হয়ে যাচ্ছে ২০১৭ সাল নামের একটি বর্ষপঞ্জি। হাসি, কান্না, আনন্দ, বেদনায় যে বছরটি ছিল আমাদের নিত্যসঙ্গী, সে বছরটিকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। কালান্তরের গহ্বরে স্থান পাবে বছরটি। ক্যালেন্ডারের শরীর থেকে মুছে যাবে চিরতরে। মহাকালের অতলস্পর্শী গভীরে থেকে যাবে অধরা চিহ্ন হয়ে। চলে যাওয়া বছরটির কিছু স্মৃতি, কিছু ঝাপসা ছবি, কিছু আবেগ ও উচ্ছ্বাস রয়ে যাবে আমাদের চৈতন্যের মর্মমূলে।

পাওয়া আর না-পাওয়ার মাঝ দিয়ে দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। জীবন এভাবেই নিরন্তর গড়িয়ে যায় উৎস থেকে উপসংহারে। নানা অর্জনে জীবন যেমন রঙিন আর আলোকিত হয়, তেমনি বহু বিসর্জনে ম্লানও হয়। এইসব নিয়েই চির বহমান আমাদের জীবনচক্র। ব্যক্তি থেকে ব্যাষ্টিতে প্রবহমান জীবনের এই ধারাই প্রকৃতির অমোঘ বিধান।

২০১৭ সাল ছেড়ে ২০১৮ সালে উত্তরণের ক্রান্তিকালে আমরা আমাদের জীবনের হিসেবের খাতাটিকেও মেলে ধরবো। আমাদের প্রাপ্তিগুলোকে সযতনে লালন করবো। অপ্রাপ্তিগুলোকে ভরিয়ে দিতে চাইবো সম্ভাবনায়। অনাগতকালের স্বপ্ন ও রোমাঞ্চে মানুষ সুপ্রাচীন এই ধরিত্রীর সর্বংসহা বক্ষে এঁকে দেবে নিজস্ব পদচিহ্ন। ‘ফাঁসির মঞ্চ থেকে’ কাব্যগ্রন্থের কবি জুলিয়াস ফুচিক যেভাবে বলেছেন, সেভাবেই আমরাও উচ্চারণ করবো, ‘জীবনকে ভালোবাসে বলেই মানুষ জীবনের সৌন্দর্যের জন্য যুদ্ধ করে। ’ সুন্দর জীবন ও সুস্থ সমাজের জন্য মানুষের চলমান প্রচেষ্টা এভাবেই বছরান্তের বাঁকে বাঁকে অর্জনের ডালি সাজিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলতেই থাকবে।

২০১৭ সালে আমরা যেমন হারিয়েছি অনেক কিছু, অনেক প্রিয়মুখ, অনেক স্বপ্ন ও সাধ; তেমনি পেয়েছিও বহু কিছু। রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেছেন, ‘জীবনের ধন কিছুই যায় না ফেলা’, আমরাও আমাদের জীবনের পথে-প্রান্তরে পাওয়া মহার্ঘ্য অভিজ্ঞতাকে বুকে ধারণ করে আরও শাণিত ও শুদ্ধ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। ‘চরৈবেতী’ মানেই তো চলতে থাকা, সামনে এগিয়ে যাওয়া। গতির এই কথাটি আমরা যেন কখনোই ভুলে না যাই। অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হতে হতে আমরাও এগিয়ে যেতে থাকবো জীবনের পরিপূর্ণ সাফল্যের মোহন উপকূলে।

বাংলাদেশের কেন্দ্র ও প্রান্তে, শহর ও গ্রামে, নারী ও পুরুষের সমাবেশে, কর্মী ও উদ্যোগীর প্রচেষ্টায় যে স্বপ্ন আর  আকাঙ্ক্ষা ২০১৭ সালে পূর্ণতা পায়নি, ২০১৮ সালে তাকে দিতে হবে সফলতার স্পর্শ। ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত পদক্ষেপে বাংলাদেশ নামক এই সুজলা-সুফলা-সবুজ-শ্যামলিম ভূগোলকে আরও সুন্দর, আরও বাসযোগ্য, আরও প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব, আরও শান্তিপূর্ণ, আরও নিরাপদ, আরও সমৃদ্ধ করার জন্য আমাদেরকেই কাজ করতে হবে। আমাদেরকেই গড়তে হবে আমাদের সুন্দর জীবন: ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পর্যায়ে।

২০১৭ সালের অভিজ্ঞতায় সমাগত ২০১৮ সালে আমাদেরই শ্রমে-ঘামে-মেধায় নির্মিত দেশ ও মানুষের উজ্জ্বলতম প্রতিচ্ছবিতে বিশ্বের মানচিত্রে আলোকের ঝরনাধারা বইয়ে দিতে হবে। যেন বাংলাদেশ নামটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে গর্ব ও আনন্দে বিমোহিত হয় বিশ্বের কোটি কোটি বাংলাভাষী মানুষ। একবিংশ শতাব্দীর এক অগ্রণী দেশ হয়ে বাংলাদেশ অতীতের সকল বিসর্জন, কালো দাগ, অজ্ঞতা, কুসংস্কার, হীনমন্যতা, বিরোধিতা, পশ্চাৎপদতাকে অতিক্রম করে দৃপ্ত পদভারে এগিয়ে যাবেই। সমৃদ্ধ দেশ ও জাতি গঠনের মহাযাত্রাপথে বাংলাদেশ ছুঁয়ে যেতে থাকবে আরও অনেক সফলতা ও অর্জনের স্বোপার্জিত গগনভেদী-মাইলফলক।

নতুন বছরের প্রথম ভোরের পবিত্রতম আলোর আবহে জীর্ণ পুরাতনকে ফেলে চির নতুনের সবুজ স্বপ্ন ও সম্ভাবনায় সঞ্জীবিত হোক বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ। ইতিবাচকতার প্রত্যয় ও প্রতীতিতে জেগে উঠুক সবাই সমগ্র শক্তিতে। বাংলাদেশের অর্জনের মুকুটে যুক্ত হতে থাকুক আরও অনেক স্বর্ণালী পালক। অভ্রভেদী সাফল্যের দ্যোতনায় ভেসে যাক টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া, পদ্মা-মেঘনা-যমুনার বাংলাদেশ। বুক-ভরা স্বপ্নে ও সঙ্কল্পে উজ্জ্বলতর হোক বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মা, মাটি, মানুষ।

দুঃখ বা বেদনার কথামালায় নয়, আশাবাদের প্রহরে প্রহরে, সাহসী পঙ্‌ক্তিতে পঙ্‌ক্তিতে উচ্চারিত হোক, বিদায় ২০১৭, স্বাগতম ২০১৮।
শুভ নববর্ষ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭
এমপি /জেএম 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।